মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করা হবে কি না তা নিয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অন্দরেই তুমুল বিতর্ক দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে কালিম্পঙের মংপং বনবাংলোয় পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। মোর্চার অন্দরের খবর, এক পক্ষের মত, সৌজন্যের খাতিরেই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের সঙ্গে দেখা করা উচিত। কিন্তু, দলের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ তাতে রাজি নন। ফলে, সফরের প্রথম দিন মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে পারেননি মোর্চার কোনও জনপ্রতিনিধি। আজ, বুধবার মালবাজারের লাটাগুড়িতে সরকারি অনুষ্ঠানে নানা প্রকল্পের সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সে দিনই শিলিগুড়ি ফিরে পরদিন কলকাতা ফেরার কথা তাঁর। |
মুখ্যমন্ত্রী গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) এলাকায় রয়েছেন বলে মোর্চার তাঁকে স্বাগত জানানো উচিত বলে দলের জনপ্রতিনিধিদের অনেকে মত প্রকাশ করেন। সেই মতো সরকারের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়। সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, সৌজন্য সাক্ষাৎ চাইলে তাঁরা আসতেই পারেন। মোর্চা নেতাদের তরফে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়। কিন্তু, আলোচনার পরে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানান খোদ মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। দলীয় সূত্রের খবর, শীঘ্রই কেন্দ্রের তরফে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বলে আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না করে রাজ্যের উপরে পাল্টা চাপ বজায় রাখতে চাইছেন গুরুঙ্গ।
এই ঘটনায় কিছুটা হতাশ মোর্চার প্রথম সারির একাধিক নেতা ও অনুগামীরা। তাঁরা ভেবেছিলেন, আলোচনায় অনেক সমস্যা মেটানোর রাস্তা খুলত। এ দিন বাগডোগরায় মুখ্যমন্ত্রীও পাহাড়কে ‘হাসিখুশি’ রাখতে সব সাহায্য করা হবে বলে বার্তা দেন। ওই নেতাদের কয়েকজন জানান, দু’দিন আগে পর্যন্তও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে নিমরাজি ছিলেন গুরুঙ্গ। তবে সোমবার কালিম্পঙে সিআরপি মোতায়েনের পরেই বেঁকে বসেন তিনি। তবে কেউই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি শুধু বলেন, “শুধু বলতে পারি, আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি না। দলের সিদ্ধান্ত এটাই।” |
২৯ জানুয়ারি দার্জিলিঙের অনুষ্ঠানে মোর্চা সমর্থকেরা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে স্লোগান দিলে মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ বলে তা থামান। ক’দিন পরেই লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ গড়া হয়। তা নিয়ে মোর্চা-সরকার বিরোধ বাড়ে। অশান্তি এড়াতে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন। মোর্চা নেতারাও সুর নরম করে যাবতীয় বন্ধ, আন্দোলন স্থগিত রাখতে ‘বাধ্য’ হন।
এই অবস্থায়, এ দিন বাগডোগরায় মুখ্যমন্ত্রী মোর্চা নেতাদের কার্যত সতর্কও করেন। তাঁর কথায়, “পাহাড়ে জায়গা রয়েছে, যেখানে মানুষ যেতে চাইছেন। এখন কেউ যদি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে সামিল হন, তা হলে মানুষ তা ভাল ভাবে নেবেন না। দার্জিলিং দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। ফলে মানুষ কুলু-মানালি, সিমলাতে যান। অনেকে সিকিমেও যান। সেগুলিও সুন্দর। মানুষ বেশি করে দার্জিলিংয়ে আসুক, বরফ-কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করুক এটা আমি চাই।” |