হলদিয়ায় হুলস্থুলে ফের অভিযুক্ত তৃণমূল
তমালিকা-সঙ্গীদের জেলে পুরল পুলিশ
হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও হলদিয়া পুরসভার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। বুধবার পুরসভায় ভাঙচুরের পর ১১ জন তৃণমূল কাউন্সিলর ও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে পুর কর্তৃপক্ষ অভিযোগ জানালেও ধরা পড়েনি কেউ। কিন্তু সিপিএমের চার কাউন্সিলর ও দুই কর্মীর বিরুদ্ধে এক তৃণমূল কর্মী তাঁর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করা মাত্রই গ্রেফতার করা হল দু’জন সিপিএম কাউন্সিলরকে। অথচ ওই তৃণমূল কর্মীরই দাবি, মুখে গামছা বাঁধা দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। তা হলে নির্দিষ্ট ছ’জনের বিরুদ্ধে তিনি পুলিশে অভিযোগ করলেন কী করে, তার সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
স্বভাবতই পুলিশের এই ‘অতিসক্রিয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম নেতারা। তাঁদের অভিযোগ, পুর-বাজেট ভেস্তে দিতে তৃণমূল এই চক্রান্ত করছে। আজ, শুক্রবার পুরসভার বাজেট পেশ হওয়ার কথা। কিন্তু সিপিএমের দু’জন কাউন্সিলর গ্রেফতার হয়েছেন, অন্য দু’জন অভিযোগে নাম থাকায় গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাঁদের বাদ দিলে পুরসভায় বাম ও তৃণমূল কাউন্সিলরদের সংখ্যা সমান। সে ক্ষেত্রে, তৃণমূল কাউন্সিলররা অসহযোগিতা করলে বাজেট অধিবেশন ভেস্তে যেতে পারে বলে বামেদের আশঙ্কা।
এই বাড়ি পুড়েছে বলেই অভিযোগ করা হয়।
সিপিএম কাউন্সিলরদের নামে যিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন, সেই তপন বেরার বাড়ি ২০ নম্বর ওয়ার্ডের হাতিবেড়িয়ায়। বুধবার রাত আড়াইটে নাগাদ কিছু লোক তাঁর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বলে বন্দরের ঠিকাকর্মী তপনবাবুর দাবি। বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি অগ্নিসংযোগ ও খুনের পরিকল্পনার নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেন হলদিয়া থানায়। তাঁর কথায়, “কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগানো হয়েছিল। বাড়ির লোকের চিৎকারে বাইরে এসে দেখি, মুখে গামছা বাঁধা কয়েক জন পালিয়ে যাচ্ছে।” যদিও দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাড়িতে আগুন লাগার কোনও চিহ্ন দেখা যায়নি।
কিন্তু তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে সকালেই ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মানস ভুঁইয়া ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের দুলাল জানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হলদিয়া এসিজেএম আদালত তাঁদের ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠিয়েছে। আত্মগোপন করেছেন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর সদানন্দ মাইতি ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোপাল দাস। উৎপল মাইতি ও কানাই মাইতি নামে দুই অভিযুক্ত সিপিএম কর্মীও পলাতক। পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডা শেঠ বলেন, “বাজেট অধিবেশন ভেস্তে দিতে তৃণমূল আমাদের কাউন্সিলরদের হুমকি দেওয়া থেকে কিনে নেওয়া, সব চেষ্টা করেছে। শেষে চার কাউন্সিলরকে ফাঁসানো হল।”
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকে চিঠি দিয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, “আদালত পুরপ্রধানকে নিরাপত্তা দিতে বললেও তৃণমূলের গুন্ডারা একতরফা হামলা করেছে। আর পুলিশ মিথ্যা অভিযোগে সিপিএম কাউন্সিলরদের গ্রেফতার করেছে।” সূর্যবাবু মনে করিয়ে দেন, ১৫ ডিসেম্বর তৃণমূলের এক সাংসদ ঘোষণা করেন, কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁরা হলদিয়া পুরসভার দখল নেবেন। বিরোধী দলনেতার কথায়, “পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে শাসক দল নানা জায়গায় সিপিএমের নেতৃস্থানীয়দের গ্রেফতারের পরিকল্পনা নিয়েছে। হলদিয়ায় সেটাই করা হয়েছে।”
হলদিয়া মহকুমা আদালতে ধৃত দুই কাউন্সিলর।
হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতির বক্তব্য, “নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই সিপিএমের কাউন্সিলরেরা গ্রেফতার হয়েছেন।” যদিও তিনি বলেন, “পুরসভার তরফে কোনও অভিযোগ হয়েছে বলে জানা নেই। তৃণমূল কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়ে থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” জেলা বামফ্রন্টের তরফে বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে দাবি করে সিপিএম নেতা রবীন দেব বলেন, “সিপিএমের পুরবোর্ডকে সংখ্যালঘু করতেই এ কাজ করা হয়েছে।” পুরসভায় তৃণমূলের বিরোধী দলনেতা দেবপ্রসাদ মণ্ডলের আবার দাবি, “সিপিএম বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে বলে আমাদের এক কর্মী অভিযোগ করেছেন শুনেছি। এর সঙ্গে দলের সম্পর্ক নেই।” তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
গত পুরভোটে ২৬টি আসনের মধ্যে ১৫টিতে জিতে হলদিয়া পুরসভা পুনর্দখল করেছিল বামেরা। কিন্তু পুরপ্রধানের অভিযোগ, প্রথম থেকেই তৃণমূল কাজে বাধা দিচ্ছে। তাদের বাধায় বোর্ড মিটিং ভেস্তে যাচ্ছে বলে জানিয়ে পুলিশ-প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজ্যপাল ও স্বরাষ্ট্রসচিবের দ্বারস্থ হন তমালিকাদেবী। শেষে হাইকোর্টে যান। কিন্তু কোর্টের নির্দেশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাণ্ডব চলে পুরসভায়।

শুক্রবার আরিফ ইকবাল খানের তোলা ছবি


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.