বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দাবিতে কর্তৃপক্ষকে রাতভর ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন যাদবপুরের এক দল পড়ুয়া। গত বৃহস্পতিবারের সেই ঘটনায় উপাচার্যের দক্ষতা নিয়েই কার্যত প্রশ্ন তোলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর মন্তব্য, “কয়েক জন ছোট ছেলেমেয়েকে যিনি সরকারি নির্দেশিকার মানে বোঝাতে পারেন না, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় চালাবেন কী করে?” মন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিবাদ করে যাদবপুরের শিক্ষক-শিক্ষিকারা উপাচার্যের পাশেই দাঁড়িয়েছেন।
মঙ্গলবার সই সংগ্রহ অভিযানে নামেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বিবৃতিতে সই করেছেন সুকান্ত চৌধুরী, সুপ্রিয়া চৌধুরীর মতো বিশিষ্ট অধ্যাপকেরাও। বিকেলে আচার্য তথা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে সাম্প্রতিক ঘটনা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ‘জুটা’র এক দল প্রতিনিধি। উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে তাঁর প্রতি সহমর্মিতা জানায় জুটা। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই উদ্যোগের ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্রভোটের মনোনয়ন তোলাকে কেন্দ্র করে হাঙ্গামায় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক পুলিশকর্মী মারা যান। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকার জানায়, আপাতত সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন স্থগিত থাকবে। কিন্তু যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ তা মানতে নারাজ। অবিলম্বে নির্বাচন চেয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে টানা ২২ ঘণ্টা কর্তৃপক্ষকে ঘেরাও করে রাখেন তাঁরা। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের দক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী। ওই ঘেরাও-বিক্ষোভের পিছনে কারও মদত রয়েছে কি না, তা জানতে তিনি উচ্চশিক্ষা সচিবের কাছে রিপোর্ট চান।
মন্ত্রীর মন্তব্যের বিরোধিতা করে শিক্ষকদের বক্তব্য, ক্যাম্পাসে সাম্প্রতিক ঘটনা পরম্পরায় তাঁরা উদ্বিগ্ন। বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত অন্যদের উদ্দেশ্য ও দক্ষতা নিয়ে সাধারণের মধ্যে যে-বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছে, তাতে তাঁরা খুবই বিচলিত। এক বিবৃতিতে শিক্ষকেরা জানান, যে-ছাত্র অসন্তোষের শিকড় ক্যাম্পাসের বাইরে, তা রোধ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ কী-ই বা করতে পারেন! বরং ওই বিক্ষোভের ঝক্কি যাঁদের সহ্য করতে হয়, সেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষকদের পাশেই দাঁড়ানো দরকার, তাঁদের সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা দরকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭০ জনেরও বেশি শিক্ষক এই বক্তব্য সমর্থন করে বিবৃতিতে সই করেন। সুকান্তবাবু পরে বলেন, “আমি এই বক্তব্য সমর্থন করি, এতে দ্বিধাহীন ভাবে স্বাক্ষরও করেছি।” বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সম্বন্ধে মন্ত্রীর এ ধরনের মন্তব্যের সঙ্গত কারণ নেই বলে মনে করেন ওই অধ্যাপক।
মূলত যাঁর বিরুদ্ধে মন্ত্রীর মন্তব্য ঘিরে প্রতিবাদ, সেই উপাচার্য শৌভিক ভট্টাচার্য কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে এ দিন শিক্ষক সংগঠন ‘আবুটা’ আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি বলেন, “এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভীষণ অসহিষ্ণুতা দেখা যাচ্ছে। এটা কাম্য নয়।” অনেকেই মনে করছেন, উপাচার্যের এই আক্ষেপের লক্ষ্য আসলে শিক্ষামন্ত্রীই। যাদবপুরের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর ৩১ মার্চের মধ্যে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল বা ইসি-র বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সরকারকে চিঠি লিখে দ্রুত ভোটের অনুমতি চাওয়া হবে। নতুন সংসদ গঠিত না-হওয়া পর্যন্ত পুরনো সংসদই কাজ চালাবে। দাবি আদায়ে পড়ুয়ারা ঘেরাও-বিক্ষোভের যে-পথ নিয়েছেন, তার নিন্দা করেছে ইসি। |