নিরাপত্তার বেড়াজাল এড়িয়ে পাহাড়ি জাতীয় সড়ক ধরে ঘণ্টাখানেক হেঁটে স্থানীয় মানুষজনের সুখ-দুঃখের খবর নিয়ে মন জয়ের চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার বিকেলে মংপংয়ের বনবাংলো লাগোয়া এলাকায় এমনই দৃশ্য দেখা গেল। বেলা তিনটেয় বাংলোয় ঢোকার পরে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির জেলাশাসক, ডিএফও ও অন্য প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন তিনি। তার পরে ঘণ্টাখানেক ধরে ডুয়ার্সের পাহাড়ি জনপদে হেঁটে বাসিন্দাদের সঙ্গে নানা কথাবার্তা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সন্ধ্যার আগে ফের বাংলোয় ফেরা। সংক্ষেপে এটাই হল মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের প্রথম দিনের ছবি। মঙ্গলবার দুপুরে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে, সেবক হয়ে মংপঙে আসার পথে বারকয়েক কনভয় থামিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেবক তিস্তা সেতুর কাছে গাড়ি থামিয়ে বাঁদরদের বিস্কুটও খাওয়ান তিনি। মংপং বনবাংলোয় ঢুকে মিনিট চল্লিশ পরেই বেরিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। সামনের ফাঁকা মাঠে হাঁটতে শুরু করে দেন। তাঁকে ঘিরে নিরাপত্তার বেষ্টনি। হঠাৎই নিরাপত্তা কর্মীদের যাবতীয় বেড়া ভেঙে পাশ দিয়ে যাওয়া ব্যস্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে উঠে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। হতচকিত নিরাপত্তা কর্মীদের দিকে তাকিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “যে দিকে দু চোখ যায়, যে দিকে যেতে ইচ্ছে হয়, সে দিকেই যাব।” এর পরেই জঙ্গলঘেরা জাতীয় সড়ক দিয়ে হন হন করে হাঁটতে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। চলতে চলতে দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের কাছে জানতে চান, জঙ্গলে কারা থাকেন, সেখানে একশো দিনের কাজ হয় কিনা এমন নানা তথ্য। মংপঙে পর্যটন বিকাশের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। প্রায় দেড় কিলোমিটার হাঁটার পরে তিনি নেমে পড়েন জাতীয় সড়কের পাশে মাঠে। ঢুকে পড়েন রাস্তার পাশের একটি বাড়িতে। |
বাড়ির মালিক পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক রাজু সুব্বার কাছে এলাকার সমস্যা জানতে চান। ডেকে পাঠান তাঁর স্ত্রীকেও। রাজু ও তাঁর স্ত্রী সারদা মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, “ম্যাডাম এখানে পানীয় জলের ভীষণ কষ্ট।” মুখ্যমন্ত্রীর উত্তর, “দেখছি কী করা যায়!” মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, “এখানে হাইস্কুল আছে?” নেই শুনে মুখ্যমন্ত্রী তা করার আশ্বাস দেন।
সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি ঢুকে পড়েন পাশের একটি দোকানে। চকলেট কিনে এলাকার কচিকাঁচাদের ডেকে বিতরণ করতে থাকেন। দুধ দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ওই চকলেট তৈরি করেন। সে কথা শুনে পরে মাদার ডেয়ারি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চকলেট বিপণনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। দোকান মালিক মণিকুমার প্রধান বলেন, “জলের সমস্যার কথা বলেছি। আশা করি কাজ হবে।”
মংপং পুলিশ ফাঁড়ির পরিস্থিতিও ঘুরে দেখেন তিনি। পাশের মংপং বাজারের সামনে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলেন। সেখানে শিশুদের কোলে তুলে আদরও করেন। আজ বুধবার ডুয়ার্সের চালসা লাগোয়া টিয়াবনে সরকারি সভা মঞ্চ থেকে জেলা পুলিশের আয়োজিত তিরন্দাজি প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ, পাট্টা বিলি সহ একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের সুবিধে বিলি করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বাজারের ভিড়ে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, “আগামীকাল অনুষ্ঠানে সকলে আসবেন।” |