|
|
|
|
এ বার কাঠগড়ায় তৃণমূল |
হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও ফের তাণ্ডব হলদিয়া পুরসভায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
পুরভবনে বহিরাগতের প্রবেশ (পুর-বোর্ডের বৈঠকের দিন) রুখতে জেলা পুলিশকে মঙ্গলবারই নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই হলদিয়া পুরসভায় ঢুকে তাণ্ডব চালাল একদল বহিরাগত। ভাঙচুর করা হল আসবাবপত্র, ফুলের টব। সিপিএমের অভিযোগ, বুধবার বিকেলে শহরবাসীর বিক্ষোভের নামে পুরভবনে ভাঙচুর চালানো হয়। মদত দেন তৃণমূলের কাউন্সিলররা।
গোটা ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। হলদিয়া পুরসভায় পুর-বোর্ডের বিভিন্ন বৈঠক নির্বিঘ্ন করতে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকেই নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। পুরপ্রধান সিপিএমের তমালিকা পণ্ডা শেঠ বলেন, “এ দিন যাঁরা বিক্ষোভ দেখাতে এসেছিলেন, তাঁরা সাধারণ নাগরিক নন। মদ্যপ, গুন্ডা।” তাঁর অভিযোগ, “ব্যাপারটা হয়েছে তৃণমূলের কাউন্সিলরদের মদতে। থানা থেকে দেড়শো মিটার দূরে এমন ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবার হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও পুলিশকে সামান্যতম কর্তব্য পালন করতে দেখলাম না।”
পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন মঙ্গলবারের মতো এ দিনও বলেন, “আমি ছুটিতে রয়েছি।” আর হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতির ব্যাখ্যা, “হাইকোর্ট তো শুক্রবারের বাজেট অধিবেশন ও বোর্ড মিটিং নির্বিঘ্ন করতে নির্দেশ দিয়েছে।” তবে কি অন্য দিনে পুরভবনে গোলমাল বাধলে আপনারা কিছু করবেন না? ওই পুলিশকর্তার জবাব, “সব সময় ওখানে পুলিশ থাকা সম্ভব নয়।” এ দিনের ঘটনায় পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। তবে রাত পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। |
|
তাণ্ডবের পরে। —নিজস্ব চিত্র |
এ দিন বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ হলদিয়া পুরভবনের সামনে জড়ো হন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। জল, নিকাশি, রাস্তা, পথবাতি-সহ নানা বিষয়ে উন্নয়নের দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ। প্রতীকী হিসেবে বিক্ষোভকারীদের মাথায় ছিল শূন্য মাটির হাঁড়ি। কারও হাতে অবশ্য তৃণমূলের দলীয় পতাকা ছিল না। তবে বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন তৃণমূলের বিরোধী দলনেতা দেবপ্রসাদ মণ্ডল, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর স্বপন নস্কর। আচমকাই বিক্ষোভকারীরা পুরভবনের ভিতরে ঢুকে যান। চেয়ার-টেবিল-ফুলের টব ভাঙচুর শুরু হয়। তখন তমালিকাদেবী পুরভবনে ছিলেন না। তবে উপপুরপ্রধান নারায়ণ প্রামানিক-সহ বেশ কয়েকজন বাম কাউন্সিলরের উপস্থিতিতেই তাণ্ডব চলে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের দেবপ্রসাদ মণ্ডল অবশ্য ভাঙচুরের অভিযোগ মানেননি। তাঁর বক্তব্য, “এটা আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি। জলের দাবিতে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছি ঠিকই, তবে কোনও ভাঙচুর করিনি। যারা ভাঙচুর করেছে, তারা সিপিএমের হার্মাদ।” দেবপ্রসাদবাবুর এই অভিযোগ যদিও নস্যাৎ করে দিয়েছেন তমালিকাদেবী।
গত বছর জুন মাসে পুর-নির্বাচনে ২৬টি আসনের ১৫টিতে জিতে হলদিয়া পুরসভা পুনর্দখল করে বামেরা। তৃণমূলের বাকি ১১ জন কাউন্সিলার প্রথম থেকেই পুরসভার কাজে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তমালিকাদেবীর। তৃণমূলের বাধায় বোর্ড মিটিং ভেস্তে যাচ্ছে অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন হলদিয়া পুরসভার পুরপ্রধান-সহ ১৫ জন বাম কাউন্সিলার। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও জানিয়েছিলেন তাঁরা। কাল, শুক্রবার পুরসভার বাজেট অধিবেশন। সে কথা মাথায় রেখেই মঙ্গলবার পুলিশ সুপারকে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, পুরসভায় বৈঠক চলাকালীন কাউন্সিলর ও পুরকর্মী ছাড়া কেউ পুরভবনে ঢুকতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে পুলিশকেই। তার পরেই এ দিনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ তমালিকাদেবী। তিনি বলেন, “আমার আশঙ্কা শুধু বোর্ড মিটিংয়ের দিন নয়, এ বার থেকে রোজই এ রকম ঘটনা ঘটবে!” |
|
|
|
|
|