তারাবাজি
যা হওয়ার তা হবে
তাঁর মারা যাওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগেকার কথা। তিনি তখন বাক্শক্তি হারিয়েছেন। কিন্তু নিজেকে প্রকাশ করার, অন্যদের সঙ্গে ভাব বিনিময় করার অদম্য ইচ্ছে তাঁর মধ্যে। তখন হাসপাতালে একদল চিকিৎসক পণ্ডিত রবিশঙ্করকে সর্বক্ষণ দেখাশোনা করছিলেন। কিন্তু বয়সের ভার কিংবা অসুস্থতা কোনওটাই তাঁর অফুরান প্রাণশক্তি কেড়ে নিতে পারেনি।
মনে কোনও ভাবনা এলে কিছুতেই ব্যক্ত করতে পারতেন না। ঠোঁট কেঁপে কেঁপে উঠত। কিন্তু কিছুই প্রকাশ করে উঠতে পারতেন না। কথা বলার আগেই তাঁর ভাবনাগুলো কোথায় যেন হারিয়ে যেত। এই দৃশ্য দেখে পণ্ডিত রবিশঙ্করের জামাই জো রাইট তাঁকে কলম আর কাগজ এগিয়ে দিয়েছিলেন। মনের ভাব প্রকাশ করতে বলতেন কাগজে লিখে। কিংবদন্তি শিল্পীর আলতো আঙুলগুলো সব সময় অস্থির হয়ে থাকত। যখন তিনি তত অসুস্থ ছিলেন না, তখন অনেকেই দেখেছেন কী ভাবে তাঁর আঙুলগুলো হাওয়ার মধ্যে একটা কাল্পনিক বাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে চলেছে।
সেদিন রোগশয্যায় কাগজ এগিয়ে দিতে কাঁপা হাতে কলম ধরে বাংলায় লিখেছিলেন, “যা হওয়ার তা হবে।”
এ কি অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর সঙ্গে সন্ধি?
এ কি জীবনের সব থেকে রূঢ় সত্যকে গ্রহণ করার সংকেত?
পণ্ডিত রবিশঙ্করের শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে কন্যা অনুষ্কাশঙ্কর
নিয়তির কাছে আত্মসমর্পণের আগে বড় কোমল ভাবে তা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত?
হতে পারে এ সবেরই কিছু একটা। কিংবা হয়তো এর চেয়েও বেশি দার্শনিক এক মাত্রা ছুঁয়ে আছে ওই ছত্রে ‘যা হওয়ার তা হবে।’
নিজের মনের এই ভাবনাকে লিপিবদ্ধ করার দিন কয়েক পরেই পণ্ডিতজি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
কিন্তু চলে যাওয়ার পরও তাঁর অন্তিম কালের এই অভিব্যক্তি রয়ে গেল।
রয়ে গেল চার পাশে ছড়িয়ে থাকা তাঁর অন্য অনেক স্মৃতির পাশাপাশি।
ঠিক যেমন রয়ে গেল তাঁর সঙ্গীতের সম্পদ। কিংবা তাঁর সেতারের অমোঘ মূর্ছনা।
মৃত্যুর পর তাঁর অনুপস্থিতি যখন অসহ্য মনে হয়েছে তখন ওই একটি লাইনই মনে শক্তি জুগিয়েছে।
সেই জন্যই তাঁর কন্যা অনুষ্কা কথাগুলি বাঁ হাতের ওপর উলকিতে ফুটিয়ে তুলেছেন। ঠিক তাঁর কবজির ওপরে।
পণ্ডিতজির মূল হাতের লেখা স্ক্যান করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উলকিতে।
পিতা-পুত্রী, গুরু-শিষ্য এই সম্পর্কের গভীর বন্ধনকে সুরক্ষিত করার জন্যই এই উলকিচিহ্ন।
রবিবার বিকেলে অনুষ্কা যখন নেহরু পার্কে বাবার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে আসেন, তাঁর হাতের উলকি জানান দিচ্ছিল বাবার চিরন্তন উপস্থিতি।
