হুল্লোড়
জিৎদা বলেছিল নায়িকা হতে পারবে

ঝাঁ চকচকে হাইরাইজের এগারো তলার শোয়ার ঘরের জানলা দিয়ে দেখা যায় বহু দূরে কলকাতার আকাশরেখা।
দেখা যায় নতুন বসন্তের চিকন সবুজ গাছগাছালি। দূরে, অনেক নীচে চোখে পড়ে লাল ফুল ফোটা শিমুল গাছ। এমনই টকটকে লাল রঙের আবির নায়িকা শুভশ্রীর ভারি পছন্দের।
ভালবাসেন গোলাপি আর কমলা রঙের আবিরও। ঠিক যেমন রংগুলো চোখে পড়ছে ছবিতে তাঁর পোশাকে।
মনে পড়ে যায় ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’র জন্য মালয়েশিয়ায় শু্যটিং করতে গিয়ে আবির ছাড়াই হোলি খেলেছিল পুরো ইউনিট। মেক আপের রং দিয়ে। শুভশ্রীর সঙ্গে হোলি খেলেছিলেন দেবও। রং খেলায় মেতে উল্লাস করতে করতে পুরো ইউনিট রাস্তায় নেমে পড়েছিল। পর্যটকেরা তাঁদের হুজ্জুতি দেখে তাজ্জব হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল।
সেটা ছিল ২০০৭-এর বসন্ত। ২০১৩-র বসন্তে দেব আর নেই। নেই অন্য কোনও পুরুষ বন্ধুও। কী ভাবে রঙিন হবেন শুভশ্রী? কে তাঁকে রাঙিয়ে দেবেন আবিরে? কিংবা কাকে তিনি রাঙাবেন? “আত্মীয়স্বজন, ভাইবোনেদের সঙ্গেও তো মজা করা যায়। আমাদের বধর্মানের বাড়িতে, জয়েন্ট ফ্যামিলি। সেখানে দু’দিন ধরে দোল খেলা চলে। আর প্রচুর খাওয়াদাওয়া হয়। এ বার দোলে যদি শু্যটিং না থাকে বর্ধমানে নিজের বাড়িতেই থাকব,” উদ্দীপনা ঝরানো গলায় বললেন শুভশ্রী।

