মোগলাই খানার টোপ দিয়ে অফিস থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীকে। আর সেই সুযোগে ফাঁকা অফিসে ঢুকে ভল্ট খুলে কুড়ি লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট দেয় ওই অফিসেরই এক কর্মী। তার পরেও অবশ্য প্রতিদিনই ওই ব্যক্তি অফিসে আসছিল আর পাঁচ জন কর্মীর মতোই। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়তে হল তাকে।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, অদ্বৈত রায় নামে ওই কর্মী ও তার এক বন্ধু বাবলু মণ্ডলকে মঙ্গলবার সকালে রিজেন্ট পার্ক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ১৯ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা।
পুলিশ সূত্রের খবর, রিজেন্ট পার্ক এলাকায় একটি বেসরকারি লগ্নিকারী সংস্থার অফিস রয়েছে। সেখানেই বছর দেড়েক ধরে কাজ করছে অদ্বৈত। গত ২ মার্চ, শনিবার সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ অন্য কর্মীরা অফিস বন্ধ করে চলে যান। ছিলেন শুধু বয়স্ক এক নিরাপত্তারক্ষী। অভিযোগ, রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ওই নিরাপত্তারক্ষীর মোবাইলে একটি ফোন আসে। জানানো হয়, ওই অফিসে আগে যে ম্যানেজার দায়িত্বে ছিলেন, তিনি একটি প্রয়োজনে সেখানে আসবেন। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, দিন সাতেক আগেই ওই অফিসে নতুন এক জন ম্যানেজার দায়িত্বে এসেছেন। |
চুরি যাওয়ার পরে উদ্ধার হওয়া সেই টাকা। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ জানায়, এর পরে রাত ৯টা নাগাদ বাবলু রিজেন্ট পার্কের ওই অফিসে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীকে জানায়, সে পুরনো ম্যানেজারের বন্ধু। ওই রক্ষী পুলিশকে জানিয়েছেন, বাবলু তাঁকে বলেছিল, “ম্যানেজার সাহেব কিছুক্ষণ পরে আসবেন। ওঁর খুব খিদে পেয়েছে। মোগলাই এনে রাখতে বলেছেন। তিনটে মোগলাই নিয়ে এস। সবাই মিলে খাব।” বাবলু ওই নিরাপত্তারক্ষীকে দেড়শো টাকা দেয়। বয়স্ক ওই রক্ষী একা বেরিয়ে রানিকুঠি থেকে মোগলাই আনতে যেতে না চাইলে বাবলুও সঙ্গী হয়।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অফিস থেকে বেরোনোর সময়ে বাবলু দরজাটি ভেজিয়ে রেখে চলে গিয়েছিল। সে ও নিরাপত্তারক্ষী অফিস থেকে বেরোতেই রাস্তায় লুকিয়ে থাকা অদ্বৈত অফিসে ঢোকে। এর পরে ভল্ট খুলে ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে চুপিসাড়ে চম্পট দেয়। বেশ কিছুক্ষণ পরে মোগলাই নিয়ে ফিরে আসেন ওই নিরাপত্তারক্ষী। ততক্ষণে তাঁর পিছনে পিছনে আসা বাবলুও সুযোগ বুঝে চম্পট দিয়েছে। এর পরে ৪ মার্চ সোমবার সকালে কর্মীরা অফিসে এসে দেখেন, ভল্ট থেকে টাকা উধাও। বিষয়টি জানিয়ে রিজেন্ট পার্ক থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ওই বেসরকারি সংস্থার কর্তারা। ঘটনার তদন্তে নামেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ওই সংস্থার ভল্ট রক্ষণাবেক্ষণকারী অফিসার নতুন এসেছেন। তিনি ভাল করে ভল্টটি লক করতে পারেননি। ২ মার্চ রাতে তিনি ভল্ট বন্ধ করার সময়ে পাশে দাঁড়িয়ে অদ্বৈত সে কথা বুঝতে পারে। সে জন্য সকলের সঙ্গে অফিস থেকে বেরিয়ে কিছুটা যাওয়ার পরেই বন্ধু বাবলুকে ফোনে পুরো পরিকল্পনার কথা জানিয়ে অফিসের সামনে চলে আসতে বলে সে। নিজেও বাইক ঘুরিয়ে চলে আসে। বাবলুর সঙ্গে এক লক্ষ টাকার রফা হয় বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন।
অন্য দিকে, ডোভার পার্ক এলাকার বাসিন্দা, ডেপুটি জার্মান কনসালের ছ’তলার ফ্ল্যাটের জানলা দিয়ে ঢুকে আলমারি থেকে দামি ক্যামেরা ও টাকা চুরির অভিযোগে পার্ক সার্কাস থেকে বাবু খান নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। ১০ মার্চ রাতে ওই চুরির ঘটনাটি ঘটেছিল। |