যখন অনুষ্কা বাবার স্মৃতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন তখনও তিনি সে কথা জানাননি। চাপা বেদনা ফুটে উঠছিল তাঁর কণ্ঠস্বরে। বুঝতে অসুুবিধে হয় না তিনি এখনও শোককে উত্তীর্ণ করার কঠিন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গভীর শোকের অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে আসছিল তাঁর প্রতিটি কথা। তাঁর কথায় এটাই প্রকাশ পাচ্ছিল বারবার, পণ্ডিত রবিশঙ্করের মেয়ে হওয়াটা জীবনের কত বড় আশীর্বাদ!
বাতাসে ভরাট তখন রজনীগন্ধার সুগন্ধ। অনুষ্কার ছেলে ছোট্ট জুবিনের পরনে প্যাস্টেল সবুজ কুর্তা আর চুড়িদার। মায়ের কোলে বসেছিল সে। রবিশঙ্কর ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীদের বাজানো অর্কেস্ট্রা শুনছিল। মাঝে মাঝে হাঁটতে হাঁটতে টলোমলো পায়ে মঞ্চের সামনের দিকে চলে আসছিল। আর একটু এগোলেই তো মালায় সাজানো ফ্রেমে আঁটা ‘দাদু’র ছবি।
সুকন্যাশঙ্কর ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের স্ত্রী গুরশরণ কউর
নোরা জোনসের পরনে হাতকাটা কালো সালোয়ার। মাথার চুল টেনে খোঁপা করে বাঁধা। পিয়ানো শিল্পী বন্ধু পিটের সঙ্গে বসেছিলেন সভার দ্বিতীয় সারিতে। অনুষ্কাশঙ্কর এবং তাঁর মা সুকন্যাশঙ্কর যদিও বা কিছু কথা বললেন, নোরা বেছে নিলেন নিস্তব্ধতা। একটি শব্দও উচ্চারণ করলেন না। নির্বাক শ্রোতা হয়েই থাকলেন ।
উৎসাহী আলোকচিত্রীরা ছবি তুলতে চাইলে তাঁদের অনুরোধ করা হয় যেন তাঁরা নোরার ‘প্রাইভেসি’কে সম্মান করেন। কথায় বলে শোক হল খুব ব্যক্তিগত এক আবেগ। জীবনের কত স্মৃতিই তো মানুষের মনের কোণে ভেসে ওঠে। কখনও স্মৃতিচারণের মধ্যে দিয়ে সজীব হয়ে ওঠে অতীত মুহূর্ত। কেউ অতীতের যন্ত্রণার মুহূর্ত অন্য কারও সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে নিজের যন্ত্রণা কমাতে চান। আবার কেউ বা গুটিপোকার মতো খোলসের মধ্যে নিজেকে বন্দি করে রাখেন।
সোমবার বিকেলে পরিবার রওনা হন বেনারসের উদ্দেশ্যে। সেই জায়গায়, যেখানে পণ্ডিতজি ১৯২০ সালের ৭ এপ্রিল জন্মেছিলেন। সেখানেই হিন্দুমতে তাঁর শেষকৃত্য সমাপন হয়। পণ্ডিতজির অস্থিভস্ম ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ভারতে বয়ে এনেছিলেন তাঁর পরিবারবর্গ।
গঙ্গার বুকে একটা ছোট নৌকাবিহারের পরিকল্পনা করা হয়েছিল পণ্ডিতজির পরিবার এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবদের জন্য। অনুষ্কা, নোরা, সুকন্যা, জো, জুবিন, সকলের জন্যই সেটা ছিল পণ্ডিত রবিশঙ্করের অস্থিভস্ম জলে বিসর্জন দেওয়ার আগের মুহূর্তের শেষ সফর।
ভস্ম ভেসে চলে যায়। কিন্তু মুহূর্ত বেঁচে থাকে। সেই স্মরণসভায় যাঁরা উপস্থিত ছিলেন তাঁদের কয়েক জনের বক্তব্য নিয়ে শিল্পীর উদ্দেশে স্মৃতির রাগমালা গ্রন্থনা করল আনন্দplus।


