|
|
|
|
যৌন নির্যাতনও ধর্ষণ |
সহবাসে সম্মতির বয়স ১৬, রাতারাতি একমত মন্ত্রিগোষ্ঠী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ বিল নিয়ে অবশেষে একমত হল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিগোষ্ঠী। বিলটিতে যৌন সম্পর্কে সম্মতির বয়ঃসীমা ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছরে আনার কথা বলা হয়েছে। যৌন নির্যাতনের বদলে ফৌজদারি আইনে ধর্ষণ শব্দটিই ব্যবহার হবে। মহিলাদের লুকিয়ে দেখা বা অনুসরণ করার মতো অপরাধেও শাস্তি কড়া হচ্ছে। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণিত হলেও শাস্তির বিধান থাকছে না।
গত কাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বিলটি নিয়ে পরস্পরবিরোধী মত উঠে আসায় কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ঐকমত্য তৈরিতে পালানিয়প্পন চিদম্বরমের নেতৃত্বে মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মতানৈক্য কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন চিদম্বরম। গত কাল সন্ধ্যায় এক প্রস্ত বৈঠকের পর আজ ফের মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক বসে। তার পরে কপিল সিব্বল জানান, আগামী কালই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বিল নিয়ে আলোচনার পর এতে চূড়ান্ত সিলমোহর বসবে।
সরকারি সূত্রের খবর, যৌন নির্যাতন রুখতে গিয়ে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করা জরুরি ছিল। কিন্তু এই আইনের যাতে অপব্যবহার না হয় বা আদালতে যাতে এই আইন চ্যালেঞ্জের মুখে না পড়ে, সেটাও দেখা দরকার ছিল। মূলত সেই রক্ষাকবচগুলি নিয়েই মন্ত্রিগোষ্ঠীতে জট ছাড়ানো হয়েছে। এই রক্ষাকবচের বন্দোবস্ত রাখতেই সহবাসে সম্মতির বয়ঃসীমা ১৮ থেকে ১৬ বছরে কমিয়ে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে নারী-কল্যাণ মন্ত্রীর আপত্তি ছিল। কিন্তু তা ধোপে টেকেনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “সহবাসে সম্মতির বয়ঃসীমা কমিয়ে না আনলে গ্রামাঞ্চলে এর অপব্যবহার হতে পারে। কোনও কিশোরী নিজের ইচ্ছায় তাঁর পুরুষ-বন্ধুর সঙ্গে মিশলেও রক্ষণশীল অভিভাবকরা ওই ছেলেটির বিরুদ্ধে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলতে পারে। এ কথাও মনে রাখতে হবে, এটা ফৌজদারি আইন। কাজেই অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। পার্কে কোনও ছেলেমেয়ে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসে থাকলেও পুলিশ তাদের হেনস্থা করতে পারে।”
মন্ত্রিগোষ্ঠীতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মহিলাদের লুকিয়ে দেখার অপরাধ প্রথম বার করলে জামিনের ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু দ্বিতীয় বার জামিন মিলবে না। মহিলাদের ক্রমাগত অনুসরণ, গায়ে হাত দেওয়া, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ শারীরিক অঙ্গভঙ্গি বা মন্তব্যও জামিন অযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এই ধরনের ঘটনায় মিথ্যে অভিযোগ করা সব থেকে সহজ বলে মন্ত্রিসভার অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তাই মিথ্যে অভিযোগে শাস্তির বিধান রাখারও প্রস্তাব ছিল। কিন্তু মন্ত্রিগোষ্ঠী তাতে সায় দেয়নি। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, এমনিতেই এ দেশে অধিকাংশ যৌন হেনস্থার ঘটনায় মহিলারা নালিশ জানাতে চান না। তার পরে মিথ্যে অভিযোগে শাস্তির বিধান থাকলে মহিলারা অভিযোগ করতেই ভয় পাবেন। এ ক্ষেত্রে নারী-আন্দোলনকারী সংগঠনগুলির পথেই হেঁটেছে মন্ত্রিগোষ্ঠী। একইভাবে যৌন নির্যাতনের বদলে আইনে ধর্ষণ শব্দটি রাখারই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সমলিঙ্গে যৌন নির্যাতনে অন্য আইনেই শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
সরকারের মধ্যে মতৈক্য হলেও বিলের নানা বিষয়ে ইতিমধ্যেই অবশ্য সমাজবাদী পার্টি, বসপা-র মতো দলগুলি আপত্তি তুলতে শুরু করেছে। বিজেপি-ও নিজের অবস্থান খোলসা করেনি। সংসদীয় মন্ত্রী কমলনাথ এ নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন সোমবার। বিলটি ২২ মার্চের মধ্যেই সংসদে পাশ করাতে হবে। দিল্লির গণধর্ষণের পর যৌন নির্যাতনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে অর্ডিন্যান্স জারি করলেও, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আইন করতে না পারলে সরকারের মুখ পুড়বে। এর দায় যাতে শুধু সরকার বা কংগ্রেসের ঘাড়ে না বর্তায়, সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক, সে কারণেও। |
|
|
|
|
|