টিমের সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, তাতে নির্বাসিত চার ক্রিকেটারের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কে কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই মনে হচ্ছে মাইকেল ক্লার্কের।
অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক বরং মনে করেন, শেন ওয়াটসনদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল বলেই এ রকম কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে দু’বার ভাবতে হয় না তাঁকে।
শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে সহ অধিনায়ক ওয়াটসন, পেসার জেমস প্যাটিনসন সহ চার ক্রিকেটারকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে অজি টিম ম্যানেজমেন্ট। কোচ মিকি আর্থার পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়া টিমের যা সংস্কৃতি তার সঙ্গে কোনও ভাবেই মেলানো যায়নি এই চার ক্রিকেটারের মনোভাব। যে সিদ্ধান্তকে ঘিরে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। অ্যালান বর্ডারের মতো প্রবাদপ্রতিম প্রাক্তন তুলোধোনা করে ছেড়েছেন আর্থারকে। সবচেয়ে বিপজ্জনক শোনাচ্ছে ওয়াটসনের মন্তব্য। অস্ট্রেলীয় অলরাউন্ডার যে টেস্ট ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তা-ই শুধু নয়, তাঁর কথাবার্তা থেকে টিমে বিদ্রোহের আঁচও পাওয়া যাচ্ছে। সিডনি ফিরে তাঁর সুর কিছুটা নরম হলেও তিনি এটাও শুনিয়ে রাখছেন, “আমি যেটা করেছি সেটা হয়তো ঠিক নয়। কিন্তু সাসপেনশনের সিদ্ধান্তটা মেনে নেওয়া কঠিন।”
চূড়ান্ত অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট। তবু ফ্রন্টফুটে আসতে দু’বার ভাবছেন না ক্লার্ক। |
“আমার মনে হয় না টিম ম্যানেজমেন্টের এই সিদ্ধান্তের কোনও প্রভাব আমাদের বন্ধুত্বে পড়বে। কারণ ওই চার জনকেই আমি অসম্ভব শ্রদ্ধা করি। ওরা সেটা জানেও। তাই এ সব সমস্যার ক্ষেত্রে ওদের মুখোমুখি হতে আমার অসুবিধা হয় না,” অস্ট্রেলীয় প্রচারমাধ্যমকে বলে দিয়েছেন ক্লার্ক। অজি অধিনায়কের পরবর্তী সংযোজন, “কঠিন পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে যাওয়া সহজ। কিন্তু আমি সেটা করি না। ওরা জানে অস্ট্রেলিয়ার জার্সি পরে নামলে আমার ঠিক কতটা গর্ববোধ হয়। কারণ ওদেরও সেটা হয়।” অধিনায়কের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যাচ্ছে ওয়াটসনের বক্তব্য, “ক্লার্কের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছি সেই বারো বছর বয়স থেকে। প্রতিটা সম্পর্কেই যেমন ওঠানামা আছে, আমাদেরটাও সে রকম।”
ক্লার্কের মনে হচ্ছে, প্রেজেন্টেশন ঠিকঠাক সময়ে জমা দেওয়াটা এমন কোনও আহামরি ব্যাপার ছিল না। প্যাটিনসনদের উত্তরপত্র জমা দেওয়াটা উচিতও ছিল। ক্লার্ক বলছেন, “এমন বিশাল কিছু তো চাওয়া হয়নি। কিন্তু তুমি টিমকে ডোবালে। কোচকে ডোবালে। যেটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
কিন্তু এমন চরম সিদ্ধান্তের ‘টাইমিং’টা কি ঠিক হল?
|
ব্যাগি গ্রিন অধিনায়কের মতে, শাস্তির সময় ঠিকই আছে। “কোনটা ঠিক শাস্তি বা কী সেই শাস্তির ঠিকঠাক সময়, কেউ বলতে পারে? তবে ওয়াটো (ওয়াটসন) টিমে আবার ফিরে আসতেই পারে। ওর সেই ক্ষমতা আছে। অনেক কিছুই ঘটছিল বেশ কিছু দিন ধরে। এই ঘটনায় সমস্ত ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে।”
এর মধ্যে প্যাটিনসন স্বীকার করে নিচ্ছেন, যে শাস্তি তাঁকে দেওয়া হয়েছে সেটা তাঁর প্রাপ্য। ওয়াটসন যখন এই শাস্তি মানতে পারছেন না, তখন টিমের এক নম্বর পেসার প্যাটিনসনের মতে, আর্থার, ক্যাপ্টেন ক্লার্ক সহ গোটা টিমের তাঁরা অবমাননা করেছিলেন ঠিক সময়ে প্রেজেন্টেশন জমা না দিয়ে।“আমি যদি ওদের জায়গায় থাকতাম, আমারও একই রকম খারাপ লাগত। কোচ, ক্যাপ্টেন বা টিমের কারও সম্মানই আমি রাখিনি। শাস্তি তাই আমার প্রাপ্য,” বলে দিয়েছেন প্যাটিনসন। সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, “লোকে বলছে শাস্তিটা মারাত্মক কড়া। কিন্তু যদি একটু তলিয়ে ভাবেন তা হলে দেখা যাবে, সেটা নয়। আপনাকে যদি অস্ট্রেলীয় টিমে খেলতে হয়, তা হলে সব কিছুই নির্ভুল করতে হবে। যা করেছি, সেটা মোটেই মেনে নেওয়া যায় না। শাস্তি একদম ঠিক আছে।’’ |