চলে যেতে চেয়েছিলেন একটা দারুণ কিছু করে
একজন বিশ্ববিখ্যাত কিংবদন্তিকে নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করা সত্যিই খুব কঠিন কাজ। বছরের পর বছর ধরে সেই তথ্যচিত্রের অগুন্তি ছবি তোলা হয়েছে। অ্যালান ‘ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে’ এবং ‘টাইটানিক’ ছবির ভিশু্যয়াল এফেক্টস সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পণ্ডিতজির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছরের। শুধু শু্যটিং নয়, তিনি পণ্ডিত রবিশঙ্করের কাছে সঙ্গীতের তালিমও নিয়ে চলেন নিয়মিত ভাবে। “আমার কাছে ওঁর হাতে লেখা ‘সরগম’ এখনও আছে। কিছু স্বরলিপি হোটেলের পাতলা ফিনফিনে কাগজের ন্যাপকিনের ওপরে লেখা। কিছু লেখা আবার টিস্যু পেপারে যা ফ্লাইটে যাওয়ার সময় তিনি আমাকে দিয়েছিলেন। এগুলো আমার কাছে ওঁর দেওয়া অত্যন্ত মূল্যবান উপহার,” বললেন অ্যালান। পণ্ডিতজিকে নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করার সময় জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গেও অনেক কথা হয়েছিল। “আমাদের সঙ্গে জর্জের বারে বারে কথা হয়েছিল। ‘আই হ্যাভ বিন মিসিং ইউ’-এই গান রবিজি তৈরি করার পর জর্জ শুনেছিলেন। বলেছিলেন এই গান অবশ্যই হিট করবে। এ রকম আরও গান তৈরি করার কথা বলেছিলেন ওঁকে। রবিজির উত্তর ছিল, “বহু বছর ধরে চেষ্টা করেছি এই ধরনের গান না বাঁধতে!”
দুঃখ একটাই যে সিনেমার জন্য আরও অনেক গান তিনি বাঁধতে পারেননি। “যখনই দেখা হত, আমাকে জিজ্ঞেস করতেন সিনেমার কথা। বিশ্ব-চলচ্চিত্রের জন্য আরও গান বাঁধতে চাইতেন। আমি একটা সিনেমা বানানোর কথা ভেবেছিলাম যেটার থিম সং উনি বাঁধতে চেয়েছিলেন,” বলেন অ্যালান।
অ্যালানের কাছে সব চেয়ে বিশেষ মুহূর্ত ছিল ৪ নভেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচে হওয়া পণ্ডিতজির অন্তিম কনসার্টটা। “আমি তার আগে অন্য একটা অনুষ্ঠানের একটা ভিডিও রেকর্ড করে রেখেছিলাম। সেটা দেখে পণ্ডিতজি আমাকে বলেছিলেন এ ভাবে তিনি চলে যেতে চান না। তিনি আর একটা বিরাট মাপের শো করতে চান। তার পর যখন শেষ কনসার্টটা ফিল্মবন্দি করছি, তখনই বুঝতে পেরেছিলাম তিনি আসলে কী বলতে চেয়েছিলেন। অক্সিজেন সাপোর্ট নিয়ে শেষ কনসার্টে বাজিয়েছিলেন তিনি। আকাশ-বাতাস জুড়ে তখন শুধুই সঙ্গীতের মূর্ছনা। যখন কনসার্ট শেষ হল, তখন তিনি দৃশ্যত বিহ্বল। তাঁর মুখমণ্ডলে তখন এক আশ্চর্য ভাব। তিনি কাঁদছেন না হাসছেন, দেখে বোঝার উপায় নেই। কিন্তু আমি বুঝেছিলাম সেই অভিব্যক্তির অর্থ। ঠিক এ রকম একটা পরিবেশই তিনি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। যাওয়ার আগেও রেখে যেতে চেয়েছিলেন তাঁর ঝালার ঝঙ্কার,” বললেন অ্যালান।


