বেহাল জেটিঘাটে ইষ্টনাম জপতে জপতেই চলে ওঠানামা
ক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকার প্রত্যন্ত এলাকা পাথরপ্রতিমা। এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রধানত জলপথের উপরেই নির্ভরশীল। স্কুলে কলেজের পড়ুয়া থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন দফতরের চাকুরে থেকে সাধারণ নিত্যযাত্রী সকলকেই নদী পারাপর করে গন্তব্যে যাতায়াত করতে হয়। যোগাযোগের জন্য জলপথ এখানে একমাত্র উপায় হলেও দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এই ব্লকে বিভিন্ন নদীর জেটিঘাটগুলির অবস্থা খুবই শোচনীয়। স্থানীয় বাসিন্দারাও বলতে পারেন না শেষ কবে জেটিঘাটগুলির সংস্কার হয়েছে। ফলে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় দিনে-রাতে জীবন হাতে করেই নদী পারাপার করেন ব্লকের বাসিন্দারা।
পাথরপ্রতিমা ব্লকের মধ্যে রয়েছে পনেরোটি পঞ্চায়েত। সেগুলি হল, রামগঙ্গা, দিগম্বরপুর, দক্ষিণ রায়পুর, দক্ষিণ গঙ্গাধরপুর, দক্ষিণ শ্রীনারায়ণপুর-পূর্ণচন্দ্রপুর, লক্ষ্মী জনার্দনপুর, হেড়ম্বগোপালপুর, অচিন্ত্যনগর, শ্রীধরনগর, বনশ্যামপুর, ব্রজবল্লভপুর, জি প্লট, গোপালনগর, দুর্বাচটি ও পাথরপ্রতিমা। এগুলির মধ্যে প্রথম পাঁচটি বাদে বাকি ১০টি পঞ্চায়েত এলাকাকে ঘিরে রয়েছে নদী ও বঙ্গোপসাগর। এই সব দ্বীপ এলাকার মানুষকে কাকদ্বীপ বা ডায়মন্ড হারবার মহকুমায় আসতে হলে নৌকা বা ভুটভুটিই ভরসা। ওই সব দ্বীপ এলাকার সঙ্গে পাথরপ্রতিমা বা রামগঙ্গা বাজারে যাতায়াতের জন্য প্রায় ৩৫টি ফেরিঘাট রয়েছে। এর অনেকগুলি পাকা, আবার অনেকগুলিই কাঠের তৈরি।
রামগঙ্গা জেটিঘাটে জলে ক্ষয়ে গিয়ে বিপজ্জনক কংক্রিটের স্তম্ভ।
সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে বহু বছর আগে এগুলি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বছরের পর বছর সেগুলি নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় ঘাটগুলির অবস্থায় বেশ খারাপ। পাথরপ্রতিমা জেটিঘাটটি কংক্রিটের তৈরি। নিত্য কয়েক হাজার মানুষ পারাপার করেন। কিন্তু সংস্কার না হওয়ায় জেটির উপরে কংক্রিটের স্ল্যাব ক্ষয়ে গিয়ে ফাঁক তৈরি হয়েছে। ঘাটের নীচের স্তম্ভগুলিতেও ফাটল দেখা দিয়েছে। জেটির অবস্থা এতটাই বেহাল যে ভুটভুটি বা লঞ্চ এসে ঘাটে লাগলে পুরো জেটিটাই কেঁপে ওঠে বলে জানালেন ওই জেটিঘাটের এক নিত্যযাত্রী। আর এক নিত্যযাত্রীর কথায়, ‘‘ঘাটে আলো না থাকায় রাতে নৌকা বা ভুটভুটিতে উঠতে গেলে ইষ্টনাম জপতে হয়।”
অন্যদিকে, বনশ্যামনগর পঞ্চায়েতে মৃদঙ্গভাঙা নদীর অশ্বিনী মাইতির ঘাটের সামনে লম্বা চর পড়ে যাওয়ায় ভাটার সময় ঘাটে ভিড়তে পারে না ভুটভুটি বা নৌকা। ফলে আড়াই তিন কিলোমিটার দূরে বেড়ার টেঁকার কাছে নৌকা বা ভুটভুটি নোঙর করতে হয়। তাতেও রেহাই নেই যাত্রীদের। প্রায় তিন-চার ফুট উঁচু ভুটভুটি থেকে কাদার মধ্যে লাফ দিয়ে নামা-ওঠা করতে হয় বৃদ্ধ থেকে শিশু সকলকে। কাদায় পিছলে পড়ে হাত-পায়ে চোট পাওয়ার ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত। বেশিরভাট জেটিঘাটে রাতে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যা আরও ভয়ঙ্কর। যেগুলিতে আছে সেগুলিতেও না থাকারই মতো। ভাটা পড়লে দিগম্বরপুর পঞ্চায়েতের কেদারপুর যশোদা ঘাটে প্রায় ৫০-৬০ ফুট দূরে জল থাকে। ফলে মহিলা থেকে ছেলে-বুড়ো সবাইকেই কাদা মাড়িয়ে গিয়ে ওটানামা করতে হয়। ব্লকের মধ্যে ভাল স্কুল হিসাবে খ্যাতি রয়েছে কেদারপুর হাইস্কুলের। ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিযোগ, ঘাটের বেহাল অবস্থার জন্য নিত্য ভোগান্তি হচ্ছে।
চরা পড়ায় এ ভাবেই বেড়ার টেঁকা ঘাটে ওঠানামা হয়।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এই এলাকায় বঙ্গোপসাগর লাগোয়া জেটিঘাটগুলির মধ্যে ব্রজবল্লভপুর পঞ্চায়েতে ত্রিপাঠির ঘাট ও তটের বাজার ঘাট দু’বছর আগে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনার অভাবে ঘাটগুলির অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি করতে না পারায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় ১০টি দ্বীপ এলাকার প্রায় দু’লক্ষ বাসিন্দা। পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কমার্ধ্যক্ষ রজনীকান্ত বেরা বলেন, “জেটিঘাটগুলির দূরবস্থা দীর্ঘদিনের। তবু তার মধ্যে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে ৮টি জেটিঘাট নতুন ভাবে তৈরি করা হলেও সেগুলির লাগোয়া অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি না হওয়ায় সমস্যা থেকেই গিয়েছে। বিষয়টি সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদকে জানানো হয়েছে।”
পাথরপ্রতিমার বিডিও অচিন্ত্য হাজরার বক্তব্য, “পঞ্চায়েত সমিতির তহবিল থেকে কিছু ঘাটে আলোর ব্যবস্থা ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করা গিয়েছে। কিন্তু ঘাটের সংস্কার করার মতো অর্থ এই মুহূর্তে নেই। অর্থের জন্য সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদকে জানানো হয়েছে।” সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী মণ্টুরাম পাখিরা বলেন, “পাথরপ্রতিমা ব্লকে জেটিঘাটগুলির বেহাল দশার কথা জানি। আর্থিক কারণেই জেটিঘাটগুলির সংস্কার করা যাচ্ছে না। তবে এ বারের বাজেটে সুন্দরবন উন্নয়ন খাতে টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ওই টাকা থেকেই দ্রুত ঘাটগুলির সংস্কার করা হবে।”
দিলীপ নস্করের তোলা ছবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.