বুধবার ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষা। শুক্রবার আছে ইংরেজি। মাঝে বৃহস্পতিবার দিনটা কী ভাবে কাজে লাগানো যায়? দুপুরের দিকে হাতে ‘কাজ’ এসেও গেল। একাদশ শ্রেণির কিছু ছাত্রীর কাতর ডাকে সাড়া দিয়ে দুই ‘দাদা’ জড়িয়ে পড়ল মারামারিতে। গ্রেফতার হয়েছে তারা। ধরা পড়েছে এক বহিরাগতও। এ দিকে, একাদশ শ্রেণির জখম চার ছাত্রকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে। তারা এ দিন পরীক্ষা দিতে পেরেছে।
ঘটনাটি হাসনাবাদের রামেশ্বরপুর ইউনিয়ন আদর্শ বিদ্যালয়ের। এ দিন ছিল একাদশ শ্রেণির ইংরেজি পরীক্ষা। গোলমালের সূত্রপাত সিট নম্বরকে কেন্দ্র করে। কে কোথায় বসবে, তা নিয়ে এক দল ছাত্রীর সঙ্গে বচসা বাধে ক্লাসেরই কিছু ছাত্রের। ঘটনা ঝগড়াঝাটিতেই থেমে থাকতে পারত। কিন্তু তত ক্ষণে কয়েক জন ছাত্রী মোবাইলে খবর দিয়েছে স্কুলেরই কিছু ‘দাদা’কে। যাদের আবার শুক্রবার উচ্চ মাধ্যমিকে বসার কথা।
সে হোক, ‘বোনেদের’ এমন ডাক কি ফেরানো সহজ? কিছু ক্ষণের মধ্যেই কয়েক কিলোমিটার দূরে কালীবাড়ি এলাকা থেকে এসে পড়ে রক্ষাকর্তারা। সহপাঠিনীদের সঙ্গে বেয়াড়া আচরণের উচিত শিক্ষা দিতে বেধড়ক মারধর চলে একাদশ শ্রেণির কয়েক জন ছাত্রের উপরে। স্কুল জুড়ে হুলস্থূল বেধে যায়।
শিক্ষকেরা কোনও মতে উদ্ধার করেন প্রহৃত ছাত্রদের। হামলাকারীদের কয়েক জন পালিয়ে গেলেও তিন জনকে ধরে একটি ঘরে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। বাইরে তত ক্ষণে জড়ো হয়েছেন বহু অভিভাবক। অভিযুক্তদের তাদের হাতে তুলে দিতে হবে বলে দাবি ওঠে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। গ্রেফতার করা হয় ওই তিন জনকে। কিছু ক্ষণ পরে শুরু হয় পরীক্ষা। পরে জখম চার ছাত্র ভর্তি করা হয় টাকি গ্রামীণ হাসপাতালে।
তাদেরই এক জনের কথায়, “ক্লাসের কয়েক জন ছাত্রী আমাদের নির্দিষ্ট জায়গায় এসে বসেছিল। ওদের সরে বসতে বলি। তাতে ওরা হুমকি দিয়ে বলে, দাদাদের ডেকে আনব। মজা বুঝিয়ে দেব। আমরা প্রথমটায় ভাবি শুধুই চমকাচ্ছে। কিন্তু দেখি মোবাইলে ফোন করে কাদের যেন আসতে বলছে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই স্কুলে ঢুকে জনা আটেক ছেলে আমাদের পেটাতে শুরু করে। তাদের কয়েক জনকে ভালই চিনি। আমাদের স্কুলে পড়ত।”
প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর ঘোষের কথায়, “অত্যন্ত অবাঞ্ছিত ঘটনা। যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা এই কাণ্ড ঘটাল, তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়েও একবার ভাবল না দেখে অবাক হচ্ছি। আর যে ছাত্রীরা ফোন করে বাইরে থেকে ছেলেদের ডেকে এনেছিল, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আজ, শুক্রবার ধৃত দুই ছাত্র পরীক্ষায় বসতে পারবে কিনা, তা নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেনি পুলিশ। তাদের বাড়ির লোককে ডেকে পাঠানো হয় থানায়। এক পুলিশ কর্তার কথায়, “ছাত্রীদের ডাকে এমন হিরোগিরির লোভ সামলাতে পারেনি ছেলেগুলো। কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে এমন ঘটিয়ে বসেছে।” |