নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
নির্ধারিত সময়ের প্রায় বছরখানেক পরে দুর্গাপুর হাসপাতালে চালু হল ‘সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ)। মঙ্গলবার এই বিভাগের সঙ্গে উদ্বোধন হল ৪০ শয্যার নতুন মহিলা ওয়ার্ডেরও।
জেলা ও কলকাতার হাসপাতালগুলিতে ২০১১ সালে এক সঙ্গে বহু শিশুর মৃত্যুর পরে মহকুমাস্তরের হাসপাতালগুলিতে এসএনসিইউ চালুর পরিকল্পনা নেয় স্বাস্থ্য দফতর। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের জন্য প্রাথমিক ভাবে বরাদ্দ হয় ৭৫ লক্ষ টাকা। পরে আরও ৭৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। বিধানসভা ভোট চলে আসায় দরপত্রের প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় কাজ শুরু হতে দেরি হয়। শেষ পর্যন্ত সে বছর ১০ অক্টোবর দরপত্র চূড়ান্ত হয়। কিন্তু পূর্ত দফতর অভিযোগ তোলে, এসএনসিইউ গড়ার জন্য হাসপাতালের মূল ভবনের পাশে যে জায়গা নির্দিষ্ট হয়েছে, সেখানে বেশ কয়েকটি গাছ আছে। সেই গাছ না কাটা হলে নির্মাণ শুরু করা যাবে না। গাছগুলির মালিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কাজেই সেগুলি কাটায় উদ্যোগী হতে হবে তাঁদেরই। |
মঙ্গলবার দুর্গাপুর হাসপাতালে।— নিজস্ব চিত্র। |
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবার জানিয়ে দেন জানান, বন দফতরের সহায়তায় কোন কোন গাছ কাটা হবে তা চূড়ান্ত করে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। গাছ কাটবে পূর্ত দফতরই। এ ভাবে দু’তরফের টানাপোড়েনে নতুন ভবন নির্মাণ শুরুর কাজ পিছোতে থাকে। অবশেষে মহকুমাশাসক আয়েষা রানির উদ্যোগে সমস্যা মেটে। নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক মাস পরে কাজ শুরু হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ত দফতর প্রথমে জানায়, ২০১২ সালের ৩১ মার্চ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাবে। পরে এই সময়সীমা ১ জুলাই অবধি পিছিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার মধ্যেও কাজ শেষ হয়নি। জুলাইয়ে সাংসদ তথা চিকিত্সক রত্না দে নাগের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ দল হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন। রোগী ও চিকিত্সকদের একাংশ হাসপাতালে দ্রুত এসএনসিইউ চালু করার আর্জি জানান। সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইউনিট চালুর পরামর্শ দেন রত্নাদেবী। কিন্তু তা-ও করা যায়নি। অবশেষে মঙ্গলবার তা চালু হল। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এ দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি আসতে পারেননি। অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা, মহকুমাশাসক আয়েষা রানি, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মণ্ডল, এডিডিএ-র চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, শহরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়, হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাস প্রমুখ। জেলাশাসকের দাবি, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যা পরিকাঠামো থাকার কথা, তার ৯০ শতাংশই এই হাসপাতালে রয়েছে। অপারেশন থিয়েটারের আধুনিকীকরণের জন্য হাসপাতাল সুপারকে অর্থের সংস্থানের আশ্বাস দেন তিনি। অকারণে রোগীদের ‘রেফার’ না করার পরামর্শও দেন জেলাশাসক। এডিডিএ-র চেয়ারম্যান নিখিলবাবুরও দাবি, “আগের থেকে এই হাসপাতালের পরিকাঠামো অনেক ভাল হয়েছে।” তিনি জানান, তাঁর বিধায়ক তহবিল থেকে হাসপাতালে ডায়ালিসিস ইউনিট গড়ার কাজ চলছে। হাসপাতালের চিকিত্সক মিহির নন্দী বলেন, “এসএনসিইউ চালু হওয়ায় এক ধাক্কায় অনেকটা এগিয়ে গেল এই হাসপাতাল।” |