দাবি ছিল অনেক দিনের। প্রতিশ্রুতির বয়সও নেহাৎ কম নয়। অবশেষে বেলেঘাটা খাল কিংবা ইছামতী নদী সংস্কারের মতো বহু আকাঙ্ক্ষিত প্রকল্প শুরু করতে চলেছে রাজ্য। শুধু তাই নয়, আগামী অর্থবর্ষের মধ্যেই কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি জেলার খালগুলির অবস্থার আমূল পরিবর্তন করার দাবি করলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিধাননগরে সেচ দফতরের আগামী অর্থবর্ষের প্রকল্প প্রসঙ্গে এই দাবি করেন তিনি।
দীর্ঘ দিন ধরেই বেলেঘাটা খাল সংস্কারের সরকারি প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা কার্যকরী হয়নি। উল্টে ওই খাল কলকাতার অন্যতম মশার আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত হয়। চিৎপুর লকগেট থেকে কেষ্টপুর খালে জলপ্রবাহ থাকলেও গজনবি কাট থেকে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস পর্যন্ত বেলেঘাটা খালে জলের প্রবাহ ছিল না। পাশাপাশি খালপাড় জুড়ে ছিল দখলদারি। বাম আমলেও এই খাল সংস্কারের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। এত দিনে রাজ্য সরকার নড়েচড়ে বসেছে। ১১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয়ে বেলেঘাটা খালের ৮ কিলোমিটার অংশে (চিংড়িহাটা-চিৎপুর) সংস্কার ও সৌন্দর্যায়ন হবে বলে জানান সেচমন্ত্রী। |
পাশাপাশি, বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে ইছামতী নদী সংস্কারের কাজও চালু করতে চলেছে রাজ্য। ৩১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় করে প্রায় ১১ কিলোমিটার অংশ জুড়ে চলবে সংস্কারের কাজ। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সরেজমিনে অবস্থার পর্যালোচনা করেছি। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিয়মিত ভাবে খাল ও নদীগুলি সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু করার কথা বলেছেন। শুধু একটি খাল কিংবা নদী সংস্কারই নয়, আগামী অর্থবর্ষের মধ্যেই কলকাতা-সহ একাধিক জেলার গুরুত্বপূর্ণ খাল ও নদী সংস্কারের কাজ করা হবে।”
ইতিমধ্যেই বাইগাছি, নয়াবাঁধ, শেওড়াপোতা ও সূতি খালের সংস্কার চালু করা হচ্ছে বলে দাবি সেচমন্ত্রীর। এর ফলে হাওড়া ও হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ উপকৃত হবেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫টি সংস্কার প্রকল্প আগামী অর্থবর্ষের মধ্যে সম্পূর্ণ করার দাবি করেছে সেচ দফতর। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অর্থেই এই প্রকল্পগুলির কাজ হবে। তার মধ্যে অধিকাংশই রাজ্য সরকার বহন করবে বলে সেচ দফতর সূত্রে খবর।
এ দিকে, আপার বাগজোলা খালের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকায় সংস্কারের কাজ করা হয়েছে, ১০ শতাংশে পাড় বাঁধানোর কাজ চলছে। লোয়ার বাগজোলার সংস্কারের জন্য ৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেচ দফতর। পরবর্তী অর্থবর্ষে লোয়ার বাগজোলা খালের সবটাই সংস্কারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাশাপাশি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে কেষ্টপুর খালের সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের কাজ হবে বলে সেচ দফতর সূত্রে খবর।
তবে স্রেফ সংস্কার কিংবা সৌন্দর্যায়ন করেই কী কার্যসিদ্ধির পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার? সেচমন্ত্রী বলেন, “সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের সঙ্গে একাধিক জায়গায় পাম্পিং স্টেশন তৈরির কাজও হবে। এর ফলে কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলায় অপরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থার কুফল থেকে অনেকটাই মুক্ত হওয়া যাবে।” |