কিন্তু শুভশ্রীর মতো নায়িকার দোল কাটবে বর্ধমানে, কোনও নায়কের সঙ্গে হোলির রঙে রাঙিয়ে নেওয়ার উন্মাদনা ছাড়া! জিৎ কিংবা অঙ্কুশের সঙ্গেও তো হোলি খেলা যায়? শুভশ্রী বললেন, “সেটা কী করে সম্ভব? আমি তো ওদের সে রকম ক্লোজ নই যে দোল খেলব,” এখন যদি দোলের দিন ‘বস’-এর শু্যটিং হয়। তা হলে কাজের শেষে ইউনিটের সকলের সঙ্গে দোল খেলা যেতেই পারে। তখন যদি জিৎদা থাকেন রং দেব। কিন্তু উদ্দাম দোল খেলা যেটা ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’র সময় হয়েছিল সেটা বোধ হয় হবে না।”
দোল খুব ভাল লাগলেও শুভশ্রীর একেবারে অপছন্দ পরকীয়া প্রেম। “নিজেদের স্বামী বা স্ত্রীর সামনে ‘সিলসিলা’য় রেখা আর অমিতাভ যে ভাবে দোল খেলেছিলেন সেটা একদম ন্যাকামো। সোজা সরল হইহইয়ের দোলই পছন্দ। রং যদি লাগাতেই হয় নিজের প্রেমিক বা বয়ফ্রেন্ডকে লাগাও। পরের স্বামী, পরের বৌ টেনে এনে কেন অত ছলাকলা?” উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন শুভশ্রী।
নায়ক যখন নেই, নায়িকাদের সঙ্গেও তো দোল খেলা যায়। “তা তো যায়ই। যদি কাছাকাছি তারা থাকে তো খেলতে আপত্তি কোথায়?” পালটা ঝটিতি জবাব শুভশ্রীর।
শ্রাবন্তী, তনুশ্রী, মিমি আর রাইমা সেন এঁদের যদি দোলের দিনে রঙিন দেখতে ইচ্ছে করে কোন রং পছন্দ হবে শুভশ্রীর? শুভশ্রী বললেন, “শ্রাবন্তীকে মানাবে টকটকে লাল রঙে, মিমির জন্য প্রুশিয়া পিঙ্ক, তনুশ্রীর গায়ে মুখে দারুণ মানাবে কমলা রঙের আবির। আর রাইমাকে মানাবে হলুদ আবিরে।”
কিন্তু জীবন মানে শুধুই তো রং নয়। আছে তার সাদা, কালো কিংবা ধূসর দিকও। আছে প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়। আছে হার জিতের টক্করে রক্তাক্ত হওয়াও।
তা সত্ত্বেও শ্রাবন্তীকে কী রং মানাবে বলতে দ্বিধান্বিত হন না শুভশ্রী। বলেন, “কেউ আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। শ্রাবন্তীও নয়। আমি প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকতেই ভালবাসি না। শুধু জানি আমাকে অনেক বেশি ‘গ্রো’ করতে হবে, আমার লড়াইটা নিজেকে সমৃদ্ধ করে তোলার মধ্যেই।”
একুশ বছর বয়সেই (নিজের বলা) যেন অতি পরিণত শুভশ্রী। এই বয়সেই বিরাট, শৌখিন ফ্ল্যাটের মালকিন তিনি নিজের পরিশ্রম, আর অজির্র্ত টাকায়। বললেন, “যখন গল্ফগ্রিনের ছোট ফ্ল্যাটে ছিলাম বছর দুয়েক আমি কোনও ছবিতে কাজ করিনি। ভাল অফার ছিল না। কিন্তু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছি নতুন ভাল কাজের আশায়। সেই সময় অবশ্যই মা-বাবার সাপোর্ট পেয়েছি। অস্বীকার করতে পারব না দেবের মানসিক সাহায্যও। আজও আমার চিন্তাভাবনা পজিটিভ। কখনও মন খারাপ হলে আবার কোথা থেকে যেন লড়াইয়ের শক্তিটা পেয়ে যাই। সংগ্রামটা চলছে চলবে, যত দিন ইন্ডাস্ট্রিতে আছি।”
দেবের সঙ্গে ‘খোকা ৪২০’ ছবির কাজ শেষ করার পর আপাতত শুভশ্রী ব্যস্ত জিতের সঙ্গে ‘বস’এর শু্যটিং নিয়ে। আরও বেশ কিছু ছবিতে কাজের কথা চলছে। তবে তাঁর এই মুহূর্তের ইচ্ছে ‘বেডরুম’ বা ‘ল্যাপটপ’ বা ‘মুক্তধারা’ গোছের ভিন্ন স্বাদের ছবিতে অভিনয় করা। “মেনস্ট্রিম ছবি করে পরিচিতি, প্রতিষ্ঠা পেয়েছি। কিন্তু মেনস্ট্রিম ছবিগুলো একেবারেই নায়কপ্রধান। নায়িকাদের বলতে গেলে কিছুই করার থাকে না। সেই জন্যই ভিন্ন ধরনের ছবিতে অভিনয় করে শিখতে চাই কিছু। সেখানে মেয়েদের চরিত্রে অভিনয় করার মতো কিছু থাকে। ধরুন এই সাক্ষাৎকারের মধ্যে দিয়েই পরিচালকেদের এটা জানালাম। তাঁরা যদি যোগ্য মনে করেন কাজে নেবেন।”
*
বিয়ের পর কোয়েল এখন ঘন ঘন ছবি করতে চাইছেন না। সেক্ষেত্রে জিৎ-কোয়েল বা দেব-কোয়েলের সেই জুটি থাকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাচ্ছে। এই রকম একটা অবকাশকে কি কাজ লাগাবেন না শুভশ্রী? “আমি এ ভাবে ভাবিইনি। যখন যেমন কাজ আসবে, করে যাব। এখন যেমন জিৎদার সঙ্গে কাজ করছি। সেরকম অফার থাকলে দেবের সঙ্গেও কাজ করব। আমাদের বন্ধুত্বটা তো এখনও আছে।”
কেমন লাগছে এই প্রথম জিতের নায়িকা হয়ে কাজ করতে?
দারুণ লাগছে। মাঝে মাঝে নস্টালজিক লাগে।
কীসের নস্টালজিয়া?
‘পিতৃভূমি’ ছবিতে আমি জিৎদার বোনের রোলে অভিনয় করেছিলাম। তখন ওঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমি কোনও দিন তোমার নায়িকা হতে পারব? জিৎদা বলছিল, ‘কেন পারবে না? নিশ্চয়ই পারবে।’ শেষমেশ সত্যিই জিৎদার সঙ্গে কাজ করছি। আগের শুভশ্রীর আর এখনকার শুভশ্রীর সংগ্রামটা একই রকম থাকলেও সময়ের ব্যবধানে তফাত হয়েছে অভিজ্ঞতার। তা কাজে লাগিয়ে শুভশ্রী চান সঠিক ভাবে পা ফেলতে।
আজকের শুভশ্রী সপ্রতিভ ভাবে সব প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দিতে জানেন। যুক্তি-তর্কের চাপানউতোরে দিব্যি সহজ ভাবে সোজাসুজি কথা বলেন। নারী হিসেবে ক্রমশ পূর্ণতার দিকে এগোচ্ছেন তিনি। তাঁর চোখ ভরা সাতরঙা স্বপ্ন, এখনও উজ্জ্বল দোলের রঙের মতোই। সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই রঙিন থাকতে চান তিনি। আর এই বসন্তে দেবের প্রতি কোনও বার্তা আছে কি তাঁর?
‘হ্যাপি হোলি,’ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বলেন শুভশ্রী।

ছবি: সোমনাথ রায়, মেক আপ শিল্পী: নবীন দাস, স্টাইলিং ও পোশাক: স্যান্ডি
* ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.