|
|
|
|
বৈঠকে মতানৈক্য |
যৌন নির্যাতন বিল মন্ত্রিগোষ্ঠীতে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নানা মন্ত্রীর নানা মত। তার জেরে ফের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত পিছিয়ে গেল। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে ঐকমত্য হল না। ধর্ষণের সংজ্ঞা লিঙ্গ-নিরপেক্ষ হবে কি না এবং যৌন সম্পর্কে সম্মতির বয়ঃসীমা ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছর করা হবে কি না, তা নিয়ে পরস্পর- বিরোধী মতের জেরেই আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পাশাপাশি মহিলাদের লুকিয়ে দেখা বা অনুসরণ করার মতো অপরাধকে যৌন নির্যাতনের আওতায় নিয়ে আসা হলে তার অপব্যবহার হতে পারে বলেও মত উঠে এসেছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ঠিক হয়েছে, পি চিদম্বরমের নেতৃত্বাধীন একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী বিলের এই দিকগুলি খতিয়ে দেখবে। আইনজ্ঞদেরও পরামর্শ নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে ও আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমারের অবশ্য দাবি, বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। মূলত বিল পাশ করানোর সময় যাতে সংসদে বাধা না হয়, তার জন্য সোমবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছে।
১৬ ডিসেম্বরের দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের পরে নাগরিক প্রতিবাদের মুখে যৌন নির্যাতনের ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল ইউপিএ সরকার। এখন ফৌজদারি আইন সংশোধনী বিলের মাধ্যমেই সেই অর্ডিন্যান্সকে পাকাপাকি আইনের চেহারা দিতে চাইছে কেন্দ্র। কারণ, ওই বিলের খসড়া আগেই সংসদে পেশ হয়েছে। সংসদীয় রীতিমাফিক ২২ মার্চ বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধ শেষের আগেই নতুন বিলটি পাশ করাতে হবে। সেই জন্যই আজ তড়িঘড়ি মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ঐকমত্য না হওয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকরের বক্তব্য, “সরকার এত দিন ধরে কী করছিল? গোটা দেশ এই আইনের জন্য অপেক্ষা করছে। দুই মন্ত্রকের মধ্যে লড়াই নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই।”
বিলের ক্ষেত্রে প্রধান মতবিরোধ তৈরি হয়েছে ধর্ষণের সংজ্ঞা নিয়ে। অর্ডিন্যান্সে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ আইন তৈরির জন্য শুধুমাত্র ‘যৌন নির্যাতন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু এতে নারী অধিকার সংগঠনগুলি আপত্তি তোলে। অভিযোগ ওঠে, এর ফলে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধকে লঘু করা হচ্ছে। নারী-আন্দোলন কর্মীদের দাবি ছিল, মহিলাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনও পুরুষ জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করলে তাকে আইনি ভাষাতেও ‘ধর্ষণ’ বলা হোক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সেই দাবি মেনেই নতুন বিলের খসড়া তৈরি করে। বিভিন্ন ধরনের যৌন নির্যাতনের মধ্যে ধর্ষণকে একটি বিশেষ অপরাধ হিসেবে রাখা হয়। বিচারপতি জে এস বর্মার নেতৃত্বাধীন কমিটিরও তেমনই সুপারিশ ছিল। কিন্তু তাতে আবার বাদ সেধেছেন আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার। তিনি যৌন নির্যাতনের অপরাধকে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ করারই পক্ষে।
একই ভাবে মেয়েদের ক্ষেত্রে সহবাসে সম্মতির বয়ঃসীমা ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ বছরে নিয়ে আসতে চাইছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। কিন্তু তাতে আবার নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী কৃষ্ণা তিরথের আপত্তি রয়েছে। তাঁর যুক্তি, মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর বয়স হলেই সাবালিকা বলা হয়। তাই সহবাসে সম্মতির বয়ঃসীমাও ১৮ বছরই থাক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের ব্যাখ্যা, সহবাসে সম্মতির বয়ঃসীমা ১৬ বছরে কমিয়ে আনা না হলে গোঁড়া অভিভাবকরা এই আইনের অপব্যবহার করতে পারেন। এখন ছেলেমেয়েদের মেলামেশা আগের থেকে অনেক বেশি। এই আইনে কোনও তরুণী নিজের ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্কে গেলেও ছেলেটির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা সম্ভব।
নারী কল্যাণ মন্ত্রক আবার পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আইন এবং শিশুদের যৌন নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যে আইন রয়েছে, সেখানে মেয়েদের বয়ঃসীমা ১৮ বছর রয়েছে। কাজেই সহবাসে সম্মতির বয়ঃসীমা কমালে ওই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে।
নতুন বিলে মহিলাদের লুকিয়ে দেখা বা অনুসরণ করার মতো অপরাধকে যৌন নির্যাতনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় টেলিকমমন্ত্রী কপিল সিব্বল এতে আপত্তি তুলেছেন। তাঁর যুক্তি, এ সব ক্ষেত্রে মিথ্যে অভিযোগ আনা হলেও তা ভুল প্রমাণ করা কঠিন। একই মত আইনমন্ত্রীরও। তা ছাড়া নতুন বিলের বেশ কয়েকটি দিক নিয়ে সরকারকে আইনি সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলেও তিনি যুক্তি দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে চিদম্বরমকেই মতানৈক্য দূর করার দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। মন্ত্রিগোষ্ঠীতে চিদম্বরম ছাড়া থাকবেন শিন্দে, সিব্বল, কৃষ্ণা তিরথ ও অশ্বিনী কুমার। সরকারি সূত্রে খবর, মূলত এই চার জনের মধ্যে মতভেদ হওয়াতে মন্ত্রিসভার বাইরে তাঁদের আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি হবে বলে আশা তাঁর। আইনমন্ত্রীর বক্তব্য, সুসংহত ও কার্যকরী আইন তৈরি করার জন্যই এত বার আলোচনার প্রয়োজন পড়ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সরকার বিল পাশ করিয়ে আইন তৈরি করবে। |
|
|
|
|
|