সিলিন্ডার থেকে তীব্র ঝাঁঝালো গ্যাস বেরোনোয় অসুস্থ হয়ে পড়লেন ৪৫ জন। বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে চিৎপুর থানা এলাকার কালীপ্রসন্ন সিংহ রোডে, যার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা অধিকংশই ওই এলাকায় পরিবহণ সংস্থার কর্মী। সকলের অবস্থাই স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, কালীপ্রসন্ন সিংহ রোডের এক পরিবহণ সংস্থার একটি ট্রাক থেকে গ্যাস সিলিন্ডার নামিয়ে আর একটি ট্রাকে তোলা হচ্ছিল। তখনই একটি সিলিন্ডার থেকে গ্যাস লিক করে। ওই পরিবহণ সংস্থা তরফে জানা গিয়েছে, সিলিন্ডারে ক্লোরিন গ্যাস ছিল।
কালীপ্রসন্ন সিংহ রোডের ওই এলাকায় পরপর পরিবহণ সংস্থার অফিস ও গুদাম। পাঁচিলে ঘেরা বড় বড় গুদামের মধ্যে ট্রাকের মাল খালাস করা ও ট্রাকে তোলা হয়। আশপাশে বসতবাড়ি প্রায় নেই। এ দিন তেমনই একটি পরিবহণ সংস্থার অফিসের ভিতরে একটি ক্লোরিন গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার ট্রাকে তুলতে গিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই সংস্থার সুপারভাইজার কেশর রাম জানান, দুর্গাপুর থেকে ট্রাকে করে ক্লোরিন ভর্তি সিলিন্ডার তাঁদের সংস্থায় আসে। এখান থেকে আর একটি ট্রাকে করে সিলিন্ডার হলদিয়ায় পাঠানোর কথা ছিল। |
ক্লোরিন ছড়ানোয় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এঁরা। —নিজস্ব চিত্র |
ঘটনার সময়ে ট্রাকের পাশেই ছিলেন মহম্মদ নকিব নামে এক কর্মী। তিনি বলেন, “হঠাৎ ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে এল। প্রচণ্ড কাশি শুরু হল। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। বুঝলাম, গ্যাস বেরোচ্ছে সিলিন্ডার থেকে। সকলেই ভয়ে বাইরে পালাই।” তবে শুধু ওই সংস্থার কর্মীরাই নন, আতঙ্ক ছড়ায় গোটা চত্বরেই। লালাবাবু পাসোয়ান নামে এক চায়ের দোকানের কর্মী বলেন, “দেখলাম কয়েক জন ওই কোম্পানির গেট দিয়ে বেরিয়ে পালাচ্ছেন। ভাবলাম ওই গোডাউনে আগুন লেগেছে। তার পরেই তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ পেলাম। ভয়ে রাস্তায় ছুটতে শুরু করি। ছুটতে ছুটতেই কেউ কেউ বমি করছিল।” আর এক স্থানীয় বাসিন্দা বিন্দি দেবী বলেন, “আমাদের বাড়ির জানলা দিয়ে গ্যাস ঢুকে পাঁচ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
এ দিকে ঘটনার পরেই গ্যাসের প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীদের আর জি কর এবং উত্তর কলকাতার একটি বেসরকরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অধিকাংশই চোখ-মুখ জ্বালা ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এদের মধ্যেই এক জন এস পি জয়সোয়াল। তিনি ওই এলাকার একটি প্রিন্টিং সংস্থায় কাজ করেন। ঘটনার সময়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। গ্যাসের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে তাঁকে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে রাখা হয়। এ রকম বেশ কয়েক জন বয়স্ক রোগীদেরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি রাখার সিদ্ধান্ত নেন। আর জি করের ডেপুটি সুপার সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, “ঝাঁঝালো গ্যাসে অসুস্থ বহু রোগীকে এখানে আনা হয়। সকলের অবস্থাই স্থিতিশীল।” কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, ওই ট্রাকে সাতটি সিলিন্ডার ছিল। তার মধ্যেই একটি লিক করেছে বলে খবর। তবে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।” |