একশো দিনের কাজে সংস্কার হওয়া একটি পুকুর বুজিয়ে নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে দুর্গাপুরের দুবচুরুরিয়ে গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই পুকুরের শরিকদের একাংশই এই ঘটনায় যুক্ত। এ নিয়ে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগও জানিয়েছেন তাঁরা। মহকুমাশাসক আয়েষারানি জানান, অন্ডালের বিডিওর কাছে এ বিষয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে অন্ডাল গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই পুকুর বোজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তখন প্রতিবাদ জানিয়ে বাসিন্দারা প্রশাসন এবং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের শরণাপন্ন হন। দুর্গাপুরের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১৪৪ ধারা জারি করায় পুকুর বোজানো থেমে যায়। এরপরে গত বছর প্রায় ২.২৮ একর আয়তনের এই পুকুরটি একশো দিনের প্রকল্পে সংস্কার করা হয় বলে পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে। সংস্কারে ব্যয় হয় প্রায় ৩ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বর্তমানে ফের পুকুরের একাংশ বোজানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাঁরা জানান, পুকুরটি এলাকার বাসিন্দারা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করেন। |
পুকুর ধারে চলছে নির্মাণ। —নিজস্ব চিত্র। |
এমনিতেই গ্রীষ্মে এলাকায় জলের আকাল দেখা দেয়। তখন পুকুরের জলেই অনেক কাজ সারেন তাঁরা। ফলে পুকুরটি বুজিয়ে দেওয়া হলে তাঁরা সমস্যায় পড়বেন। বাসিন্দাদের তরফে কিষাণ দত্ত, সুকুমার ঘোষরা বলেন, “চাইলেই কেউ পুকুর বোজাতে পারেন না। আইন তা বলে না। কিন্তু শরিকদের একাংশ সেটাই করছেন। পুকুর ধারে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নির্মাণ কাজ চলছে।” তাঁরা আরও জানান, পুকুরটি তাঁদের পূর্বপুরুষেরাও ব্যবহার করে এসেছেন। পুকুরটির সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কিছুতেই তাঁরা পুকুরটি ভরাট করতে দেবেন না।
এছাড়া এই এলাকায় দিন দিন জমির দাম বাড়ছে। পাশেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে অন্ডালে বিমাননগরী গড়ার কাজ এগিয়ে যাওয়ায় জমির দান আরও বেড়ে গিয়েছ। কেউ এক ছটাক জমিও ফেলে রাখতে চাইছেন না। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পুকুরের শরিকরা তাই পুকুরের একাংশ বুজিয়ে সেখানে নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “পুকুরের এক শরিক মনোজ দত্ত নিজে পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে এমন কাজ করিয়ে নিচ্ছেন।” তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য মনোজ দত্ত অবশ্য এমন অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি জানান, বহু শরিকানার পুকুর। কে বা কারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তা তিনি ঠিক জানেন না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
মৎস্য দফতর সূত্রেও জানা গিয়েছে, ইনল্যান্ড ফিসারিজ অ্যাক্ট ১৯৮৪-র ১৭ এ ধারা অনুযায়ী এই ধরনের কাজ বেআইনি। গত ৬ মাস ধরে জল রয়েছে এমন পুকুর বুজিয়ে নির্মাণ কাজ করা যায় না। দুর্গাপুরের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “যে কাজ করা হয়েছে তা বেআইনি। আমরা ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছি।” মহকুমাশাসক আয়েষারানি জানিয়েছেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফে অভিযোগ পেয়ে তিনি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে অন্ডালের বিডিওকে রিপোর্ট পাঠাতে বলেছেন। |