তুমি কি রোজ স্নান কর?

নোরা জোন্স এবং তাঁর বন্ধু পিট

জো রাইট, অনুষ্কাশঙ্কর এবং তাঁদের ছেলে জুবিন
যে কোনও ছেলের পক্ষেই হবু শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করাটা একটা ভয়ের ব্যাপার। আর সেই হবু শ্বশুরটি যদি হন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, তা হলে তো ভয় তিন চারগুণ বেড়ে যাওয়ারই কথা। কিন্তু প্রাতরাশের টেবিলে জো-র সঙ্গে পণ্ডিত রবিশঙ্করের প্রথম সাক্ষাতের মুহূর্তটা ছিল ভারি অদ্ভুত। একজন হবু শ্বশুর কেরিয়ার থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক ব্যালান্স অনেক প্রশ্নই করতে পারেন। কিন্তু পণ্ডিতজি সে সব কিছুই জানতে চাননি। বরং তিনি জানতে চেয়েছিলেন জো রোজ স্নান করেন কি না। ওই বাউন্সারের ধাক্কায় খানিকটা কাবু হয়ে জো উত্তর দিয়েছিলেন, “হ্যাঁ। বেশির ভাগ দিনই করি।” পণ্ডিতজির উত্তর ছিল, “খুব ভাল।” বলেই তিনি আরও মজা করে বলেছিলেন, “পুরোপুরি স্নান করো, না কি শুধু হাত আর মুখ ধুয়েই সেরে ফেলো ব্যাপারটা?” জো প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, “পুরোপুরি স্নান করি।” ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শিক্ষা দিয়ে যে সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল, তা ক্রমশ পরিণতি পেয়েছিল এক অত্যন্ত মধুর সম্পর্কে।


শর্ট কুতার্র স্টাইল চালু
করেছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর

প্রিয় মানুষদের অদ্ভুত সব নাম দিতে ভালবাসতেন পণ্ডিতজি। অ্যালেনকে বলতেন ‘অ্যালগি’। তন্ময়কে বলতেন ‘ঘোড়া’। “ভোর না হতেই জেগে উঠে জিজ্ঞেস করতেন ঘোড়াটা কই? একটা গানের লাইন সারা জীবন তন্ময়কে মেদুর করে রাখবে। “রবিঠাকুরের ‘তবু মনে রেখো’ গানটি শেষের দিকে সব সময় গুনগুন করতেন জ্যাঠামশাই। ওঁর গলাটা কানে ভাসে। রবিবার স্টেজে বসে যখন বাজাচ্ছি, তখন বারবার মনে পড়ছিল ওঁর গলাটা,” বললেন তন্ময়।
স্টেজে হোক কী স্টেজের বাইরে, স্মৃতি যেন ভাসিয়ে দিচ্ছিল তন্ময়কে। কত কী মনে পড়ছিল। শুধু কি গান? সব সময় ধবধবে সাদা মোজা পরতেন। ছেলেমানুষিতে ভরপুর। “এই যে আজকে আমরা শর্ট কুর্তা পরি, গুরু পাঞ্জাবি পরি এগুলো তো সব উনিই শুরু করেছিলেন। ওঁর পুরোনো কনসার্টের ছবি দেখলেই বোঝা যাবে কবে আপনি ওগুলো সব পরতে শুরু করেছিলেন। আমি তো প্রায়ই ওঁকে বলতাম যে, লোকে ভাবে এগুলো ফ্যাশন জগতে রাজেশ খন্নার অবদান। কিন্তু আমরা জানি এগুলোর রেওয়াজ উনি শুরু করেছিলেন। তার পর এই ঝাঁকড়া চুল আর জুলফি। এই তো এখন দেখি হালফিলের সব বলিউড নায়কেরা কায়দা করে জুলফি রাখছে। এগুলো তো সব ওঁরই শুরু। তা ছাড়াও ইলেকট্রনিক মিউজিক। সেই কবে ‘তানা মনা’ রচনা করেছিলেন। বিভিন্ন ভাবে শব্দের নতুন ব্যবহার করার সাঙ্গীতিক পথ খুঁজেছেন। ওঁর শেষ কনসার্টের আগের কনসার্টে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “স্টেজে আমি ওঁর সঙ্গে বাজালে কেন গাল বাজাই না। বলেছিলাম এটা করলে কে কী বলবে! উনি বলেছিলেন কেউ কিছু বললে আমি আছি। তুমি বাজাও। আর আমি তাই বাজিয়েছিলাম,” বললেন তন্ময়।
যদি কখনও তন্ময় জিজ্ঞাসা করতেন যে স্টেজে বাজনা শুরুর আগে নিজের কৃতিত্ব নিয়ে কেন পণ্ডিতজি কিছু বলতে চান না! শুনে তিনি হেসে বলতেন, “স্টেজে যন্ত্র মেলাও। আর তার পর শুধু বাজনা। দর্শককে সম্মান করতে গেলে এটাই করা উচিত। বলতেন নিজের কথা স্টেজে কী বলব? ‘সে তার বাজেনি মোর সেতারে।’ কতটা বিনয়ী হলে কেউ এই কথাটা বলতে পারে! প্রত্যেকটা ছোট ছোট কাজের জন্য ধন্যবাদ দিতেন। ওঁকে বলা যায় সত্যিকারের ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ ম্যান,” বললেন তন্ময়।


