পাঁচ বছর আগে যা হয়নি। এ বার তাই হল। বাকি বাম শরিকদের দাবি মেনে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাড়তি আসন ছাড়তে রাজি হল বাঁকুড়া জেলা সিপিএম। বুধবার জেলার বাম দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করে বামফ্রন্টের জেলা সম্পাদক তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, “বাম ঐক্যের স্বার্থেই বামফ্রন্টের বাকি শরিক দলগুলিকে বাড়তি আসন দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি আসনের জন্য গোটা জেলায় আমাদের জোট ভেঙে যাক, তা চাই না।”
সাংগঠনিক শক্তির ভিত্তিতে অন্য বাম শরিকরা নিজেদের বাড়তি আসন দাবি করেছিলেন। ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেও তারা এমনই দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তখন রাজ্যের শাসক দল সিপিএমের কাছ থেকে বাড়তি আসন তাঁরা বের করে আনতে পারেননি। রাজ্যের শাসন ক্ষমতা হারানোর পরে এ বার বড় শরিক সিপিএমের কাছ থেকে বাড়তি আসনের দাবিতে বাকি বাম শরিকরা চাপ বাড়াতে থাকেন। আসন বন্টন নিয়ে জেলায় আগে চার বার বাম নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। রফাসূত্র বের হয়নি। বুধবার পঞ্চমবারের বৈঠকে অবশেষে তাঁদের দাবি পূরণ হওয়ায় খুশি ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি এবং সিপিআই নেতৃত্ব।
অন্য বাম শরিকদের দাবি ছিল, আগের থেকে জেলার কিছু কিছু এলাকায় তাঁদের সাংগঠনিক শক্তি বেড়েছে। এমনকী ওই সব এলাকায় বড় শরিক সিপিএমের থেকেও তাঁদের সমর্থন অনেকাংশে বেশি। তাই তাঁরা পঞ্চায়েত নির্বাচনে গতবারের তুলনায় ওই এলাকাগুলিতে বেশি আসন চেয়েছিলেন। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব ওন্দা, আরএসপি নেতৃত্ব ছাতনা ও সিপিআই কোতুলপুরে এ বার বাড়তি আসন দাবি করেন। তাঁদের অভিযোগ, সিপিএম নেতৃত্ব ২০০৮ সালকে ভিত্তি বর্ষ হিসেবে আসন বন্টন করতে চেয়েছিলেন। অথাৎ, গত বার বাম দলগুলি যেখানে যত আসন পেয়েছিল, এ বারও তার বেশি কিছু পাবে না। কিন্তু নিজেদের দাবিতেই অনড় থাকেন অন্য বাম নেতৃত্ব। বাম দলগুলি সূত্রের খবর, গত বার বেশ কিছু পঞ্চায়েতে বাম দলগুলির মধ্যে জোট ভেঙে যায়। একে অন্যের বিরুদ্ধে গোঁজ প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেয়। এ বার বিরোধী শিবিরে থাকায় সিপিএম গত বারের মতো অন্য শরিকদের দাবি অগ্রাহ্য করার অবস্থায় নেই। তার উপর চারবার বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় জেলা বামফ্রন্টে ঐক্যের পরিবেশও নষ্ট হচ্ছিল। তার উপর জেলার সর্বত্র শাসক দল তৃণমূলের মোকাবিলা করার অবস্থাও সিপিএমের নেই। এই পরিস্থিতিতে অন্য শরিকদের দাবি মেনে নেওয়া ছাড়া বড় শরিকের আর কোনও উপায় ছিল না। বৈঠক শেষে অমিয়বাবু সাংবাদিকদের বলেন, “বাঁকুড়া জেলায় বাম দলগুলির মধ্যে সুষ্ঠু ভাবে আসন রফা হয়েছে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম দলগুলি ঐক্যবদ্ধ ভাবেই লড়বে।”
আরএসপি-র জেলা সম্পাদক মদন মাহাতো বলেন, “আমরা ছাতনা পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৭টি আসন চেয়েছিলাম। সিপিএম ১৩টি দিতে রাজি হয়েছিল। এ দিন বৈঠকে অবশ্য তারা আমাদের ১৪টি আসন দিতে রাজি হয়েছে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক অনাথ মল্ল জানান, আসন বন্টন নিয়ে আমাদের আর কোনও অভিযোগ নেই। গতবারের তুলনায় বেশি আসন পেয়ে আমরা খুশি।” সিপিআই কোতুলপুরে জেলা পরিষদের আসনটি চেয়েছিল। তাদের সেই দাবি এ দিন মেটেনি। দলের জেলা সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ টাঙ্গি বলেন, “জেলা পরিষদের একটি নতুন আসন বেড়েছে কোতুলপুরে। সেখানে আমাদের সাংগঠনিক ক্ষমতা ভাল। তাই ওই আসনটি আমরা দাবি করেছিলাম। জেলাস্তরে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি। রাজ্যস্তরে আলোচনা হবে।” |