চুঁচুড়া দমকলকেন্দ্র
কার্যালয়ে ভাঙছে চাঙড়, ঢুকছে সাপ, আতঙ্কে দিন কাটছে কর্মীদের
ছাদের গায়ে গজিয়ে ওঠা বট-অশ্বত্থের শিকড় ঘিরে নিয়েছে বাড়িটার অনেকটাই। ভেঙে পড়ছে চাঙড়, খসে পড়ছে পলেস্তারা। খোলা দরজা দিয়ে যখন-তখন ঢুকে পড়ে সাপ, নেউল, হনুমান বা কুকুর। বর্ষায় জল পড়ে ঘর থইথই করে।
দীর্ঘদিন ধরে এমনই অবস্থায় চুঁচুড়া দমকলকেন্দ্রটির। যে কোনও সময়ে দফতরে বিপদের আশঙ্কায় দিন কাটান সেখানকার ৫০ জন কর্মী। কবে ভবনের হাল ফিরবে, তা নিয়ে তাঁদের ভাবনার অন্ত নেই। এ নিয়ে প্রশাসনের নানা মহলে ইতিমধ্যে তাঁরা দরবারও করেছেন। চুঁচুড়া ইমামবাড়ার অদূরেই দোতলা ওই ভবনটি বহু পুরনো। তার এক তলায় তিনটি ঘর ভাড়া নিয়ে ৫৪ বছর ধরে চলছে দমকলকেন্দ্রটি। একটি ঘর কেন্দ্রের পদস্থ কর্তার। একটি ঘরে আগুন নেভানো এবং বিপর্যয় মোকাবিলার সরঞ্জাম থাকে। অন্য ঘরে থাকেন বাকি কর্মীরা। সেই ঘরের দরজা থাকলেও জানলার পাল্লা নেই। দোতলাটি দীর্ঘদিন আগেই পুরোপুরি পরিত্যক্ত। স্থানীয় বাসিন্দারাও চান, হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়ার এই বেহাল দমকলকেন্দ্রটির দ্রুত সংস্কার করা হোক। ওই কেন্দ্রের এক কর্মীর ক্ষোভ, “আমাদের কার্যালয়ে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও তথৈবচ। তারের জাল ঝুলছে সর্বত্র। শর্ট সার্কিট হয়ে এখানেও যে কোনও সময়ে আগুন লাগতে পারে। ভয়ে ঠিকমতো ঘুমও হয় না।”
এই বাড়ি থেকেই চলে দমকলের কাজকর্ম। —নিজস্ব চিত্র।
দমকলকেন্দ্রের সামনের খোলা মাঠে রোদ-জল-বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকে চারটি ইঞ্জিন। রাত নামলেই ঝিঁঝিপোকা এবং শেয়ালের ডাকে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন ওই কেন্দ্রের কর্মীরা। আর এক কর্মী বলেন, “সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় বর্ষাকালে। তখন ছাদ থেকে জল পড়ে। বেশি বৃষ্টি হলে ঘরে জল জমে যায়। সাপ ঢুকে পড়ে। তা ছাড়া, নেউল, হনুমান বা কুকুর তো যখন-তখন ঢুকছে। এ ভাবে কী থাকা যায়?”
আশপাশের চন্দননগর, ভদ্রেশ্বর বা মগরা-বাঁশবেড়িয়া তো আছেই, আগুন লাগলে চুঁচুড়া দমকলকেন্দ্রের কর্মীদের ইঞ্জিন নিয়ে ছুটতে হয় বৈঁচিগ্রাম বা গুপ্তিপাড়াতেও। এক দমকলকর্মীর আক্ষেপ, “বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কথা কেউ ভাবছে না।”
জেলা প্রশাসনের কর্তাদের অবশ্য দমকলকেন্দ্রটির এই শোচনীয় অবস্থার কথা অজানা নয়। জেলাশাসক মনমীত নন্দা বলেন, “দমকল বিভাগ ওই দমকলকেন্দ্রটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শীঘ্রই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।” রাজ্য দমকলের ডিজি দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া বলেন, “অনেক দিন ধরে চুঁচুড়ার দমকলকেন্দ্রটির অবস্থা খুবই খারাপ। এখন আমরা ওখানকার দফতরটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। নিজস্ব নতুন ভবন তৈরির জায়গাও খোঁজা হচ্ছে।”
অবশ্য শুধু কার্যালয়ের মানোন্নয়ন নয়, আগুন মোকাবিলার সরঞ্জামের অপ্রতুলতার কথাও তুলেছেন ওই কেন্দ্রের কর্মীরা। তাঁদের মতে, হুগলির শহরাঞ্চলে যে ভাবে বড় বড় আবাসন বা শপিং মল বাড়ছে, তাতে আগুন মোকাবিলার আধুনিক সরঞ্জাম প্রয়োজন। চারটি ইঞ্জিন ছাড়া তাঁদের হাতে আর বিশেষ কোনও সরঞ্জাম নেই। এমনকী, নেই ল্যাডারও। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে দমকলের হুগলির ডিভিশনাল অফিসার তারকনাথ প্রধান বলেন, “শুধু ওই দমকলকেন্দ্রে নয়, গোটা হুগলি জেলাতেই দমকলের কোনও ল্যাডার নেই। উঁচু বাড়িতে আগুন লাগলে কলকাতা থেকে ল্যাডার আনতে হয়। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরে জানানো হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.