আয়োজন সম্পূণ। আত্মীয় নিমন্ত্রিতরা অনেকেই এসেছেন। অপেক্ষা বর আসার। আচমকা হাজির প্রশাসনের কর্তারা। পাত্রী, ক্লাস নাইনের ছাত্রী তাঁদের কাছে পড়া চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানায়। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের সাহায্য নিয়ে পাত্রীর অভিভাবকদের বোঝান প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের হস্তক্ষেপে বর এবং তার সঙ্গীদের ফিরিয়ে দিয়ে নবালিকার বিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হল।
সোমবার রাতে মেখলিগঞ্জের চ্যাংরাবান্ধায় ওই ঘটনা ঘটেছে। পাত্রী তো বটেই, স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন মেখলিগঞ্জের মহকুমাশাসক জ্যোতির্ময় তাঁতিও। তিনি বলেন, “নবম শ্রেণীর পড়ুয়া ওই ছাত্রীকে বিয়ে দেওয়ার খবর পেয়েই তা বন্ধ করার চেষ্টা হয়। ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আমি ঘটনাস্থলে যাই। পাত্রীও জানায়, সে পড়া চালিয়ে যেতে চায়। কোনও ক্রমে অভিভাবকদের বুঝিয়ে বিয়ে আটকানো হয়। বর পক্ষকেও খবর পাঠিয়ে ফিরে যেতে বলা হয়।
চ্যাংরাবান্ধা পঞ্চায়েতের সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম গোপালেরহাটের বাসিন্দা আলিমা বেওয়া। পরিচারিকার কাজ করে কোনও ক্রমে সংসার চালান ওই বিধবা মহিলা। তিনি দুই মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। চৌরঙ্গী হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী বছর পনেরোর ছোট মেয়ের বিয়ে দেওয়া নিয়ে তিনি চিন্তায় ছিলেন। পরিচিতদের সূত্র ধরে ময়নাগুড়ি নয়াবন্দর এলাকায় বাসিন্দা মনতাজ আলির বছর কুড়ির ছেলে পেশায় রাজমিস্ত্রি রবিউল ইসলামের সঙ্গে বিয়ের আলোচনা শুরু করেন তারা। পাত্রপক্ষ দাবি নেই জানানোয় হাতে চাঁদ পান পাত্রীর পরিজনেরা। মঙ্গলবার রাতে বিয়ের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়। সমস্ত আয়োজনও হয়ে যায়। বর এবং তার সঙ্গীরা চ্যাংরাবান্ধার দিকে রওনা হয়ে প্রায় অর্ধেক রাস্তা চলেও আসেন। তার মধ্যেই মেখলিগঞ্জের বিডিও অনির্বাণ দত্ত-সহ ব্লক প্রশাসনের কয়েকজন সেখানে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করাতে উদ্যোগী হন। পরে হাজির হন মহকুমাশাসক। প্রশাসনের চেষ্টায় পাত্রীপক্ষ বিয়ে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন মেখলিগঞ্জের বিডিও বলেন পণের চাহিদা না থাকাতেও পাত্রীপক্ষ বিয়েতে রাজী হয়। মেয়েটি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আগ্রহের কথা জানানোয় ওই ব্যাপারে ওকে সমস্ত সাহায্য করা হবে। বিয়ের আয়োজনের খরচ বাবদ ছাত্রীর পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” |