চেয়ার দখলে ব্যস্ত কংগ্রেস-তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
শিলিগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান পদ নিয়ে বোর্ডে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসৃ-তৃণমূলের চাপানউতোরের জেরে দৈনন্দিন কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, গ্রীষ্মের মরসুমে পানীয় দলের সুষ্ঠু সরবরাহ, রাস্তাঘাট সারানোর কাজের গতি না-বাড়িয়ে চেয়ারম্যান পদের দখল নিয়ে প্রায় ৫ মাস ধরে কার্যত দু-তরফের মধ্যে যেন দড়ি টানাটানি চলছে। শুধু তাই নয়, শুক্রবার দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে দীর্ঘ বৈঠকের পরে চেয়ারম্যান পদে ভোটাভুটির ‘হুইপ’ জারির বিষয়টি জানালেও পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। আগামী ১৩ মার্চ চেয়ারম্যান নির্বাচন হওয়ার কথা। সেখানে নান্টু পালকেই ভোট দেওয়ার জন্য ‘হুইপ’ দেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। ঘটনাচক্রে, তিনি এখনও তৃণমূলের পুরসভার পরিষদীয় দলনেতা। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘আমাদের সব কাউন্সিলরদের নান্টু পালকে ভোট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকারের সমালোচনা করে গৌতমবাবু বলেন, “তৃণমূলকে অনৈতিক দল বলছেন কংগ্রেস সভাপতি। তা হলে তৃণমূল মনোনীত প্রার্থী হয়ে এসজেডিএ-র বোর্ড সদস্য হিসেবে কেন রয়েছেন শঙ্করবাবু? তাঁর উচিত ওই পদ ছেড়ে দেওয়া।” তবে শঙ্করবাবু মানতে চাননি তিনি শুধু তৃণমূল সরকারের মনোনীত প্রতিনিধি। তাঁর যুক্তি, “মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি এলাকার বিধায়ক হিসাবে বোর্ডের সদস্য রয়েছি। গৌতমবাবু কি এক দলীয় শাসন চাইছেন যেখানে অন্য কোনও দল থাকবে না? তা ছাড়া এ নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী যে ভাবে আক্রমণ করছেন, তাতে উনি যে দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন তা ভুলে যাচ্ছেন।”
এ দিন তৃণমূল কাউন্সিলরদের বৈঠকে পুরসভার পরিষেবা কয়েকটি ক্ষেত্রে বেহাল হয়ে পড়ার প্রসঙ্গও উঠেছে। বিল্ডিং বিভাগে নানা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা নিয়ে অনেকে সরব হন। একাধিক বেআইনি বহুতল চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও কীসের স্বার্থে তা ভাঙতে পুরবোর্ড গড়িমসি করছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “পুরসভার বর্তমান পরিস্থিতি রাজ্য নেতৃত্বকে জানাব। কয়েকটি বিষয় নিয়ে গৃহীত প্রস্তাব মঙ্গলবার বা বুধবার মুকুল রায়ের হাতে দেওয়া হবে।”
বস্তুত, নান্টুবাবুকে নিয়ে গোলযোগের সূত্রপাত গত ২৭ সেপ্টেম্বর। নান্টুবাবু কলকাতায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে ওই দলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এর পরে পুরসভার দুটি বোর্ড মিটিং কার্যত ভেস্তে যায়। কারণ, সেখানে চেয়ারম্যান হিসাবে দলত্যাগী নান্টুবাবুকে মেনে নিতে না পেরে কংগ্রেস বিক্ষোভ দেখায়। বামেরাও বিরোধিতা সরব হয়। তাতে বোর্ড মিটিং ভেস্তে যায়। নান্টুবাবু চেয়ারম্যান পদ থেকে না-সরা পর্যন্ত বামেরা বোর্ড মিটিংয়ে যোগ দেয়নি। সেই থেকে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বামেদের আনা অনাস্থায় নান্টুবাবু হেরে অপসৃত না হওয়া পর্যন্ত বোর্ড মিটিংয়ে বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে গঠনমূলক আলোচনা বন্ধ হয়ে যায়। নান্টুবাবুকে নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল বিরোধিতায় পুরসভার কাজকর্মের দিকে তাদের কারও নজর নেই বলে বামেদের অভিযোগ। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, “শুরু থেকে ওই দুটি দল ক্ষমতা দখলের লড়াই নিয়েই ব্যস্ত। গত পুর বাজেটে বক্তব্য রাখতে বলেছিলাম শহরের উন্নয়ন ২৫ বছর পিছিয়ে গিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে আরও অনেক পিছিয়ে পড়েছে এ শহর। পুর নির্বাচনে বাসিন্দাদের তারা যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সে সব পূরণের দিকে তাদের বিন্দুমাত্র নজর নেই।” কংগ্রেস সূত্রে খবর, কাউন্সিলর সবিতা অগ্রবালকে চেয়ারম্যান করতে তারাও হুইপ জারি করতে চলেছে। শঙ্কর মালাকারের দাবি, “বোর্ড করার সময়ই ঠিক হয়েছিল চেয়ারম্যান, মেয়র-সহ ৫টি পদ তাদের। জোট ধর্ম মেনে চেয়ারম্যান পদ আমাদের দিতে হবে।” |