নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদনপত্র পূরণ করেননি তাঁরা। পরীক্ষায় বসতে পারার কথাই নয়। কিন্তু কড়া মনোভাব নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদলাতে হল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে। আর পরীক্ষার আগের দিন, মঙ্গলবার প্রায় দেড় হাজার ছাত্রছাত্রীর আবেদনপত্র পূরণ করিয়ে তাঁদের অ্যাডমিট কার্ড দিতে গিয়ে বিশৃঙ্খলার চূড়ান্ত হল সংসদের অফিসে।
আজ, বুধবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। পরীক্ষার আগের দিনও অ্যাডমিট কাডর্র্ হাতে না-পেয়ে বহু পড়ুয়া ভিড় করেন সল্টলেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কেন্দ্রীয় দফতরে। কখন তাঁরা অ্যাডমিট কার্ড পাবেন, কখন ঘরে ফিরে বুধবার পরীক্ষায় বসবেন, তা নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন। এ দিনও যাঁদের হাতে অ্যাডমিট কার্ড পৌঁছয়নি, তাঁদের কার্ডগুলি ই-মেলে সংসদের আঞ্চলিক দফতরে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংসদ-কর্তৃপক্ষ। আজ, পরীক্ষার দিন সকালে সেখান থেকেই তা সংগ্রহ করতে হবে।
কিন্তু এই অবস্থা হল কেন? গত বছরও সময়মতো আবেদনপত্র পূরণ করতে না-পারা অনেক পড়ুয়াকে পরীক্ষার আগের সন্ধ্যায় অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়েছিল। এ বার সেই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে সংসদ সিদ্ধান্ত নেয়, ৯ জানুয়ারির পরে আর আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে না। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে আবেদনপত্র পূরণ করতে পারেননি, এমন পড়ুয়ারা সংসদ-কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কিছু দিন ধরেই আবেদন-নিবেদন করছিলেন। সংসদ সূত্রের খবর, স্কুলশিক্ষা দফতর এই ব্যাপারে সংসদের কড়া মনোভাব সমর্থন করেছিল। এই পরিস্থিতিতে বহু পড়ুয়া বা তাঁদের অভিভাবকেরা শাসক দল তৃণমূলের নেতাদের কাছে দরবার শুরু করেন। বিষয়টি পৌঁছয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। শেষ পর্যন্ত তাঁর নির্দেশেই সংসদকে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়।
তার জেরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই সংসদের দফতরে শত শত ছাত্রছাত্রীর ভিড় করেন। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের সঙ্গে ছিলেন প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ছিলেন উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরাও। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “পরীক্ষার আবেদনপত্র পূরণের শেষ তারিখ নির্দিষ্ট ছিল। কিছু পড়ুয়া হয়তো নানা কারণে সেই সময়ের মধ্যে আবেদনপত্র পূরণ করতে পারেননি। তাঁদের কথা জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী সকলকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দিতে বলেন। শিক্ষা দফতরও এর পরে তৎপর হয়ে সংসদকে ব্যবস্থা নিতে বলে।”
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ তো স্বশাসিত সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রী তার সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারেন কী ভাবে?
সংসদ-কর্তাদের একাংশের মতে, সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। সে-দিকে তাকিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত।
পরীক্ষা-প্রক্রিয়া অবশ্য তত ক্ষণে প্রায় শেষ। তা সত্ত্বেও পরীক্ষার আগের দিন রাতে পড়ুয়াদের দিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করিয়ে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয় সংসদকে। তাদের হিসেব, এ-রকম পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। তবে অন্য সূত্রের খবর, সংখ্যাটা বাড়তে পারে। বহু ছাত্রছাত্রী বুধবার সকালেও দরবার করতে পারেন পরীক্ষায় বসার জন্য।
সিদ্ধান্ত বদল কেন? সংসদ-সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কয়েক দিন ধরে ছাত্রছাত্রী এবং বিভিন্ন স্কুল-কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্র পূরণ করতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষার আগের দিন পড়ুয়াদের আবেদনপত্র পূরণের সুযোগ এবং অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়েছে।”
সংসদ-কর্তাদের একাংশ অবশ্য ব্যাপারটাকে ভাল চোখে দেখছেন না। এতে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে ব্যবস্থাপনার সমস্যা হতে পারে। কারণ কোন কেন্দ্রে কত প্রশ্ন, কত খাতা লাগবে, কত পরীক্ষার্থীর বসার ব্যবস্থা করতে হবে সবই আগে স্থির হয়ে গিয়েছে। পরীক্ষার আগের রাতে অ্যাডমিট কার্ড পাওয়া বা না-পাওয়া পরীক্ষার্থীদের নিয়ে তাই কোনও কোনও পরীক্ষা কেন্দ্রে সমস্যা হতে পারে।
গত বছর স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার ব্যবস্থাপনায় বিভ্রাট হয়েছিল। সম্প্রতি প্রশ্ন ফাঁসের জেরে স্থগিত করে দিতে হয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা। উচ্চ মাধ্যমিকও শুরুর আগেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়াল। |