এক জন নিজেকে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বলে জানিয়ে পুলিশকে চিঠি দিচ্ছেন। অন্য জন আবার প্রশাসনকে চিঠি দিচ্ছেন নিজেকে ওই একই পদাধিকারী দাবি করে।
দু’জনেই তৃণমূলের কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সভাপতির প্যাড ব্যবহার করে আলাদা আলাদা ভাবে বৈঠক ডাকছেন। কোন
|
বিকাশ মজুমদার। |
সভায় যাবেন, বিভ্রান্ত কর্মী-সমর্থকেরা। সমস্যায় পড়েছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারাও।
|
দেবাশিস মণ্ডল। |
প্রথম জন কেতুগ্রামের অম্বল গ্রামের বিকাশ মজুমদার। অন্য জন কাটোয়া মহকুমা আদালতের আইনজীবী, কেতুগ্রামের চড়ুখি গ্রামের দেবাশিস মণ্ডল। বিকাশবাবু দলের জন্মলগ্ন থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন। বর্তমানে দলের কেতুগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী হিসেবে পরিচিত তিনি। দেবাশিসবাবু গত বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলে যোগ দেন। কেতুগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের ঘনিষ্ঠ তিনি।
দলের সভাপতি কে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন কেতুগ্রাম ২ ব্লকের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, শিবরাত্রির দিন ব্লকের নিরোল গ্রামে কর্মী বৈঠক ডাকেন দেবাশিসবাবু। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক। সে দিনই আবার বারান্দা গ্রামে সম্মেলন করেন বিকাশ মজুমদার।
শুধু দলীয় কর্মীরা নন, শাসক দলের ব্লক সভাপতি বিতর্কে সমস্যায় পড়েছে ব্লক প্রশাসন ও পুলিশও। পঞ্চায়েত ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা, নির্বাচন সংক্রান্ত নানা বিষয়ে কার সঙ্গে কথা বলবেন, তা নিয়ে বেশ অসুবিধায় তাঁরা। কেতুগ্রাম ২ ব্লক অফিসের এক আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, “সর্বদল বৈঠকে কাকে ডাকা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতেই বেশি সমস্যা হয়।” বুধবার কেতুগ্রাম ২ ব্লকে সর্বদল বৈঠকে প্রশাসন অবশ্য দেবাশিসবাবুকেই ডেকেছে।প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আজ, বৃহস্পতিবার কেতুগ্রামের সীতাহাটি পঞ্চায়েত এলাকায় পদযাত্রার ডাক দিয়েছেন বিকাশবাবু। এ ব্যাপারে দলের ব্লক সভাপতির প্যাডে কেতুগ্রাম থানার আইসি-কে চিঠিও দিয়েছেন। এ দিনই তফসিলি জাতি ও উপজাতির ফর্ম চেয়ে সভাপতির প্যাড ব্যবহার করে কাটোয়ার মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়েছেন দেবাশিসবাবু।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আমোদপুর-কাটোয়া ন্যারোগেজ লাইনের ট্রেনে ডাকাতির সময়ে এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। সেই রাতেই ওই মহিলাকে নিয়ে কাটোয়া রেলপুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে যান বিকাশবাবু। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এই ঘটনায় রাজনৈতিক রং দেখেছিলেন ও ‘সাজানো’ বলে দাবি করেছিলেন। এর পরেই বিকাশবাবু দলীয় নেতৃত্বের কোপে পড়েন। তৃণমূল নেতারা জানিয়ে দেন, বিকাশবাবু দলের কোনও পদে নেই। এর পরেই দলের ব্লক সভাপতি হিসেবে উঠে আসে দেবাশিসবাবুর নাম। যদিও দু’জনের কারও কাছেই এ ব্যাপারে কোনও নিয়োগপত্র নেই। পুরোটাই চলছে মৌখিক ভাবে।
বিকাশবাবুর ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা শ্যামল মুখোপাধ্যায় বলেন, “কে সভাপতি, পঞ্চায়েত ভোটের আগে জানতে পারলে আমাদের ভাল হয়।” মৌগ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “কেতুগ্রামে ২ ব্লকে দল অভিভাবকহীন ভাবে চলছে।” দেবাশিসবাবু বলেন, “আমি দলীয় নির্দেশ পালন করছি। যা বলার দলের নেতারাই বলবেন।” বিকাশবাবুরও একই মন্তব্য, “দলই যা বলার বলবে।”
কেতুগ্রামে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অনুব্রতবাবুর বক্তব্য, “ওখানে একটা সমস্যা রয়েছে। দু’জনকে নিয়ে বসে সভাপতি ঠিক করা হবে।” জেলা তৃণমূলের সদস্য বনানী মাঝি অবশ্য বলছেন, “দলের নেতা মুকুল রায়, স্বপন দেবনাথেরা আমাকে ওই ব্লকের সভাপতি হিসেবে দেবাশিস মণ্ডলের নামই জানিয়েছেন। অন্য কেউ নিজেকে সভাপতি বলে প্রচার করলে শৃঙ্খলাভঙ্গ করছেন।” দলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথও বলেন, “বিকাশ আমাদের একনিষ্ঠ কর্মী। তবে দেবাশিসকেই ওই ব্লকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” কেউ দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। |