দূষণে শেষ হতে বসেছে বশিষ্ঠ-ভূমি
কদা গঙ্গা-সম পবিত্র মনে করা হত এই স্রোতস্বিনীকে। আজ ঘোলাজলে পঙ্কিল বশিষ্ঠ নদী। পাহাড়ি ঝোরার বুকে, পাথরের ভিতেই গড়ে উঠেছে বশিষ্ঠ মুনির আশ্রম। এক দশক আগেও আশ্রম চত্বর ছিল সাফ-সুতরো। আশপাশের অরণ্য তাকে ঘিরে রাখত। কিন্তু জবর দখলের পাকে পড়ে, অরণ্য সাফ হয়ে গিয়েছে অনেকটাই। নদীর বুকে বনভোজন আর পানাহারের দাপটে জমে থাকে প্লেট, গ্লাস আর মদের বোতল। ভূমিপুত্রদের ‘সৌজন্যে’ নোংরা হওয়া গুয়াহাটির বশিষ্ঠ মন্দির ও নদী কলুষমুক্ত করতে ঝাঁটা হাতে নেমে পড়েছেন চেকশ্লোভাকিয়া ও আর্জেন্টিনার চার বিদেশি। ছবি, কবিতা, নাটিকার মাধ্যমে স্থানীয় মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে।
শহরের উপকন্ঠে পাহাড়ি নদীর পাশে, ১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে আহোম রাজা রাজেশ্বর সিংহ বশিষ্ঠ মন্দির ও শিব মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, খোদ মহর্ষি বশিষ্ঠ এই স্থানে দেহ রাখেন। রয়েছে তাঁর সমাধিস্থলও। আশপাশের পাহাড় থেকে সন্ধ্যা, ললিতা ও কান্তা ঝোরা মিলেমিশে বশিষ্ঠ নদী নাম নিয়েছে। প্রায় ৮৩৫ বিঘা জুড়ে ছিল বশিষ্ঠ আশ্রম। এটি এখনও গুয়াহাটির অন্যতম দর্শনীয় স্থান। মন্দির ঘিরে বহু হোটেল, খাওয়ার দোকান যেমন গড়ে উঠেছে, তেমনই মন্দিরের কাছে রয়েছে বাস ও ট্রেকার স্ট্যান্ড। আশপাশের পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে গ্রাম। বশিষ্ঠ মন্দিরের পিছনেই অসম বন দফতরের সদর দফতর ও পিগমি হগ সংরক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। আছে গড়ভাঙা অরণ্য। কিন্তু বনকর্তারাই জানাচ্ছেন জবর দখল, গাছ কাটার ঠেলায় অরণ্য এলাকা অনেকটাই অনাবৃত হয়ে গিয়েছে। কমে গিয়েছে চিতাবাঘ, সিভেট, সাপ, পাখিদের সংখ্যাও। বিয়ে থেকে অস্থি বিসর্জন সবই হয় এই ক্ষীণ জলধারায়। নিয়ম করে বনভোজনের ঠেলায় নদীর বুকে প্লাস্টিক প্লেট ও বোতলের স্তূপ জমছে। বশিষ্ঠের পরিবেশ বাঁচাতে বন দফতরের তরফেও তেমন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

চলছে সাফাই। ছবি: অলোক পাঠক।
সেই কাজেই এগিয়ে এসেছে ‘পরিবর্তন’ নামে একটি পরিবেশপ্রেমী সংস্থা। তাঁদের ডাকে সাড়া দিয়েই মারিয়ারা বশিষ্ঠে হাজির হন। ইতিমধ্যে তাঁদের সাফাই অভিযান শুরু হয়েছে। জল কম থাকায় ঝর্ণার ভিতরেই ঝাঁটা হাতে নেমে প্লাস্টিক প্যাকেট, বস্তা, গুটখা-চিপ্সের প্যাকেট, ঠান্ডা পানীয়ের বোতল তুলে আনছেন তাঁরা। মেমসাহেবদের উদ্যম দেখে খানিকটা হুজুগ, খানিকটা লজ্জায় স্থানীয় গ্রামবাসীরাও সেই কাজে হাত মিলিয়েছেন। উদ্যোক্তা তথা ভাষ্কর অলোক পাঠক জানিয়েছেন, ধাপে ধাপে তাঁরা নদীর পুরো প্রবাহই সাফ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। তবে স্থানীয় মানুষ তথা গুয়াহাটিবাসীর সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ সম্ভব নয়।” বশিষ্ঠ এলাকার আশপাশের মানুষকে সচেতন করতে ২ মার্চ থেকে সপ্তাহব্যাপী ‘বশিষ্ঠ ক্রিয়েটিভ ক্যাম্প’ ও ‘ডান্সিং রেন’ আন্তর্জাতিক উৎসবের আসর বসে। চেকশ্লোভাকিয়া, আর্জেন্তিনা, ফ্রান্সের মোট ৮ জন শিল্পী উৎসবে অংশ নিয়েছেন। নাচে-গানে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে পরিবেশ বার্তা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মূল অভিযোগ কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেই। তাঁরা বলেন, মন্দির থেকে প্রতিদিন যে পরিমান বর্জ্য জলে ফেলা হয় তা জলের দূষণ ঘটাচ্ছে। জলে জলজ প্রাণী নেই বললেই চলে। পরিবেশপ্রেমী তথা দিপর বিলের সংরক্ষণকর্মী লেখন টেরণের মতে, বশিষ্ঠ সেনা হাসপাতাল থেকেও বর্জ্য বশিষ্ঠতে পড়ছে। মন্দির ও হাসপাতালের বর্জ্য বুকে করে বশিষ্ঠ নদী দিপর বিলে মেশে। ফলে দিপর বিলের জলেও বিষ মিশছে। প্রধান পুরোহিত গিরীন্দ্র শর্মা এ অবস্থার জন্য প্রশাসনকেই দায়ি করেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.