বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার পর প্রথম পশ্চিমবঙ্গে এসে এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের প্রতি বন্ধুত্বের বার্তা দিয়ে গেলেন রাজনাথ সিংহ। কেন্দ্রের কাছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি, তাকে সমর্থন করলেন রাজনাথ। যা তৃণমূলের জন্য বিজেপি-র জোটের দরজা খোলা রাখার ইঙ্গিত বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। রাজনাথ অবশ্য সে জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন।
সোমবার মহাজাতি সদনে বিজেপি-র পঞ্চায়েত সম্মেলনে রাজনাথ বলেন, “এ রাজ্য ৩১ হাজার কোটি টাকা আয় করছে। কেন্দ্র নিয়ে নিচ্ছে ২৬ হাজার কোটি টাকা। এ রকম হলে কী করে চলবে? এ রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে কেন্দ্রের বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ দেওয়া দরকার।” তবে একই সঙ্গে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতির হুঁশিয়ারি, “কেন্দ্রের দেওয়া টাকা রাজ্য ঠিক ভাবে যথাযথ খাতে খরচ করছে কি না, সে ব্যাপারেও নজরদারি প্রয়োজন।”
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বামফ্রন্ট সরকার তাঁর জন্য ঋণগ্রস্ত রাজ্য রেখে গিয়েছে। ফলে তাঁর আমলে সরকারের আয়ের সিংহভাগ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রকে সুদ-সহ ঋণ শোধ করতে। এই প্রেক্ষিতেই কখনও আবেদন, কখনও হুমকির সুরে কেন্দ্রের কাছ থেকে ‘বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ’ বা ‘মোরাটোরিয়াম’ চান মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার দরজা খোলা রাখার জন্যই কি তিনি মমতার ওই দাবি সমর্থন করছেন? জবাবে রাজনাথ বলেন, “আমি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ওই কথা বলিনি। রাজ্যবাসীর স্বার্থে বলেছি। জোট নিয়ে কোনও প্রস্তাব নেই।”
রাজনাথ অবশ্য এ দিন আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে তৃণমূল সরকারের সমালোচনাও করেছেন। তাঁর কথায়, “এ রাজ্যে শাসক পরিবর্তনের দু’ বছর হল। কিন্তু প্রকৃত পরিবর্তন কিছু দেখলাম না।” তবে মাত্র দু’ বছর বয়সী সরকারকে উৎখাত করার ডাক দিতে চান না রাজনাথ। তাঁর বক্তব্য “দু’ বছরের মধ্যে এই সরকার চলে যাক, তা বলছি না। পাঁচ বছর দেখব, ভাল কাজ করে কি না। না করলে আগামী বার বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হবে।”
এ রাজ্যে বিজেপি-র এক জনও বিধায়ক নেই। এই অবস্থায় দলকে চাঙ্গা করতে রাজ্যের সংগঠকদের প্রতি রাজনাথের বার্তা, “আপনারা ঘাম ঝরান। পরিশ্রম করুন। যাতে আগামী বার বিজেপি প্রধান বিরোধী দল হতে পারে।” রাজনাথের যুক্তি, বাস্তবকে অস্বীকার করে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। ধাপে ধাপে এগনোর চেষ্টা করাই বাস্তবসম্মত। সে জন্য প্রথমে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। এক বার তা হতে পারলে শাসক হওয়া কঠিন হবে না। ছিটমহল বিনিময় এবং তিস্তা চুক্তি নিয়ে সংসদে সকলের একমত হওয়া প্রয়োজন বলেও এ দিন জানান রাজনাথ। এ দিন পঞ্চায়েত সম্মেলনে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা তথা সাংসদ চন্দন মিত্র, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, তপন সিকদার, তথাগত রায় প্রমুখ ছিলেন। |