চিন: ২৫; ভারত: ৪৮। অন্তত একটি খেলায় ভারত চিনকে বহু গোলে হারাইতেছে। মন্ত্রিসভায় মন্ত্রকের সংখ্যার খেলা। সম্প্রতি চিন ব্যবধানটি আরও বাড়াইয়া লইল। রেল মন্ত্রককে পরিবহণ মন্ত্রকের অন্তর্ভুক্ত করিল, পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রককে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকে ঢুকাইয়া লইল। যে দুইটি মন্ত্রক অতীত হইয়া গেল, সেগুলির গুরুত্ব প্রশ্নাতীত। চিনের রেলে প্রতি বত্সর ১৮০ কোটি যাত্রী যাতায়াত করেন। চাকুরি করেন ২১ লক্ষ মানুষ। প্রসঙ্গত, ভারতীয় রেলে কর্মীর সংখ্যা ১৫ লক্ষের কাছাকাছি। চিনের পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রকের গুরুত্ব লইয়াও প্রশ্ন নাই। কিন্তু এই মন্ত্রক দুইটিকে ছাঁটিয়া ফেলিবার সময় কর্মীর সংখ্যা, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ইত্যাদি বিচার করা হয় নাই। একমাত্র বিবেচ্য ছিল যুক্তি। যেখানে পরিবহণ মন্ত্রক আছে, সেখানে রেলের জন্য আলাদা মন্ত্রকের যুক্তি খুঁজিয়া পাওয়া যায় নাই। পরিবার পরিকল্পনাও যুক্তিসঙ্গত ভাবেই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকেরই অংশ। চিনের নেতারা বুঝিয়াছেন, যুক্তিই সংস্কারের বাহন। ফলে, যুক্তি তাঁহাদের যে পথে চালনা করিয়াছে, তাঁহারা সেই পথেই হাঁটিয়াছেন।
চিন পারিলেও ভারত পারে না। মনমোহন সিংহ সম্ভবত জোটধর্মের দোহাই পাড়িবেন। কথাটি আংশিক ভাবে সত্য। বিভিন্ন শরিককে তুষ্ট রাখিতে ছোট-বড় বিবিধ মন্ত্রকের প্রয়োজন পড়ে বটে। কিন্তু শুধু জোটের ঘাড়ে দোষ চাপাইলে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করিবার আর উপায় থাকে না। এই রাজ্যে মন্ত্রকের সংখ্যা ৫৮। মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, উপদেষ্টা, পারিষদীয় সচিব মিলাইয়া কর্তার সংখ্যা কত, মুখ্যমন্ত্রীই জানেন। প্রশ্নটি মানসিকতার। কোন মন্ত্রকের কী কাজ, কোন মন্ত্রক না থাকিলেও চলে তাহা বিবেচ্য নহে। শরিককে, অথবা দলেরই প্রভাবশালী নেতাদের তুষ্ট করিতে হাতে মন্ত্রক ধরাইয়া দেওয়াই দস্তুর হইয়াছে। এই তুষ্ট করিবার চোরাবালিতেই সংস্কারের রথ ডুবিতেছে।
কেবলমাত্র পরিবহণ ক্ষেত্রেই ভারতে চারটি মন্ত্রক বর্তমান অসামরিক বিমান পরিবহণ, রেল, সড়ক ও হাইওয়ে এবং জাহাজ মন্ত্রক। কেন, তাহার একটিও যুক্তিসঙ্গত কারণ নাই। পরিবহণের ক্ষেত্রে একটিমাত্র মন্ত্রক থাকা বিধেয়, যাহার কাজ হইবে নীতি নির্ধারণ করা। তাহার অধীনে থাকিবে বিভিন্ন নিগম, যেগুলি স্বায়ত্তশাসিত হইবে। সেই নিগমগুলিই রেল, জাহাজ, অসামরিক বিমান পরিবহণ ইত্যাদি পরিচালনা করিবে। বহু মানুষ রেলে চাকুরি করেন এবং আরও বেশি সংখ্যক যাত্রী রেল চড়েন, ফলে তাহাকে একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রকের অধীনে রাখিতে হইবে এমন হাস্যকর যুক্তি আর ব্যবহার না করাই ভাল। সরকার অপেক্ষা নিগম যে পরিচালনার কাজটি দক্ষতর ভাবে করে, তাহা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। বিভিন্ন দফতরের সম্পদের সুষ্ঠু তদারকির জন্য আর্থিক নিগমও প্রতিষ্ঠা করা বাঞ্ছনীয়। সরকারের কাজ নজরদারি করা, রেল চালনা নহে। মানসিকতার এই সংস্কার না হইলে ভারত পিছাইয়াই থাকিবে, আর চিন ক্রমে আরও অগ্রসর হইবে। |