বিকেল সওয়া চারটে। গড়িয়াহাট রোডের এক বহুতলের পিছন দিকে হঠাৎ হুড়মুড় শব্দ। বহুতলের দারোয়ান এবং পার্কিং প্লেসে বসে থাকা গাড়িচালকেরা দৌড়ে গিয়ে দেখলেন সাত তলা থেকে ভেঙে পড়া বাঁশের ভাড়ায় চাপা পড়েছেন ছ’জন শ্রমিক। উপর থেকেও ভেসে আসছে আর্তনাদ। দেখা গেল, ছ’তলার একটি ফ্ল্যাটের এসি-র খাঁচা ধরে ঝুলে রয়েছেন আরও দুই শ্রমিক। দারোয়ান ও গাড়িচালকেরাই খবর দিলেন পুলিশ ও দমকলকে। তারাই বাঁশের ভারা সরিয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। উপরে আটকে থাকা দুই শ্রমিককেও পুলিশ ও দমকলের কর্মীরা নামিয়ে আনেন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ ৫০বি, গড়িয়াহাট রোডের ‘গগনদীপ’ নামের ওই বহুতলে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। যে ঠিকাদারের অধীনে ওই শ্রমিকেরা কাজ করছিলেন, হিমাদ্রিশেখর ওরফে বাপি ঘোষাল নামে সেই ঠিকাদারকে গাফিলতির অভিযোগে এ দিন রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, জখমদের মধ্যে চার জনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। আহতেরা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বাসিন্দা। |
গড়িয়াহাটের সেই বহুতল। মঙ্গলবার। ছবি: সুমন বল্লভ। |
কী ভাবে ভারা ভেঙে পড়ল? প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, ওই বহুতলের ছয় ও সাত তলার পিছনের অংশে মেরামতির জন্য ভারা লাগানো হয়েছিল। এ দিন দুপুর থেকে আট শ্রমিক মেরামতির কাজ করছিলেন। কংক্রিটের একটি পিলার কেটে নামানোর সময়, পিলারের একাংশ কয়েক জন শ্রমিকের হাত পিছলে ভারার উপরে পড়ে। পুলিশের অনুমান, পিলারের ভার সামলাতে না পেরে পুরো ভারাই নীচে পড়ে যায়।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, কলকাতা পুলিশের দক্ষিণ-পূর্ব ট্রাফিক গার্ডের ওসি সুমন মুখোপাধ্যায় এবং গড়িয়াহাট থানার সার্জেন্ট কালীশঙ্কর কুণ্ডু প্রথমে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তাঁরা দমকল কর্মীদের সঙ্গে ছয় তলায় আটকে পড়া দুই শ্রমিককে উদ্ধার করেন। দমকলের এক কর্তা জানান, ওই দুই শ্রমিক সাত তলা থেকে পা পিছলে ছ’তলার ১২ নম্বর ফ্ল্যাটের এসি-র খাঁচার উপরে পড়ে আটকে যান। গ্যাসকাটার দিয়ে লোহার খাঁচা কেটে তাঁদের বার করা হয়।
দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকায় বিকেলের ব্যস্ত সময়ে ওই ঘটনা ঘটায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। পথ চলতি লোকজন কৌতূহলী হয়ে ওই বহুতলে ঢুকে পড়েন। এ দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভারার বাঁশগুলি স্তূপাকার হয়ে বাড়ির পিছনের অংশে পড়ে রয়েছে। বহুতলের আবাসিকেরা কাজ থেকে ফিরে দারোয়ান ও গাড়িচালকদের কাছে আহতদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। এক আবাসিক জানান, ঠিকাদার যখন ভারা বাঁধছেন, সেই সময় তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। শ্রমিকদের বিমা করানো আছে কি না। ওই আবাসিকের অভিযোগ, ঠিকাদার সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যান। |