হুটহাট কর্মবিরতির গেরো থেকে আদালতেরও যেন রেহাই নেই! জোড়াসাঁকো থানায় এক প্রবীণ আইনজীবীর হেনস্থার অভিযোগকে ঘিরে গত সপ্তাহেই আইনজীবীরা কর্মবিরতি পালন করেছিলেন ব্যাঙ্কশাল কোর্ট ও নগর দায়রা আদালতে। ভিন্ রাজ্যে আইনজীবীদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচালনার প্রতিবাদে সোমবার ফের দেশের অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা হাইকোর্ট-সহ রাজ্যের কোনও আদালতেই কাজ হল না। ভুগতে হল অসংখ্য বিচারপ্রার্থীকে।
সম্প্রতি রাজস্থান হাইকোর্টে আইনজীবীদের আন্দোলনে পুলিশ লাঠি চালালে ৬০ জন জখম হন বলে অভিযোগ। তার প্রতিবাদেই সর্বভারতীয় বার কাউন্সিল দেশের সব আদালতে এক দিনের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আনসার মণ্ডল জানান, সর্বভারতীয় বার কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত সমর্থন করে তাঁরা রাজ্যের সব আদালত, হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন, বার লাইব্রেরি ও অন্যদের কাছে কর্মবিরতিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ফলে স্তব্ধ হয়ে যায় উচ্চ আদালত-সহ সব কোর্টই। হাইকোর্টে সরকার পক্ষ বা বিরোধী পক্ষের কোনও আইনজীবী মামলা লড়েননি। কিছু ক্ষণ এজলাসে বসে চলে যান বিচারপতিরা। সন্ধ্যায় বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হাইকোর্ট, বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা আদালত-সহ সর্বত্রই কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
কিন্তু কর্মবিরতির জেরে নাকাল হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। দিন তিনেক আগেই এক আইনজীবীর সঙ্গে পুলিশের দুর্ব্যবহারকে কেন্দ্র করে দু’দিন কর্মবিরতি পালন করেন ব্যাঙ্কশাল আদালতের আইনজীবীরা। তার পরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপে সমস্যা মিটে যায়। তার পরেই এ দিন ফের কর্মবিরতিতে আদালত অচল হয়ে যাওয়ায় বহু মামলা পিছিয়ে গেল।
এমনিতেই রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে জমা মামলার সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ। নারী নির্যাতনের মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার কথা বলা হচ্ছে। হাইকোর্টেও জমে আছে অজস্র মামলা। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন, পরিকাঠামোর অভাব থাকা সত্ত্বেও কাজে মনোযোগী হলে আরও বেশ কিছু মানুষকে বিচার দেওয়া যাবে। এ রাজ্যে কাজে যোগ দেওয়ার পরেই তিনি অযথা সময় নষ্ট না-করে মামলার পাহাড় কমানোর আহ্বান জানান। তা সত্ত্বেও ফের গোটা একটা দিন কর্মহীন হয়ে রইল সারা বাংলার আদালত। স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই যে-কোনও মামলার বিচার শেষ হতে কয়েক বছর গড়িয়ে যায়। তার উপরে মাঝেমধ্যেই কর্মবিরতির গেরো বিচার আরও বিলম্বিত করে। এ দিনের কর্মবিরতি সেই ‘ট্র্যাডিশন’ই বজায় রাখল! |