|
|
|
|
তারকনাথের পথেই বৈদ্যনাথ |
শ্রাবণী মেলায় নিষিদ্ধ হচ্ছে গর্ভগৃহে প্রবেশ, চালু হচ্ছে অর্ঘ্য সিস্টেম
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
দু’জায়গাতেই আরাধ্য দেবতা দেবাদিদেব মহাদেব। দু’জায়গাতেই শ্রাবণ মাসে তাঁর পুজো ঘিরে চলে উৎসব। কিন্তু এতদিন দু’জায়গায় পুজোর ধরন-ধারণ ছিল আলাদা। সুরক্ষার কারণে এক জায়গায় মন্দিরের বাইরে থেকে বিগ্রহে জল দেওয়ার উপায় রয়েছে। আর এক জায়গায় পদপিষ্ট হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই এতদিন সরাসরি বিগ্রহের মাথায় জল ঢালা হত। এ বার সেই ফারাকটাও মুছে যেতে চলেছে। ভিড়ের কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে এ বার তারকেশ্বরের পথেই হাঁটতে চলেছে দেওঘরের বৈদ্যনাথ ধাম।
শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বরে হয় শ্রাবণী মেলা। একই সময়ে দেওঘরের বৈদ্যনাথ ধামেও বসে শ্রাবণী মেলা। দু’জায়গাতেই দূর দূরান্ত থেকে অগণিত পূণ্যার্থী আসেন শিবলিঙ্গে জল দিতে। তবে সেই সব পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে তারকেশ্বর এখন অনেকটাই নিরাপদ। ততটা নয় বৈদ্যনাথ ধাম।
দুর্ঘটনা এড়াতে তারকেশ্বরে, শ্রাবণী মেলার সময় পূণ্যার্থীদের মূল মন্দিরের ভিতরে, গর্ভগৃহে যেতে দেওয়া হয় না। তার বদলে মন্দিরের বাইরেই এমন ব্যবস্থা করা হয় যাতে পূণ্যার্থীর ঢালা জল সরাসরি শিবলিঙ্গের মাথায় গিয়ে পড়ে। কী সেই ব্যবস্থা? তারকেশ্বর মন্দিরের মহান্ত মহারাজ, দণ্ডী স্বামী সুরেশ্বর আশ্রমের কথায়, ‘‘গর্ভগৃহের বাইরে তামার ডোঙা থাকে। সেই ডোঙায় ভক্তরা জল ঢেলে দেন। সেই ডোঙার মধ্যে দিয়েই জল গিয়ে গর্ভগৃহে শিবলিঙ্গের উপরে পড়ে।” |
শ্রাবণী মেলায় বাবা ধামে ভক্ত সমাগম। —নিজস্ব চিত্র |
বৈদ্যনাথ ধাম বা বাবা ধামে এক চিলতে গর্ভগৃহের ভিতরে শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢালতে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে পূণ্যার্থীদের চিঁড়েচ্যাপ্টা অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। কারণ সেখানে গর্ভগৃহের ভিতরে যাতায়াতের জন্য একটি মাত্র দরজা রয়েছে বলেই জানিয়েছেন দেওঘর জেলার ডেপুটি কমিশনার তথা বৈদ্যনাথ মন্দির ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের সচিব রাহুল পারওয়ার। ইলাহাবাদের মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে ছত্রিশ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে গত ফেব্রুয়ারি মাসেই। গত বছর দেওঘরেরই এক আশ্রমে ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন ন’জন। কয়েক বছর আগে বাবা ধামেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফলে এ বার শ্রাবণী মেলা নিয়ে আগাম সতর্কতা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ বার তারকেশ্বরের মতোই শ্রাবণী মেলার সময় আর বাবা ধাম মন্দিরের গর্ভগৃহে কাউকেই প্রবেশ করতে দেবেন না মন্দির কর্তৃপক্ষ। তার বদলে বাইরে থেকে জল ঢালার ব্যবস্থা হচ্ছে। ডেপুটি কমিশনার জানান, যে ব্যবস্থা করা হচ্ছে সেটির নাম ‘অর্ঘ্য সিস্টেম’। মন্দিরের বাইরে একটি বড় পাত্র থাকবে। সেখানে জল ঢাললে সেই জল পাইপের মাধ্যমে সোজা গিয়ে গর্ভগৃহে, শিবলিঙ্গের মাথায় পড়বে। ভক্তরা তা দেখতেও পাবেন।
তারকনাথ মন্দিরের ব্যবস্থা দেখতে দু’-তিন বছর আগে বৈদ্যনাথ ধামের লোকজন সেখানে গিয়েছিলেন বলে জানান তারকেশ্বরের মহন্ত। দেওঘরের ডেপুটি কমিশনারও তা স্বীকার করেছেন। বাবা ধাম মন্দির কর্তৃপক্ষের এক সূত্রের বক্তব্য, শ্রাবণী মেলার সময় দেওঘরে প্রতিদিন অন্তত দেড় লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়। যার সিংহভাগ ভিড়ই জমে মন্দিরের ভিতরে। ঝাড়খণ্ড তো বটেই পশ্চিমবঙ্গ, বিহার কিংবা উত্তর প্রদেশের মতো বিভিন্ন রাজ্য থেকে ওই সময় বাবা ধামে মানুষ আসেন শিবলিঙ্গে জল ঢালতে। সেই ভিড় সামলাতে এ বার জল দেওয়ার জন্য সময়ও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।
ডেপুটি কমিশনারের কথায়, “ভিড় সামলাতে এ বার থেকে বারকোড যুক্ত বিশেষ পাসের ব্যবস্থা করা হবে। যা দেওঘরেই মেলা কমিটির বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে বিলি করা হবে। যিনি জল ঢালতে আসবেন তিনি ওই পাসে লেখা নির্দিষ্ট সময়ে মন্দিরে চলে এলেই জল ঢালার সুযোগ পাবেন। তাঁকে বেশিক্ষণ লাইনেও দাঁড়াতে হবে না।” |
|
|
|
|
|