|
|
|
|
দলেরই লোকজনের হাতে নিগৃহীত মহিলা তৃণমূল কর্মী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের হাতে দলেরই এক মহিলা কর্মী নিগৃহীত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রামে। এক গোষ্ঠীর বৈঠকে যাওয়ার ‘অপরাধে’ অন্য গোষ্ঠীর লোকজন রাধারানি জানা নামে ওই মহিলার বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে গালিগালাজ করে, বেধড়ক পেটায় রাধারানিদেবীর ছেলেকে। সাত দিনের মধ্যে এলাকাছাড়া করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
দলের একটি সূত্রের খবর, কয়েকদিন ধরে দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্তর সঙ্গে ব্লক সাধারণ সম্পাদক অর্ধেন্দু পাত্রর মধ্যে মন কষাকষি চলছে। মাস তিনেক আগে অর্ধেন্দুবাবু কিষাণ খেতমজুর সংগঠনের ব্লক সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর নয়াগ্রামে দুই নেতার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। নয়াগ্রাম ব্লকের পলাশিয়া গ্রামের বাসিন্দা রাধারানি জানা সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। গত শনিবার ‘কিষান খেতমজুর তৃণমূল কংগ্রেস’-এর ব্লক সভাপতি অর্ধেন্দু পাত্র নয়াগ্রামে একটি সাংগঠনিক বৈঠক ডেকেছিলেন। অর্ধেন্দুবাবু নয়াগ্রাম ব্লক
|
নিগৃহীতা মহিলা।
—নিজস্ব চিত্র। |
তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদেও আছেন। ওই বৈঠকে যাওয়ার জন্যই রাধারানিদেবী তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্তর গোষ্ঠীর কোপে পড়েন বলে অভিযোগ। রাধারানিদেবী বলেন, “রবিবার দুপুরে মোবাইলে ফোন করে দলের ব্লক সহ-সভাপতি কল্যাণ মাহাতো জানতে চান কেন আমি অর্ধেন্দু পাত্রর ডাকা বৈঠকে গিয়েছিলেন। বলি, উনি ব্লক সাধারণ সম্পাদক তথা কিষাণ খেত মজুর সংগঠনের নেতা। তাই গিয়েছিলাম।” এরপর রবিবার বিকেলে তৃণমূলের ব্লক কমিটির সদস্য সুজয় বেরা, অর্জুন মাহাতোর নেতৃত্বে বেশ কিছু লোক রাধারানিদেবীর বাড়িতে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। ওই মহিলা তৃণমূল কর্মী বলেন, “আমি বাড়ির ভিতরে ছিলাম। আমার স্বামী বেরিয়ে জানতে চান, কেন গালিগালাজ করছেন? এরপর ওরা আমার স্বামীকে মারধর করে। বড় ছেলে বছর কুড়ির সুব্রত বাবাকে বাঁচাতে গেলে ওকেও প্রচণ্ড মারধর করা হয়। তখম আমি বলি ‘অর্ধেন্দুবাবুর বৈঠকে গিয়ে ভুল করেছি’। তখন ওরা আমার স্বামী ও ছেলেকে ছেড়ে দেয়।” রাধারানিদেবীর কথায়, “সোমবার ব্লক সভাপতি উজ্জ্বল দত্তকে ফোন করে জিজ্ঞেস করি, আমার অপরাধটা কী? উজ্জ্বলবাবু কোনও সদুত্তর দিতে পারেন নি।”
ঘটনার কথা কার্যত মেনে নিয়েছেন উজ্জ্বলবাবু। এ দিন তিনি বলেন, “রাধারানিদেবীর স্বামী ও ছেলের সঙ্গে দলের কিছু কর্মীর সামান্য তর্কবিতর্ক হয়েছিল। তবে রাধারানিদেবীকে অপমান করা হয়নি। ঘটনাটিকে বড় করে দেখানো হচ্ছে।” আর অর্ধেন্দুবাবুর বক্তব্য, “আমার সভায় আসার জন্য দলেরই একাংশ রাধারানিদেবীর সঙ্গে কুৎসিত আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। জেলা নেতৃত্বকে ঘটনাটি জানিয়েছি।”
অভিযোগ উঠেছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তারও। মঙ্গলবার নয়াগ্রাম থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে রাধারানিদেবী দীর্ঘক্ষণ থানায় অপেক্ষা করেন। কিন্তু থানা অভিযোগের রিসিভ কপি দিতে অস্বীকার করে। রাধারানিদেবী বলেন, “নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় অভিযোগ জানাতে আসি। কিন্তু শাসক-দলের লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে পুলিশ।” অর্ধেন্দুবাবু এ প্রসঙ্গে বলেন, “পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানিয়েছি।”
রাধারানিদেবীর স্বামী শঙ্কর জানা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সামান্য আয়ের কর্মী। অভাবের সংসারে এক বিঘা জমি সম্বল। তাও দলীয় কর্মসূচিতে সদা সক্রিয় রাধারানিদেবী। এই ঘটনার পর তিনি মর্মাহত। তাঁর আক্ষেপ, “বিধানসভা ভোটের সময় দলের জন্য খেটেছি। সংসারে অভাব রয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েতের সুযোগ-সুবিধা পাইনি। জব কার্ড থাকলেও কাজ পাইনি। এরপরেও এত অসম্মান জুটল।” |
|
|
|
|
|