উকিলের সামনে মুন্নাকে গোয়েন্দা-জেরার আর্জি
বুকে ব্যথা হচ্ছে বলায় গার্ডেনরিচে পুলিশ অফিসার খুনের ঘটনায় ধৃত মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নাকে মঙ্গলবার এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ দিনই ওই অভিযুক্তের আইনজীবীরা আলিপুর আদালতে আবেদন জানান, সিআইডি হেফাজতে তাঁদের উপস্থিতিতেই ধৃতকে জেরা করার নির্দেশ দেওয়া হোক।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কোনও অভিযুক্ত চাইলে তাঁর আইনজীবীরা তাঁকে জেরা করার সময়ে উপস্থিত থাকতে পারেন। সর্বোচ্চ আদালতের ওই নির্দেশের উল্লেখ করে মুন্নার আইনজীবীরা আদালতে জানান, তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যান মুন্নাকেও সেই সুযোগ দেওয়া হোক। মুন্নার মেয়ে সাবাতাজ যাতে সিআইডি হেফাজতে তাঁর বাবার সঙ্গে মাঝেমধ্যে করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করার আবেদনও জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত নেতার আইনজীবীদের আর্জি, ধৃতের ব্লাড সুগার-সহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যা আছে। সেটা বিবেচনা করে সিআইডি হেফাজতে তাঁর প্রকৃত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী দিতে হবে ভাল মানের খাবারও। সরকারি আইনজীবী নবকুমার ঘোষ আদালতে উপস্থিত না-থাকায় এ দিন শুনানি হয়নি। কাল, বৃহস্পতিবার এই সব আবেদনের শুনানি হবে।
সিআইডি অবশ্য সোমবারেই জানিয়েছিল, উপযুক্ত পথ্য-ওষুধ আর পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করেই মুন্নাকে জেরা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা যে অভিযুক্তের স্বাস্থ্যের দিকে সতর্ক নজর রেখেছে, এ দিনও তার প্রমাণ মেলে। মুন্না বুকে ব্যথার কথা বলায় সিআইডি-র গোয়েন্দারা কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়। মুন্নার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনির সমস্যা রয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ মুখঢাকা অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জরুরি বিভাগে। সেখানকার কার্ডিওলজিস্টরা তাঁকে পরীক্ষা করেন। ওই হাসপাতালের সুপার তমাল রায় বলেন, “ইকবালের ইসিজি, ইকো-কার্ডিওগ্রাফ, ট্রপ-টি পরীক্ষা করা হয়েছে। কোনও গোলমাল পাওয়া যায়নি। তার পরে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকেরাও তাঁকে পরীক্ষা করেন। তাঁরাও কিছু সমস্যা দেখেননি। তাই ওঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি।” মুন্নার মেয়ে সাবাতাজ এবং ছোট ছেলে সেফও গিয়েছিলেন হাসপাতালে।
বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য সাবা সোমবার ভবানী ভবনে গেলেও সিআইডি তাঁকে দেখা করতে দেয়নি। শনিবারেও একই ভাবে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনকী ভবানী ভবনে মুন্নার সঙ্গে তাঁর আইনজীবীদেরও দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। মুন্নার আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী অভিযুক্ত চাইলে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তাঁর আইনজীবীরা উপস্থিত থাকতে পারেন। আমরা ইকবালের জন্য এই আবেদন করে সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশের প্রতিলিপি আলিপুর আদালতে জমা দিয়েছি। তাঁর মেয়ে সাবাতাজ যাতে ভবানী ভবনে গিয়ে মাঝেমধ্যে বাবার সঙ্গে দেখা করতে পারেন, সেই অনুমতিও চাওয়া হয়েছে।” অশোকবাবুর অভিযোগ, এক জন ডায়াবেটিক রোগীর যে-মানের খাবার প্রয়োজন, সিআইডি হেফাজতে মুন্নাকে তা দেওয়া হচ্ছে না। তাই উপযুক্ত পথ্যের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেওয়ার জন্যও আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে।
১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচে হরিমোহন ঘোষ কলেজে ছাত্রভোটের মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে হাঙ্গামায় গুলি চলে। প্রাণ হারান কলকাতা পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর তাপস চৌধুরী। সেই ঘটনায় মুন্না অন্যতম মূল অভিযুক্ত। অশোকবাবু জানান, পুলিশ অফিসার খুন ছাড়াও দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধানোর মামলায় ইকবাল অভিযুক্ত। কিন্তু ওই মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে তাঁকে এখনও আদালতে পেশ করেনি সিআইডি। ওই আইনজীবী বলেন, “ধৃতকে যাতে শীঘ্রই ওই মামলার অভিযুক্ত হিসেবেও আদালতে পেশ করা হয়, আমরা সেই আবেদন জানিয়েছি। তার শুনানিও হবে বৃহস্পতিবার।”
ঘটনার পরে ২৩ দিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকার পরে মুন্না ধরা পড়েন বিহারে। তবে যাঁর সঙ্গে তিনি কলকাতা ছেড়েছিলেন, সেই হাসান নাকভি ওরফে সানুর খোঁজ এখনও পায়নি সিআইডি। গোয়েন্দাদের আশা, সানুকে গ্রেফতার করতে পারলে মুন্নার বড় ছেলে অনিল-সহ বাকি অভিযুক্তদেরও খোঁজ মিলবে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, পলাতক অবস্থায় আলিগড় পর্যন্ত মুন্নার এক রকম ছায়াসঙ্গী ছিলেন সানু। ঝাড়খণ্ড, বিহার, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশের মতো ভিন্ রাজ্যের বিভিন্ন আস্তানায় মুন্নার থাকার ব্যবস্থা সানুই করে দিয়েছিলেন বলে জেরায় জানিয়েছেন মুন্না। তদন্তকারীদের সন্দেহ, পলাতক অভিযুক্তদের লুকিয়ে থাকার ব্যবস্থাও করেছেন সানুই। তাঁকে গ্রেফতার করতে পারলে গার্ডেনরিচ কাণ্ডে ব্যবহৃত অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্রের সন্ধানও মিলবে বলে মনে করছে সিআইডি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.