শিলচরে নৃশংস খুনের কিনারা তিন দিনেই
শিলচর শ্মশানের চিতায় দাউদাউ করে জ্বলছিল জয়ন্ত সাহার খণ্ড-বিখণ্ডিত দেহাংশগুলি। সেই সময় পুলিশ জেরা করছিল আদালতের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নাজির হোসেন লস্করকে। প্রথমে ডাহা মিথ্যে কথা, জয়ন্তকে সে চেনেই না। আধঘণ্টা আর কোনও কথা নেই। পুলিশ নানা প্রমাণ তুলে ধরে বলে, তাদের মধ্যে লেনদেন ছিল। শেষে দীর্ঘশ্বাস, “ও আমাকে ভীষণ যন্ত্রণা দিয়েছে।”
কী যন্ত্রণা? নাজির বলতে শুরু করে, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বেতনে সংসার চলে না। টানাটানি লেগেই থাকে। জয়ন্তই তখন ভরসার জায়গা। চাইলেই টাকা পাওয়া যায়। শুধু সুদটা চড়া, মাসে ১০ শতাংশ। প্রায় সব মাসেই ধার নিতে হয় তাকে। কোনও মাসে সুদ ফিরিয়ে দেয়। কখনও তা-ও পারে না। এ ভাবে টাকার অঙ্ক বাড়তে থাকে। তবু তা কোনও মতেই এক লক্ষ টাকার বেশি নয়। কিন্তু জয়ন্তর দাবি, সুদ ও আসলে তার পাওনা পাঁচ লক্ষ টাকার ওপর। প্রতিদিন ফোন করত, নানা কটুকথা শোনাত, হুমকিও দিত। ৮ মার্চও ফোন করে দেখা করতে বলে।

নৃশংস খুনের দায়ে ধৃত নাজির। শুক্রবার শিলচরে। ছবি: স্বপন রায়
প্রেমতলায় দেখা হয় দুজনের। সেখান থেকে যায় মধুরবন্দে। তার ভাড়াঘরে। নাজিরের মূল বাড়ি শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে, কচুদরম থানার গঙ্গানগরে। বিধবা মা, স্ত্রী ও এক বছরের শিশুপুত্র সেখানেই থাকে। সে-ও বাড়ি থেকেই আদালতে আসা-যাওয়া করে। দেরি হয়ে গেলে থেকে যায় মধুরবন্দের ঘরে। সেখানেই টাকার পরিমাণ নিয়ে তুমুল তর্ক বাধে। আচমকা ঘরের দা তুলে নিয়ে জয়ন্তর মাথায় কোপ বসিয়ে দেয় নাজির। দ্বিতীয়টি গলায়। ছটফট করতে করতে মারা যায় জয়ন্ত।
কিন্তু লাশ কী করবে? ওই দা দিয়েই টুকরো করে আস্ত মানুষটিকে। চারটি আলাদা প্যাকেট করে। পরদিন একটি প্যাকেট ফেলে শহরের শঙ্করদিঘির পাড়ে। অন্যটি লোচন বৈরাগী রোডে। বাকিগুলি সোনাবাড়িঘাটে। এসপি দিগন্ত বরা জানান, জয়ন্ত যে অর্থলগ্নি সংস্থায় কাজ করত, সেটি বছর দেড়েক আগে। সে গ্রাহকদের একাংশের কাছ থেকে নিয়মিত প্রিমিয়াম সংগ্রহ করছিল। সঙ্গে ‘মা ইন্টারন্যাশনাল’ এবং ‘ভারত সঞ্চয় ফান্ড’ নামে আরও দুই ভুয়ো সংস্থার পাসবুক ছাপিয়ে নেয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জয়ন্তর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে টাকা ধারের অনেক চুক্তিপত্র। সই করা কতকগুলি স্ট্যাম্প পেপার, কতকগুলি আবার শুধু সাদা কাগজে সই। সঙ্গে তারিখ ছাড়া সই-করা বহু চেক, এটিএম কার্ড, পেন কার্ড ইত্যাদি।
সেখান থেকে বেছে বেছে চার জনকে পুলিশ থানায় ডেকে পাঠায়। তিন জন স্বীকার করেন জয়ন্তর সঙ্গে লেনদেনের কথা। কিন্তু নাজির প্রথম থেকেই জয়ন্তকে না চেনার ভান করে, যেন জয়ন্ত নামটি সে এই প্রথম শুনল। তাতেই পুলিশের সন্দেহ বাড়ে। আর শেষ পর্যন্ত সাফল্য। পুলিশ সুপার জানান, নাজিরের স্বীকারোক্তি এবং তার ঘর থেকে দা ও তার ভগ্নীপতির বাড়ি থেকে জয়ন্তর বাইক উদ্ধারের পর তদন্তের কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.