পচনন্দা রাজ্যেই, সশস্ত্র পুলিশের শীর্ষে
শেষ পর্যন্ত রাজ্য ছেড়ে যাওয়া হচ্ছে না প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দার। আপাতত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অধীনেই তাঁকে কাজ করতে হবে। তবে রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তার (ডিরেক্টর, সিকিউরিটি) পদে তাঁকে যোগ দিতে হচ্ছে না। ওই পদটি যে তাঁর পছন্দ নয়, তা ঠারেঠোরে জানিয়ে দিয়েছিলেন পচনন্দা। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, তাঁকে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল করা হচ্ছে।
১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের দু’দিন পরেই পচনন্দাকে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি ভাবে এর কারণ হিসেবে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে বিলম্বকে দায়ী করা হলেও পুলিশ ও প্রশাসনিক মহলের অনেকেরই মত, পুলিশকর্মী খুনের পরে রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে পচনন্দার নিরপেক্ষ প্রশাসক হয়ে ওঠার চেষ্টাকে ভাল চোখে দেখেননি শাসক দলের কর্তারা। তাঁরা কংগ্রেস নেতা মোক্তারকে ধরার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। পচনন্দা কিন্তু বলছিলেন, ওই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নাকে গ্রেফতার করা অনেক বেশি জরুরি।
পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পরেই পচনন্দা তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন, রাজ্যের নিরাপত্তা অধিকর্তার পদটি তাঁর পছন্দ নয়। সে জন্য ওই পদে যোগ না দিয়ে স্বরাষ্ট্রসচিবকে দরখাস্ত দিয়ে দু’মাসের ছুটিতে চলে যান তিনি। সেই সময় রাজ্য ছেড়েই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পচনন্দা। ঘনিষ্ঠদের বলেছিলেন, যে ভাবে তাঁকে সরানো হয়েছে, তাতে তিনি অপমানিত বোধ করছেন। তাই এই সরকারের অধীনে আর কাজ করতে চান না। কেন্দ্রীয় সরকারের আধা সামরিক বাহিনীর পদ পেতে সমস্যা হবে না বলেও তখন ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন তিনি।
তা হলে পচনন্দার দিল্লি যাওয়া আটকাল কেন? পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, পচনন্দা ২০০৯ সাল থেকে এডিজি পদমর্যাদার অফিসার। কিন্তু সেই পদমর্যাদার অফিসার হিসেবে তিনি এখনও কেন্দ্রীয় সরকারের তালিকাভুক্ত অর্থাৎ ‘এমপ্যানেল্ড’ হননি। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ কোনও আধা সামরিক বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থায় যোগ দিতে হলে তাঁকে আইজি হিসেবেই যোগ দিতে হতো। যেটা তাঁর পক্ষে সম্মানের হত না। তাই, আপাতত পচনন্দা এই রাজ্যেই থেকে গিয়ে এডিজি হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর।
সশস্ত্র পুলিশের এডিজি পদে এলে ১৯৮৩ ব্যাচের আইপিএস পচনন্দা ১৯৮৫ ব্যাচের আইপিএস কুন্দনলাল টামটার স্থলাভিষিক্ত হবেন। টামটাকে কাউন্টার ইনসারজেন্সি ফোর্সের (সিআইএফ) এডিজি করার প্রস্তাব রয়েছে। নতুন ওই পদ তৈরির প্রক্রিয়াশুরু হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারির যে নির্দেশিকায় পুলিশের উপরতলায় রদবদল করা হয়েছিল, তাতে সৌমেন মিত্রকে কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার(২) থেকে সরিয়ে রাজ্য পুলিশের আইজি (আইনশৃঙ্খলা) করা হলেও এ দিনের নির্দেশিকায় তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি কলকাতা পুলিশেই থাকছেন। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, এই রাজ্যেই থেকে যেতে হচ্ছে বুঝে শাসক দলের একাংশকে তিনি বলেন, প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের পক্ষে নিরাপত্তা অধিকর্তার পদ আদৌ মানানসই নয়। কারণ, নিরাপত্তা অধিকর্তা মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা দেখভাল করেন বলে তাঁকে কালীঘাট থানার সহযোগিতা নিতে হয় এবং মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে মাঝেমধ্যে বসে থাকতে হয়। দু’দিন আগেও যিনি পুলিশ কমিশনার ছিলেন, তাঁর পক্ষে ওই কাজ অসম্মানের। অন্য দিকে, তৃণমূলের একাংশও শীর্ষ নেতৃত্বকে বোঝান, গার্ডেনরিচ-কাণ্ড ছাড়া পচনন্দা কখনও দল ও সরকারের অবাধ্য হননি। তাঁর দিকটিও বিবেচনা করা দরকার।
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “কলকাতার সিপি-র মতো ভারী না হলেও রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ প্রধানের পদও সম্মানের। পুলিশ কমিশনার পদ থেকে অপসারণের পর নিজেকে একটু আড়ালে রাখাটাও পচনন্দার পক্ষে জরুরি। যেটা এই পদে সম্ভব। কিন্তু নিরাপত্তা অধিকর্তা হলে অনেক সময়েই মুখ্যমন্ত্রীর পাশে থাকতে হয়।” হয়তো সমাপতন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ২০১১ এর মার্চে, বিধানসভা নির্বাচনের আগে, রাতারাতি গৌতমমোহন চক্রবর্তীকে সরিয়ে রঞ্জিতকুমার পচনন্দাকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদে বসানো হয়েছিল। বর্তমানে রাজ্য ট্রাফিক পুলিশের ডিজি গৌতমবাবুকেও তখন রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের প্রধান করা হয়েছিল। তবে গৌতমবাবুর তত দিনে পদোন্নতি হয়ে যাওয়ায় তিনি ডিজি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.