বার্সেলোনা-৪ (মেসি-২, ভিয়া, আলবা)
এসি মিলান-০
(দু’পর্ব মিলিয়ে ৪-২)
|
যে কোনও পারফর্মিং পেশা, সে খেলা হোক, কিংবা গান, অভিনয়, পেন্টিংসব ক্ষেত্রে একটা খুব ক্লিশে হয়ে যাওয়া কথা আছে। ফর্ম আসে-যায়, কিন্তু স্কিল চিরকালীন। মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মেসির দু’টো দুর্ধর্ষ গোল। বার্সেলোনার অবিশ্বাস্য ভাবে ফেরা টিভিতে দেখতে দেখতে ওই বহু পুরনো কথাটাই বারবার মনে আসছিল।
মেসি আর রোনাল্ডোর মধ্যে তুলনা টানার শেষ নেই। সাত দিনের মধ্যে রোনাল্ডোর রিয়াল মাদ্রিদ আর মেসির বার্সেলোনা ভয়ঙ্কর চাপের দু’টো ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর প্রশ্ন উঠছে, দুই সুপারস্টার ফুটবলারের কার উপর বেশি চাপ ছিল? কে বেশি সফল? রোনাল্ডো তিন বছর পর প্রথম ওর পুরনো ক্লাবের হোম গ্রাউন্ড ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে নেমে, পুরনো গুরু অ্যালেক্স ফার্গুসনের ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে গোল করে রিয়ালকে জিতিয়েছে। যেখানে মাঠ আর মাঠের বাইরেও প্রতি মুহূর্তে তীব্র আবেগের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে ওকে। তবু আমি বলব, গত মঙ্গলবার রোনাল্ডোর চেয়ে এই মঙ্গলবার মেসির কৃতিত্ব বেশি। রোনাল্ডো আর রিয়াল সম্প্রতি দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে। সেখানে মেসি আর বার্সেলোনার শেষ তিনটে বড় ম্যাচ পরপর জঘন্য গিয়েছিল। |
রিয়ালের কাছে পাঁচ দিনের মধ্যে দু’বার হার। আর মিলানে গিয়ে তো প্রথম লেগের ম্যাচটা বার্সেলোনা এবং মেসির জীবনের সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স। তা ছাড়া মেসির মতো রোনাল্ডোকে ইদানীং মোটেই শুনতে হয়নি, ‘মেসি-ম্যাজিক শেষ!’ গত রাতে ন্যু কাম্পে ফিরতি ম্যাচ তাই সব অর্থেই মেসি আর ওর টিমের অস্তিত্বরক্ষার যুদ্ধ ছিল।
যে মহাযুদ্ধে নেমে পাঁচ মিনিটেই জাভির পাস মেসি মিলানের পাঁচ ডিফেন্ডারের ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়েও রিসিভ করে চোখের পলকে বাঁ-পায়ের নিঁখুত শটে গোল করে সেই বহু ব্যবহৃত কথাটারই আর এক বার প্রমাণ দিল। ফর্ম আসে-যায়, কিন্তু জাত বরাবরের। ৪০ মিনিটে ইনিয়েস্তার পাস থেকে মেসির দ্বিতীয় গোল প্রায় প্রথম গোলটার রিপ্লে। তার আগের দু’টো ঘটনার কথা বলতেই হচ্ছে। যা নিয়ে ওয়েবসাইটগুলোতে দেখছি চর্চা চলছে।
এক) মেসির প্রথম গোলের সাত মিনিট পরেই মিলানের অ্যাবাট নিজের বক্সে যে ভাবে গোলমুখী পেদ্রোকে ফেলে দিয়েছিল, তাতে আমার মতে বার্সেলোনার পেনাল্টি প্রাপ্য ছিল।
দুই) মেসির দ্বিতীয় গোলের আগের মিনিটেই মাসচেরানোর ভুলে নিয়াং সামনে সম্পূর্ণ ফাঁকা গোল পেয়েও পোস্টে মারায় মিলান অ্যাওয়ে ম্যাচে নিশ্চিত গোলের সুযোগ হারায়। যদিও আমি মনে করি, মেসি-জাভি-ইনিয়েস্তা-বুসকেতস-দাভিদ ভিয়া-দানি আলভেসরা মঙ্গলবার এতটাই তেজি আর অনায়াস ছিল যে, ওই সময় মিলান ১-১ করে ফেললেও বার্সেলোনাকে শেষ পর্যন্ত রুখতে পারত না। ৪-০ না হয়ে বড়জোর ৪-১ রেজাল্ট হত।
আসলে মেসির দলের সবচেয়ে বড় মস্তানিইতালিয়ান আলট্রা ডিফেন্সিভ ট্যাকটিক্সকে জয় করতে নিজেদের খেলার স্টাইল সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলা। চোদ্দো দিন আগের সান সিরোর বার্সেলোনা আর গত রাতে ন্যু কাম্পের বার্সেলোনা যেন দু’টো আলাদা দল। ফুটবলারদের নামধাম যতই এক হোক না কেন! তিকিতাকার জায়গায় অনেক বেশি ডাইরেক্ট ফুটবল। মেসি এই ম্যাচে অ্যাটাকিং থার্ডের যে জায়গায় বল রিসিভ করে চোখের নিমেষে শট নিয়ে দু’টো গোল করেছে, অন্য দিন হলে দশ বারের মধ্যে অন্তত সাত বার বল হোল্ড করে ওয়াল খেলে গোলের জন্য আরও ভাল পজিশনে যাওয়ার চেষ্টা করত। |
মেসি না হয় বিরল প্রতিভা। বিশ্বসেরা। কিন্তু ওর টিমে যে সব বড় মাপের স্প্যানিশ ফুটবলারও আছে, সবার বলের উপর দখল এতটাই ভাল, স্কিলে এতটাই নিপুণ যে তিকিতাকা ছেড়ে ৩০-৪০ গজের থ্রু পাস, সাবেকি উইং প্লে, দরকারে উঁচু পাসেও মিলানের আলট্রা ডিফেন্স তছনছ করতে বার্সেলোনার সমস্যা হয়নি। আসলে চ্যাম্পিয়নরা সব কিছু করতে পারে। ইওর্দি আলবার চতুর্থ গোলটা সাঞ্চেজের যে থ্রু পাস থেকে, সে রকম অ্যাটাক রিয়াল বা ম্যান ইউকেই খেলতে দেখতে আমরা অভ্যস্ত। এমন প্রাণ জুড়ানো ফুটবল দেখার পরের সকালে নিজের দলকে কোচিং করাতে নেমে শুধু মনে হয়, পেতাম যদি কিছু ওই রকম স্কিলফুল প্লেয়ার! যদিও এটুকু তো আমাদের এখানকার ছেলেদের বলাই যায়সত্যিকারের চেষ্টা থাকলে বার্সেলোনার মতো ফিরে আসাও যায়!
|