নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
মহাকরণ থেকে তালিকা পাঠিয়ে সরকার দলীয় কর্মীদের নিয়োগ করছে বলে ফের অভিযোগ উঠল। এ বার ঘটনাস্থল জলপাইগুড়ির উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের অফিস। সোমবার সেখানে ছিল সেচ দফতরে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা। গণ্ডগোল হতে পারে এই আশঙ্কায় সেখানে আগে থেকেই মোতায়েন ছিল জলকামান-সহ বিশাল পুলিশবাহিনী। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর কংগ্রেসের আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে চত্বর। পুলিশের সঙ্গে তুমুল ধস্তাধস্তি হয় আন্দোলনকারীদের।
তবে এই ঘটনায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের তরফে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। কমিশনের নির্বাহী সদস্য গৌতম দত্ত বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। তাঁরাই যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।” জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “সরকারি অফিসে চড়াও হওয়ার ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। বিশদে তদন্ত শুরু হয়েছে। সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সেচ দফতর সূত্রের খবর, ২০১২ সালের ৩০ মার্চ একটি সংবাদপত্রে জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পদে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপন প্রকাশের সাত দিনের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়। |
জলপাইগুড়িতে কংগ্রেসের বিক্ষোভ। ছবি: সন্দীপ পাল |
সেই বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে আবেদনকারীদের প্যানেল তৈরি করে সরকারের তরফে জলপাইগুড়িতে পাঠানো হয়। এ দিন তাঁদেরই মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ যুব কংগ্রেসের কর্মীরা সেচ দফতরের সামনে পৌঁছন। ভিতরে তখন পরীক্ষা চলছিল। আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে অফিসে ঢুকতে যান। পুলিশ বাধা দিলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। শেষ পর্যন্ত যুব কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি লোকসভা কমিটির সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়-সহ সব বিক্ষোভকারীদের পুলিশ গ্রেফতার করলে পরিস্থিতি আয়ত্তে আসে। ধৃতদের থানায় নিয়ে গিয়ে ব্যক্তিগত জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।
যুব কংগ্রেসের অভিযোগ, বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও তা মানা হয়নি। ফলে অনেকে বিষয়টি জানতে পারেননি। সৈকতবাবুর অভিযোগ, “তৃণমূল কর্মীদের চাকরি পাইয়ে দিতে কলকাতা থেকে ৬১ জনের তালিকা করে পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছে বলেই আমরা আন্দোলনে নেমেছি।” তিনি জানান, গত শুক্রবারও যুব কংগ্রেসের তরফে কমিশনের অফিসে গিয়ে পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানানো হয়।
সেচ দফতরের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, বিধি মেনে বিজ্ঞাপন দিয়েই ৬১ জনকে বাছাই করা হয়। তবুও গত শুক্রবার আন্দোলনকারীরা কমিশনের নির্বাহী সদস্য, ইঞ্জিনিয়র-সহ কর্মীদের অফিস থেকে বার করে দেন। এক অফিসারের গায়ে হাত দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। সেই কারণে এ দিন প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করে প্রশাসন। এ দিন মোট ৫৯ জনের মৌখিক পরীক্ষা হয়েছে। যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি বুবাই কর বলেন, “সাধারণ কর্মপ্রার্থীদের বঞ্চিত করতে কেউ আন্দোলন করলে মানুষ বরদাস্ত করবেন না।”
সম্প্রতি রায়গঞ্জেও কৃষি দফতরে অবৈধ নিয়োগের অভিযোগ নিয়ে আন্দোলনে নামে ডিওয়াইএফ, এসএফআই ও যুব কংগ্রেস। তাঁদেরও অভিযোগ, কলকাতা থেকে তালিকা পাঠিয়ে ১৪ জনকে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানেও পুলিশি হস্তক্ষেপে আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। শেষ পর্যন্ত ওই ১৪ জনকে কৃষি দফতর নিয়োগ করেছে। |