গার্ডেনরিচে গোলমালের পরে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে রঞ্জিতকুমার পচনন্দাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এ বার ওই হাঙ্গামায় পুলিশ অফিসার খুনের মামলায় আচমকা সরকারি আইনজীবীকেই বদলে দেওয়া হল।
মঙ্গলবার, ঘটনার ঠিক এক মাসের মাথায় স্পেশ্যাল পাবলিক প্রসিকিউটর তথা সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী নবকুমার ঘোষকে সিআইডি-র তরফে মৌখিক ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁকে আর সরকারি আইনজীবী হিসেবে ওই মামলা লড়তে হবে না। তাঁর জায়গায় অন্য আইনজীবী নিয়োগ করা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে নববাবুকে ওই মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। এসআই-হত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত, তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নাকে গ্রেফতার করার পরে শনিবার দুপুরে আদালতে তোলা হলে সে-দিনও সরকার পক্ষের আইনজীবী হিসেবে আদালতে দাঁড়িয়ে নববাবু তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেছিলেন।
নববাবু এ দিন বলেন, “রাতে সিআইডি-র পক্ষ থেকে এক অফিসার ফোন করে আমাকে জানিয়ে দেন, গার্ডেনরিচের মামলায় আমার আর সরকারি আইনজীবী হিসেবে থাকার প্রয়োজন নেই। ওই মামলায় সিআইডি অন্য আইনজীবী দাঁড় করাচ্ছে।”
নতুন আইনজীবী কে বা কারা?
সিআইডি এবং আলিপুর আদালত সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রধান সরকারি কৌঁসুলি শ্যামাদাস গঙ্গোপাধ্যায় এবং তাঁর সঙ্গে অন্য এক আইনজীবীকে গার্ডেনরিচ মামলায় সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে।
খাদিম-কর্তা অপহরণ, শিলদায় ইএফআর শিবিরে মাওবাদী হানার মতো মামলায় সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী হিসেবে লড়েছেন নববাবু। কেন সরানো হল তাঁকে?
এ ব্যাপারে সিআইডি-র তরফে সরকারি ভাবে কিছু বলা হয়নি। তবে কিছু সিআইডি অফিসার এবং আলিপুর আদালতের আইনজীবীদের কেউ কেউ মনে করছেন, নববাবু সিপিএমের ঘনিষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে পরিচিত। ওই মামলায় তার প্রভাব পড়লে শাসক দল তৃণমূলের পক্ষে সেটা অস্বস্তির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে পুলিশ অফিসার খুনের মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত যেখানে তৃণমূল বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না। তৃণমূলের আরও কয়েক জন নেতার নাম ওই মামলায় ইতিমধ্যেই চলে এসেছে।
তবে তদন্তকারী সংস্থা এবং আইনজীবীদের অন্য অংশের মত, নববাবুকে সরানোর মধ্যে রাজনীতির রং খুঁজতে যাওয়া অর্থহীন। তাঁদের বক্তব্য, নববাবু অন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলায় বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করছেন। এত মামলার চাপে অনেক সময় শুনানির দিনে আদালতে হাজিরও হতে পারেন না তিনি। চাপ থেকে অব্যাহতি দিতেই গার্ডেনরিচের মামলায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
যেমন এ দিন মুন্নার আইনজীবীরা যখন ধৃতের জন্য সিআইডি হেফাজতে বিশেষ কিছু সুবিধা চেয়ে আলিপুর আদালতে আবেদন করেন, নববাবুসেই সময় উপস্থিত ছিলেন না। অন্য মামলার কাজে তিনি তখন অন্য আদালতে। আলিপুর আদালতে মুন্নার আইনজীবীরা আর্জি জানান, সিআইডি হেফাজতে তাঁদের উপস্থিতিতেই ধৃতকে জেরা করা হোক। তাঁদের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী অভিযুক্ত চাইলে তাঁর আইনজীবীরা তাঁকে জেরা করার সময় উপস্থিত থাকতে পারেন। মুন্নার মেয়ে সাবাতাজ যাতে সিআইডি হেফাজতে তাঁর বাবার সঙ্গে মাঝেমধ্যে করতে পারেন, সেই আবেদনও জানানো হয়েছে। অভিযুক্ত নেতার আইনজীবীদের আর্জি, ধৃতের ব্লাড সুগার-সহ নানা শারীরিক সমস্যা আছে। তাঁর প্রকৃত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী দিতে হবে ভাল মানের খাবারও। কিন্তু সরকারি আইনজীবী নবকুমার ঘোষ এ দিন আদালতে না থাকায় শুনানি হয়নি। কাল, বৃহস্পতিবার এ সব নিয়ে শুনানি হবে। বুকে ব্যথা হচ্ছে বলায় মুন্নাকে এ দিন বিকেলে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বিভিন্ন পরীক্ষা করে গণ্ডগোল কিছু পাওয়া যায়নি বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। তাই পরীক্ষার পরে তাঁকে ভর্তি না-করে সিআইডি-র হাতেই তুলে দেওয়া হয়।
মুন্নার আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “ডায়াবেটিক রোগীর যে-মানের খাবার প্রয়োজন, সিআইডি হেফাজতে মুন্নাকে তা দেওয়া হচ্ছে না। তাই উপযুক্ত পথ্যের ব্যবস্থা করার জন্যও আবেদন জানানো হয়েছে।” অশোকবাবু জানান,
পুলিশ অফিসার খুন ছাড়াও দাঙ্গাহাঙ্গামা বাধানোর মামলায় ইকবাল অভিযুক্ত। ধৃতকে যাতে শীঘ্রই ওই মামলার অভিযুক্ত হিসেবেও আদালতে পেশ করা হয়, সেই আবেদন
করা হয়েছে। |