সম্পাদকীয় ১...
ইচ্ছাময়ী
ব্রাত্য বসু মহাকরণে যাঁহার কক্ষের দরজায় ‘শিক্ষামন্ত্রী’ লেখা আছে বলিয়াছেন, তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ঊর্ধ্বে, এবং তাঁহার উপরেও কেহ আছেন। উপরে যিনি আছেন, তিনি তাঁহার নাম উল্লেখ করেন নাই। তবে, তিনি কে, আন্দাজ করিতে পারিলে পুরস্কারে কোনও ভাতার ব্যবস্থা নাই। এই রাজ্যে সকলই যাঁহার ইচ্ছা, শিক্ষামন্ত্রীর ঊর্ধ্বে তিনি। অবশ্য কেবল শিক্ষামন্ত্রী নহেন, তিনি সকলের ঊর্ধ্বে সকলের জীবন, তথা মন্ত্রিত্ব-মাঝে তাঁহারই ইচ্ছা পূরণ হওয়াই এই রাজ্যের দস্তুর। তাঁহার ইচ্ছাও বিবিধ। সম্প্রতি তাঁহার ইচ্ছা হইয়াছিল, যে সব উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সময়ে ফর্ম ভরিয়া উঠিতে পারে নাই, তাহাদেরও অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হউক। যে ছাত্ররা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে পারে না, তাহাদের কেন পরীক্ষায় বসিতে দেওয়া হইবে, এই প্রশ্ন অধুনা পশ্চিমবঙ্গে অবান্তর। কলেজে শিক্ষক-নিগ্রহও যখন মুখ্যমন্ত্রীর চোখে ‘ছোট ছেলেদের ছোট ভুল’, তখন আর কথা না বাড়ানোই মঙ্গল। এই ছাত্রদের অপদার্থতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার ইচ্ছাটি ইচ্ছাময়ী এমন শেষ বেলায় করিলেন কেন, সেই প্রশ্নও অর্থহীন। যে রাজ্যে কোনও নিয়ম নাই, সেখানে খামোখা সময়ের বিবেচনাই বা কোন যুক্তিতে প্রত্যাশা করা চলে? তাঁহার ইচ্ছা হইয়াছে, ইহার উপর আর কথা কী?
ইচ্ছাটি যে পন্থায় পূরণ করা হইল, প্রশ্ন তাহা লইয়া। শিক্ষামন্ত্রী উচ্চাবচ সম্পর্কের যে কাঠামোটি শুনাইয়া দিয়াছেন, তাহা সত্য, কারণ তাহা সর্বশক্তিমান। রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ তাঁহার দফতরের অধীন বটে। কিন্তু সংস্থাটি স্বশাসিত। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালনা করা সম্পূর্ণতই পর্ষদের অধিকারভুক্ত। যে ছাত্ররা ফর্ম ভর্তি করিয়া উঠিতে পারে নাই, তাহাদের পরীক্ষায় বসিতে দেওয়া হইবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত করিবার এক্তিয়ার পর্ষদের সভাপতির, শিক্ষামন্ত্রীর নহে। তিনি যে কাজটি করিয়াছেন, তাহাকে অনধিকারচর্চা বলে। কাজটি তিনি সম্ভবত স্বেচ্ছায় করেন নাই এই রাজ্যের কোন মন্ত্রীই বা স্বেচ্ছায় কিছু করিতে পারেন! কিন্তু তিনি যখন শিক্ষামন্ত্রী, তখন অনধিকারচর্চা ঠেকাইবার দায়িত্ব তাঁহার থাকে বইকী। তিনি নাকি গোড়ায় এই হস্তক্ষেপ করিতে অনিচ্ছুক ছিলেন। মত বদলাইলেন কেন, সেই কূটপ্রশ্নে কাজ নাই। কিন্তু তাহার ফল কী হইল, শিক্ষামন্ত্রী নিশ্চয়ই দেখিতেছেন। পশ্চিমবঙ্গে এখন এই বিশৃঙ্খলাই একমাত্র সত্য। এবং, তাহা রচিত হইয়াছে সেই এক জনের ইচ্ছাপূরণ করিবার তাড়নায়। যাহার যাহা কাজ, তাহাকে সেই কাজটুকু করিতে না দেওয়ার অকৃত্রিম ব্যাকুলতা পশ্চিমবঙ্গকে সর্বনাশের পথে লইয়া যাইতেছে। এই রাজ্যে সি পি আই এম অমর হয় নাই, তৃণমূল কংগ্রেসও হইবে না। কিন্তু এই বিশৃঙ্খলার মর্মান্তিক উত্তরাধিকার পশ্চিমবঙ্গকে বহন করিতে হইবে।
যাঁহার ইচ্ছায় আজ পশ্চিমবঙ্গ এই অবস্থায় পৌঁছাইয়াছে, তাঁহার ইচ্ছার জন্ম কোথায়? অনুমান করা চলে, ইচ্ছাগুলি ক্ষমতা উপভোগের, সুতরাং প্রদর্শনের উদগ্র বাসনার মাটিতে জন্মায়। এক জন দক্ষ প্রশাসকের দায়িত্ব হইল, প্রশাসনকে তাহার নিজের ছন্দে চলিতে দেওয়া। ন্যূনতম যে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, তাহার অধিক একটি নির্দেশও না দেওয়া। গণতান্ত্রিক সরকারের ইহা প্রাথমিক শর্ত। কিন্তু, সেই শর্ত রক্ষা করিবার দায় যাঁহারই থাকুক, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নাই। সব যদি নিজের নিয়মেই চলে, মুখ্যমন্ত্রী কী করিবেন? তাঁহার হাতেই যে ক্ষমতা, তাহা দেখাইবার উপায় থাকিবে কোথায়? যে নিয়ম প্রচলিত, তাহাকে উল্লঙ্ঘন করিয়া নিজের মনোবাঞ্ছা প্রতিষ্ঠা করা গেলে তবেই তো ক্ষমতা বোঝা যাইবে। অতএব, মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মহাকরণে কোথায় কোন ছবিটি ঝুলিবে, তাহাও নাকি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্থির হয়, সরকারি বিচিত্রানুষ্ঠানে কোন শিল্পীর পর কোন শিল্পী গাহিবেন, তাহাও দর্শকাসনে বসা মুখ্যমন্ত্রী স্থির করিয়া দেন। আর, বড় ইচ্ছার তো কথাই নাই। মন্ত্রীদের কাজ তাঁহার ইচ্ছা পূরণ করা। তাহাই যদি হয়, তবে শুধু মুখ্যমন্ত্রীই থাকুন না কেন? বাকিদের বিদায় করা হউক। খরচ বাঁচিবে। নামফলক ব্যতীত তাঁহাদের তো আর অস্তিত্ব নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.