পঞ্চায়েত ভোট সংঘাত
তৃণমূলকে বিঁধল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড, রাজ্য অনড়ই
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ও সরকারের বিরোধের জল এ বার দিল্লি পর্যন্ত গড়াল। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডেকে আক্রমণের জন্য মঙ্গলবার কড়া ভাষায় মমতা তথা তৃণমূলের সমালোচনা করা হল কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে। নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষকে নজিরবিহীন ভাবে আক্রমণ করায় বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার মাত্রা যতই বাড়ুক, রাজ্য সরকার অবশ্য তাদের অবস্থানে অনড়। কমিশনের মতামতের জন্য আর অপেক্ষা না-করে রাজ্য সরকার তাদের পছন্দমতো দিনে পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেবে বলে এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
দিল্লিতে এআইসিসি-র মুখপাত্র রেণুকা চৌধুরী এ দিন দলীয় মঞ্চ থেকে বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে আক্রমণের নতুন নতুন রাস্তা খুঁজে বার করছেন! আমি জানি না, এর পরে ওঁর আক্রমণের লক্ষ্য কে হবে! তবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের এ বিষয়ে কী ভাবে প্রতিক্রিয়া হয়, তার দিকে আমরা নজর রাখছি।” মীরাদেবীর সম্পর্কে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের মন্তব্যের ইতিমধ্যেই সমালোচনা করেছেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফেও এ বার এই সংঘাত নিয়ে মুখ খোলা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
মমতার সরকার অবশ্য নিজের পথেই এগোচ্ছে। বিধানসভায় বাজেট বিতর্ক শেষ হচ্ছে শুক্রবার। তার পরেই দু’দফায় পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট জানিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠাবে রাজ্য। এপ্রিলের শেষ দিকে দু’দফায় ভোট চেয়ে এর আগে যে চিঠি কমিশনকে দেওয়া হয়েছিল, সেই বক্তব্যই ফের জানানোর কথা সরকারের তরফে। কিন্তু এ বারও যদি কমিশন সেই মত না মানে? বিধানসভার লবিতে এ দিন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রতবাবুর জবাব, “কোনও যদি-কিন্তুর জায়গা আইনত নেই! আমরা চিঠি পাঠিয়ে কমিশনকে ভোটের তারিখ জানাব। কমিশন মানুক বা না মানুক, পুনর্বিবেচনা আর্জি জানাক বা না জানাক, কয়েক দিন পরে রাজ্যই ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেবে। আইন মোতাবেক, তার পরদিন বা পরের পরের দিন কমিশনকেও সেই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে।”
পঞ্চায়েতমন্ত্রীর যুক্তি, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে স্বাধীন ভাবে চলার ক্ষমতা থাকলে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাদের এত বার চিঠি চালাচালি করতে হত না! কমিশন এত দিনে পদক্ষেপ করতে পারত। দেশের বা কোনও রাজ্যের ভোট নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন কখনও কেন্দ্রীয় বা কোনও রাজ্য সরকারের সঙ্গে চিঠি চালাচালি করে না। কারণ, আইনের বলে সে ব্যাপারে যাবতীয় ক্ষমতা কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকেই দেওয়া আছে। তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কোনও সংঘাত নেই বলেও সুব্রতবাবু দাবি করেছেন।
রাজ্য সরকারের এই অবস্থানের প্রেক্ষিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে এ দিন অবশ্য আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে কমিশন সূত্রের বক্তব্য, সরকারের চিঠি হাতে পাওয়ার পরেই তারা তাদের করণীয় ঠিক করবে। কারণ, রাজ্য সরকারের বক্তব্য কত বার কমিশন খারিজ করতে পারে, তারও নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আইনে নেই।
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধী শিবিরের আক্রমণ অব্যাহত। রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, “মুকুল রায়ও সংবিধান বানাননি। আমিও বানাইনি। সংবিধানে যাঁকে যা অধিকার দেওয়া হয়েছে, তাঁকে তো সেই অনুযায়ী কাজ করতে দিতে হবে!” আক্রমণ শানিয়েছে সিপিএম-ও। দিল্লিতে দলের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্য, “যিনিই তৃণমূলের কথা শুনছেন না, তাঁকেই তৃণমূল নেতৃত্ব সিপিএমের লোক বলে আখ্যা দিয়ে দিচ্ছে! কিন্তু এটা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অধিকারের প্রশ্ন।” সিপিএমের লোকসভার নেতা বাসুদেব আচারিয়ার যুক্তি, “মীরাদেবীকে বাম সরকার নিয়োগ করেছিল, এ কথা ঠিক। কিন্তু এটাও ঠিক, তাঁর আমলে তৃণমূল একাধিক নির্বাচন জিতেছে।” মুকুলবাবুর মন্তব্যের প্রসঙ্গে এ দিনই বর্ধমানে কমিউনিস্ট নেতা সৈয়দ মহম্মদ সাহেদুল্লাহের জন্ম শতর্বাষিকী পালনের অনুষ্ঠানে রাজ্য সিপিএমের প্রবীণ নেতা বিনয় কোঙারের কটাক্ষ, “নিতান্ত নির্বোধ না-হলে কেউ নির্বাচন কমিশনারের সামলোচনা করে না! নির্বাচন কমিশনার বামেদের লোক বলে যে প্রলাপ মুকুলবাবু বকেছেন, তার কোনও ভিত্তি নেই। আসলে এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল হারের ভয় পাচ্ছে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.