শহরের এক পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠেছিল। পুকুরটি রয়েছে সরকারি জায়গায়। যাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছিল, সেই তাঁকেই পুকুরটিকে ফের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল প্রশাসন। নির্দেশ মেনে পুকুরটি ফের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া না- হলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এক শুনানি হয়। সেখানে সব পক্ষই উপস্থিত ছিল। শুনানি শেষে মেদিনীপুর (সদর) মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক আশিস সরকার বলেন, “অভিযোগ পেয়ে তদন্ত হয়। তদন্তে দেখা যায়, অভিযোগটি ঠিক। শুধু পুকুর ভরাটই নয়, ওই জায়গার উপর একটি অস্থায়ী নির্মাণও তৈরি করা হয়। আমরা পুকুরটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।” |
খাপ্রল বাজার এলাকার ভরাট হওয়া পুকুর। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী ন’দিনের মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে। সেই মতো আজ, বুধবার একাধিক দফতরের আধিকারিক ওই জায়গায় যাবেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ঠিক কী কী করতে হবে, তা জানাবেন। শহরবাসীর বক্তব্য, অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশাসন এমন কড়া পদক্ষেপ করলেই শহরে জলাভূমি ভরাটের প্রবণতা কমবে। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে? প্রশাসন সূত্রে খবর, মেদিনীপুর শহরের খাপ্রেলবাজার এলাকায় সরকারি জায়গার উপর একটি পুকুর ছিল। অভিযোগ, অজয় সাউ নামে এক ব্যক্তি পুকুরটি ভরাট করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এ নিয়ে অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগ পৌঁছয় গত বছরের এপ্রিলে। পুরো বিষয়টি মৎস্য দফতর এবং পুলিশকে জানায় মহকুমা প্রশাসন। তবে সে ভাবে তদন্ত এগোয়নি। বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফের অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। এ বার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) অরিন্দম দত্তের দফতরে অভিযোগ পৌঁছয়। তদন্তের নির্দেশ দেন অতিরিক্ত জেলাশাসক। মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্তকে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর তদন্ত শুরু হয়। দেখা যায়, অভিযোগটি ঠিক। সরকারি জায়গার উপর একটি পুকুর ছিল। সেটি মাটি ফেলে ভরাট করা হয়।
সত্যতা মেলায় সবপক্ষকে শুনানির জন্য তলব করা হয়। মঙ্গলবার মহকুমাশাসকের দফতরে শুনানি হয়। ছিলেন মেদিনীপুর (সদর) মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক আশিষ সরকার, কোতয়ালি থানার আইসি সুশান্ত রাজবংশী প্রমুখ। সিদ্ধান্ত হয়, ওই ব্যক্তি ন’দিনের মধ্যে পুকুরটিকে ফের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেবেন। না হলে তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। শহর ও শহরতলিতে পুকুর বোজানোর অভিযোগ নতুন নয়। এ ক্ষেত্রে একাধিক চক্র সক্রিয়। এই চক্র জমির চরিত্র পরিবর্তনে সাহায্যও করে। পুকুর বুজিয়ে সেখানে বহুতল তৈরি হয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, পুকুরের জায়গায় কোনও ভাবে ঘরবাড়ি তৈরির অনুমতি মেলে না। যদি দিনের পর দিন আবর্জনা জমে পুকুর মজে যায়, তবুও না। অনুমতি পেতে হলে অন্যত্র সমপরিমান জলাভূমির ব্যবস্থা করতে হয়। শহরবাসীর বক্তব্য, ওই সব চক্রের সঙ্গে একাংশ প্রোমোটারের যোগ রয়েছে। প্রোমোটারদের সঙ্গে আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাংশ নেতার যোগ রয়েছে। ফলে, চোখের সামনে পুকুর ভরাট চলছে দেখেও সচরাচর কেউ অভিযোগ করেন না। অভিযোগ উঠছে দেখলে আবার ওই নেতারাও তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ভূমি দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “অভিযোগ এলে আমরা তা গুরুত্ব দিয়েই খতিয়ে দেখি। তদন্ত হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে পুরসভা সে ভাবে তদন্তে সহযোগিতা করে না। ফলে সঠিক ভাবে তদন্ত এগোনো মুশকিল হয়।” |