মুখ্যমন্ত্রী ধাক্কা দিতেই ঘুম ছুটে গেল পুরসভার, দফায় দফায় বৈঠক
লরির জঞ্জাল মমতার গাড়িতে, সামাল রব
তাঁর গাড়ির সামনেই যাচ্ছিল পুরসভার একটি জঞ্জাল-ভর্তি লরি। ঢাকা নেই। বাইপাসের হাওয়ায় লরির ময়লা উড়ে এসে পড়ল মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িতে। গায়েই পড়ত। নেহাত গাড়ির ভিতরে ছিলেন তিনি। তাই নোংরা আবর্জনা থেকে কোনও ক্রমে বেঁচেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে সায়েন্স সিটির সামনে এই ঘটনায় রীতিমতো তোলপাড় পুলিশ ও প্রশাসন মহল। ভবিষ্যতে ওই ঘটনার পুনরাবৃতি রুখতে বুধবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকে পুর-প্রশাসন।
আদালতের ফরমান, ঢাকা দিয়ে ঘুরতে হবে জঞ্জালের লরিকে। ১৩ বছর আগে এ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সুভাষবাবু বলেন, “কলকাতা হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, শহরের রাস্তায় খোলা অবস্থায় জঞ্জাল বহন করা যাবে না।” তিনি জানান, আদালত ওই রায় দেওয়ার পরে কিছু দিন তা মেনে চলা হয়েছিল। তার পর থেকে ফের ঢাকা না দিয়েই চলাচল করে ময়লা ফেলার লরি। আদালতের নির্দেশের তোয়াক্কা না করে কী ভাবে চলে ওই সব গাড়ি, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। যে লরি থেকে ওই ময়লা পড়েছে, সেটির চালক-সহ গাড়িটিকে আটকে রেখেছে পুলিশ।
শুধু আদালত অবমাননা নয়, খোলা লরিতে ময়লা নিয়ে যাওয়ার ঘটনা আকছার ঘটলেও পুর-প্রশাসনের কোনও ভ্রুক্ষেপ ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। পথচারীরা জানিয়েছেন, এমন প্রায়ই হয়। পুরসভা ও পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয় না। এ বার মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘটনার মুখোমুখি হওয়ায় টনক নড়েছে তাঁদের।
জঞ্জাল বহনকারী সেই লরি। বুধবার।—নিজস্ব চিত্র
কী হয়েছিল সে দিন?
পুলিশ সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ সফরের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাচ্ছিলেন দমদম বিমানবন্দরের দিকে। হঠাত্‌ই জঞ্জাল-ভর্তি একটি লরি থেকে নোংরা আবর্জনা পড়তে থাকে তাঁর গাড়ির উপরে। আকস্মিক ওই ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন মুখ্যমন্ত্রী। তত্‌ক্ষণাত্‌ পুলিশকে নির্দেশ দেন গাড়িটি পাকড়াও করার জন্য। তখন মুহূর্তেই মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে থাকা পুলিশ অফিসারেরা লরিটি আটকে রাখার নির্দেশ দেন। এ দিকে, বিষয়টি নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন তিনি।
পুরসভা সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর গাড়িতেই ওই কাণ্ড ঘটায় রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে যায় পুর-প্রশাসন। ঘটনার পরেই পুরো বিষয়টি জানতে ওই এলাকায় যান পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের কৈফিয়ত তলব হয়। মঙ্গলবার রাতেই এ নিয়ে জঞ্জাল অপসারণ দফতরের অফিসারদের সঙ্গেও কথা বলেন পুর-কমিশনার। তার পরেই পুরসভায় জঞ্জাল সরানোর কাজে নিযুক্ত সব ঠিকাদারদের ডেকে পাঠানো হয়।
কেন ওই ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে বুধবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকে পুর-প্রশাসন। বৈঠকে হাজির ছিলেন পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার, পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ, কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সুপ্রতিম সরকার, ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক-সহ জঞ্জাল অপসারণ দফতরের পদস্থ অফিসারেরা। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পার্ক সার্কাস থেকে পরমা আইল্যান্ড পর্যন্ত কানেক্টরে কোনও ময়লার গাড়ি চলাচল করবে না।
পুরসভার এক পদস্থ অফিসার জানিয়েছেন, ময়লা ফেলার জন্য ভাড়া করা যে সব লরি পুরসভায় খাটানো হয়, সেগুলির অনেকেরই কাগজপত্র ঠিকঠাক নেই। এ দিনের বৈঠকে ভাড়া করা গাড়ির কাগজপত্র ঠিক আছে কি না, তা জানতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতের নির্দেশ না মেনে খোলা লরিতে আবর্জনা নিয়ে চলাচল করা সত্ত্বেও পুর-অফিসারেরা কোনও ব্যবস্থা নেননি কেন, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ নিয়ে প্রতিনিয়ত নজরদারি করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.