অমরীশ পুরিকে দেখে
বলেছিলেন ‘মোগাম্বো খুশ হুয়া’

“আমি ভগবানের দেখা পাইনি কোনও দিন। কিন্তু গুরুজিকে দেখেছি,” বললেন পণ্ডিত বিশ্বমোহন ভট্ট পণ্ডিতজির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে বাজানোর ঠিক আগে। ‘রসিয়া’ বাজিয়ে কনসার্ট শুরু করেছিলেন তিনি। ‘অনুরাধা’ ছবি থেকে দু’টো গান বেছে নিয়ে বাজান। এই গান দু’টোর মিউজিক স্কোর করেছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর। একটার নাম, ‘জানে ক্যায়সে সপনো মে’। আর একটা গান হল, ‘ক্যায়সে দিন বিতে’। কনসার্ট শেষ হওয়ার পরে বিশ্বমোহন জানালেন কেমন ভাবে তিনি গুরুর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। “গুরুজি আমাকে দিয়ে তবলাও বাজিয়েছিলেন। লোকে আমাকে মোহনবীণাবাদক হিসেবেই জানে। কিন্তু একবার ওঁর দিল্লির বাড়িতে কোনও তবলিয়া না থাকায় গুরুজি আমাকে তবলা বাজাতে বলেছিলেন। ওঁর সঙ্গে থাকা মানেই গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে কাজ করা। একবার মনে আছে সুকন্যাজি লন্ডন গিয়েছেন। আর আমরা সকলে দিল্লিতে গুরুজির লোদি এস্টেটের বাসভবনে থেকে গিয়েছিলাম। এটা নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা। হঠাৎ গুরুজির মাথায় এল অমিতাভ বচ্চনের একটা সিনেমা দেখার কথা। সেই সময় ভিসিআরের খুব ফ্যাশন। মনে আছে ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’র ক্যাসেট ভাড়া করে এনেছিলাম। রাত সাড়ে বারোটা অবধি বসে আমরা সিনেমা দেখেছিলাম।” বললেন বিশ্বমোহন। পরের দিন দেখা হয়েছিল ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ সিনেমাটা। “এর পর আমরা ভারতের হয়ে মস্কোতে একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাই। সেখানে হোটেলে দেখা হয়েছিল অমরীশ পুরির সঙ্গে। আমি গুরুজিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম অমরীশ পুরির সঙ্গে দেখা হলে কেমন হয়? গুরুজি রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। অমরীশ পুরিকে দেখার পর প্রথম যে কথাটা গুরুজি তাঁকে বলেছিলেন সেটা ছিল, ‘মোগাম্বো খুশ হুয়া।’ কথাটা তাঁর নিজের উদ্দেশেই বলা। অমরীশ পুরির উদ্দেশে নয়। কতটা প্রাণবন্ত মানুষ হলে এ ভাবে ভাবতে পারেন?” পালটা প্রশ্ন করেন বিশ্বমোহন।
পণ্ডিত রবিশঙ্করকে যাঁরা জানতেন তাঁরা সবাই এ ব্যাপারে একমত হবেন। যাঁরা কেবল তাঁর বাজনা শুনেছিলেন তাঁদের কাছে তাঁকে চেনা মানে কেবল তাঁর সঙ্গীতকেই জানা। বাকিদের জন্য তাঁর পরিচয় হল ভালবাসা, জীবন আর বেঁচে থাকার উচ্ছ্বাস।

ছবি: রমাকান্ত খুশওয়া



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.