বিজেপির নিশানায় সনিয়া
ইতালির নৌসেনাদের নিয়ে বিপাকে কেন্দ্র
দুই ইতালীয় নৌসেনাকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভারত-ইতালি সম্পর্ক। ঘরোয়া রাজনীতিতেও চাপে পড়ল মনমোহন সিংহ সরকার। দুই ভারতীয় মৎস্যজীবীকে খুনে অভিযুক্ত ইতালীয় নৌসেনাদের ভারতে পাঠানো হবে নাএ কথা ইতালি জানিয়ে দেওয়ার পরই বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। বিজেপি-র প্রশ্ন, ইতালির প্রসঙ্গ এলেই মনমোহন সরকার কেন নরম হয়ে যায়? গোটা ব্যাপারটিই কেন্দ্রের সাজানো বলে অভিযোগ বিরোধী দলগুলির।
পরিস্থিতি এতই জটিল যে আজ নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া ভাষায় সাউথ ব্লক জানিয়েছে, ভারতের বিচার বিভাগের নির্দেশ অমান্য হলে, কঠিন পদক্ষেপ করবে দিল্লি। সেই পদক্ষেপ কী হবে তা স্পষ্ট না হলেও বিষয়টি নিয়ে তিক্ততা বাড়ছে। আজ রাতে ইতালির রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল মানসিনির সঙ্গে কথা বলে বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাই জানান, “ইতালি সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তিকে ফেরত চাইছি।”
রাজনীতির কারবারিদের বক্তব্য, যে হেতু সংশ্লিষ্ট দেশটির নাম ইতালি, তাই এ ব্যাপারে জলঘোলা হোক এমনটা চাইছে না মনমোহন সরকার। বিষয়টি স্পর্শকাতর, এবং বিরোধীদের আক্রমণের লক্ষ্য যে সরাসরি কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী, সেটা স্পষ্ট। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদকে।
এই সেই দুই ইতালীয় নৌসেনা। পিটিআই ফাইল চিত্র
আজ একটি বিবৃতি দিয়ে ঘটনাটির প্রতিবাদ করেছে বিদেশ মন্ত্রক। বলা হয়েছে, ‘ভারত সরকার দৃঢ় ভাবে জানাতে চায় যে ইতালির সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হওয়া যাচ্ছে না। আজ সে দেশের রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে, ইতালি ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তার ভিত্তিতেই ইতালির সেনাদের দেশে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়।’ কড়া ভাষায় বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে চলার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত ইতালির।
কাল রাতেই ইতালি সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, মৎস্যজীবী খুনের দায়ে অভিযুক্ত ইতালীয় নৌসেনাদের ভারতে পাঠানো হবে না। ঘটনার জেরে আজ সংসদের ভিতরে ও বাইরে, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে ইউপিএ সরকারের। আজ কেরলের বাম সাংসদেরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এর বিহিত চান। পরে সেই প্রতিনিধি দলটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের বলেছেন ইতালির এই আচরণ ‘মানা যায় না।’ এক বাম সাংসদের দাবি, ইতালির আচরণ মানতে নারাজ প্রধানমন্ত্রীও। কিন্তু ভারত সরকারের কোনও শীর্ষস্থানীয় কর্তা ইতালির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে দুই নৌসেনাকে পাঠিয়ে দিয়েছে বলেই মনে করছেন বামেরা।
কেরল সরকারের অভিযোগ, উপকূলের কাছে আজেশ বিঙ্কি ও গেলাস্টেইন নামে দুই মৎস্যজীবীকে একটি ইতালীয় জাহাজ থেকে গুলি করা হয়। ম্যাসিমিলানো লাতোরে ও সালভাতোরে গিরোনে নামে দুই নৌসেনা জলদস্যু ভেবে গুলি চালান বলে অভিযোগ। তাঁরা গ্রেফতার হন। প্রথম থেকেই সেনাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হয়েছিল ইতালি। আদালতে বিচার চলার সময়েই মামলা খারিজ করতে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানিয়েছিল তারা। মৎস্যজীবীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিয়েও সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, নৌসেনাদের শাস্তির দাবিতে অনড় থেকেছেন মৎস্যজীবীদের আত্মীয়রা।
বড়দিনে লাতোরে ও গিরোনেকে ফেরার অনুমতি দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার পর ভারতে ফেরেন তাঁরা। এ বার ইতালির নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য তাঁদের দেশে যেতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আর ফিরলেন না তাঁরা। ইতালির দাবি, সমস্যার কূটনৈতিক সমাধানের প্রস্তাবে নয়াদিল্লি সাড়া দেয়নি। বরং দুই সেনাকে আটকে আন্তর্জাতিক অধিকার আইন লঙ্ঘন করেছে। কোনও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী সমস্যাটি বিচার করে দেখতে পারে।‘ষড়যন্ত্র’ করে নৌসেনাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ নিহত ধীবর গেলাস্টাইনের স্ত্রী ডোরার। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডির মতে, ইতালির আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। এ নিয়ে মনমোহন সিংহ ও সলমন খুরশিদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। দুই নৌসেনাকে ফেরাতে আইনি পদক্ষেপ করা যায় কি না তা নিয়েও আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন চান্ডি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.