জম্মু-কাশ্মীরের শান্তি ও স্থিতির বাতাবরণ এক আঘাতে বিধ্বস্ত। হিজবুল মুজাহিদিন শ্রীনগরের বেমিনা এলাকায় সিআরপি-র শিবিরে হামলার ‘কৃতিত্ব’ দাবি করিয়াছে, ভারত সরকারও ইহার পিছনে পাকিস্তানের পরোক্ষ মদত থাকিবার অভিযোগ করিয়াছে। জঙ্গিরা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় পাইয়াছিল। সিআরপি শিবিরের মাঠে ক্রিকেট খেলায় রত জওয়ানদের উপর গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণ করা জঙ্গিরা কাঁধে ক্রিকেট-সরঞ্জাম বহনের ব্যাগ লইয়াই মাঠে প্রবেশ করিয়াছিল। তাহাদের ব্যাগগুলি পরীক্ষা করা হয় নাই কেন? নিরাপত্তা রক্ষীরা কি তবে গত তিন বছরের শান্তির আবহে সতর্কতা খোয়াইয়া বসিয়াছিলেন?
প্রথমে আজমল কাসভ ও পরে আফজল গুরুর ফাঁসির ঘটনা উপত্যকার মুসলিম জনমানসে যে উত্তেজনার সঞ্চার করে, হুরিয়তের কট্টরপন্থী নেতাদের উসকানি এবং পিডিপি-র ন্যায় বিরোধী দলের দায়িত্বজ্ঞানহীন প্ররোচনায় তাহা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইতেছিল। এই আবহের মধ্যেই বেমিনা-র সিআরপি শিবিরে জেহাদিদের সন্ত্রাসবাদী হামলা কাশ্মীর পরিস্থিতিতে নূতন মাত্রা সংযোজন করিতেছে কি না, অচিরেই হয়তো তাহা বুঝা যাইবে। কাশ্মীরের কিছু এলাকা হইতে আংশিক ভাবে সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা) প্রত্যাহার করার যে বিষয়টি মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি হইতে বিবেচিত হইতেছিল, তাহা সম্ভবত কিছুটা ধাক্কা খাইবে। বেমিনার হামলা যদি সেই প্রক্রিয়াটিকে ভণ্ডুল করে, দুর্ভাগ্যজনক হইবে। সত্য, নিরাপত্তা বাহিনীর তরফে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফেও, আফস্পার আংশিক প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে জঙ্গি সন্ত্রাসের পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নটি তোলা হইবে। কিন্তু গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতার জন্য একটি গোটা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার বন্ধক রাখার যুক্তি নিশ্চয়ই গ্রাহ্য হইতে পারে না।
শ্রীনগর উপত্যকায় জেহাদি গোষ্ঠীর এই হামলার প্রতি পাকিস্তান সরকার কিন্তু কোনও সহমর্মিতা দেখায় নাই। বরং পাক বিদেশমন্ত্রী বলিয়াছেন, কাশ্মীর সমস্যার মীমাংসা না সামরিক পথে হইতে পারে, না জেহাদের পথে। ইহা নিঃসন্দেহে সদর্থক অবস্থান। হামলার জন্য ভারতীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের পাকিস্তানকে দোষারোপ করাকে এ জন্যই পাক বিদেশমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির পক্ষে প্রতিবন্ধক বলিয়া শনাক্ত করিয়াছেন। পাকিস্তানের পিপল্স পার্টির সরকার আর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই বিদায় লইবে। যাওয়ার আগে আলোচনার শান্তিপূর্ণ পথে কাশ্মীর-সহ দ্বিপাক্ষিক যাবতীয় সমস্যার সমাধানের পক্ষে সওয়াল করিয়া পিপল্স পার্টি কি পাকিস্তানের রাজনৈতিক এজেন্ডা নূতন করিয়া লিখিতে উদ্গ্রীব? অথচ কাশ্মীরের অভ্যন্তরে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই জেহাদিদের সহিত আপস করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিডিপি, উভয়েই কাশ্মীরিদের ‘প্রকৃত অভিভাবক’ সাজিবার তাগিদে আফজল গুরুকে ‘শহিদ’ বানাইতে ব্যস্ত। তাহাদের এই অবস্থান জম্মু ও লাদাখের জনমানসেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করিতেছে। সরকারকে তাই অত্যন্ত সাবধানতার সহিত পা ফেলিতে হইবে। |