সকালে টিভিতে ব্রেকিংটা দেখে রীতিমতো আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। বুঝে পাচ্ছিলাম না, ঘটনাটা ঠিক কী হয়েছে। কেন ওয়াটসন-প্যাটিসনদের মোহালি টেস্ট থেকে নির্বাসিত করা হল? পরে শুনলাম। মিকি আর্থার ওদের শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। অপরাধ নাকি মারাত্মকসিরিজের শেষ দু’টেস্টে টিমের উন্নতিতে কী কী করা দরকার, সেটা নাকি সময় মতো জমা দিতে পারেনি ওয়াটসনরা!
নিজে দেশের হয়ে অল্প-বিস্তর ক্রিকেট খেলেছি। একটা পর্যায় পর্যন্ত কোচিং করিয়েছি। খেলাটা সম্পর্কে খোঁজখবরও নিয়মিত রাখি। বিশ্বাস করুন, এ রকম অদ্ভুত ঘটনার কথা কোনও দিন শুনিনি। হাস্যকর শুধু নয়, আর্থার যা করল এক কথায় ন্যক্কারজনক। ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনার কথা জন্মে কেউ শুনেছে বলে মনে হয় না।
ওয়াটসন-প্যাটিনসনরা কি লেখক নাকি? তা হলে তো ওরা সাংবাদিক হত। ক্রিকেটটা খেলত না। ডেরেক প্রিঙ্গল ভাল লেখে বলে সাংবাদিক হয়েছে। ইয়ান বোথাম কি হয়েছে? আর্থারের কাছে আমার একটা ব্যাপার জানতে ইচ্ছে করছে। তুমি ঠিক কোন ধ্যানধারণা নিয়ে কোচিং করাচ্ছ, একটু বলবে? অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটকে কোন দিকে নিয়ে যেতে চাইছ তুমি? সিরিজে ০-২ পিছিয়ে রয়েছ, তোমার তো এখন উচিত টিমের সিনিয়রদের নিয়ে মিটিং ডাকা। টিমটাকে একজোট করা। উল্টে তুমি স্পিরিটের বারোটা এ ভাবে বাজিয়ে দিলে? |
সব দেখে মনে হচ্ছে আর্থার নিজেই অসম্ভব চাপে। হয়তো বুঝছে সিরিজটা ০-৪ হারবে। সেক্ষেত্রে চাকরিটাও যাবে। সেই জন্য ও এ ভাবে মিডিয়া, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সমর্থকদের নজরটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। যাতে চাপটা বাকি টিমের উপরও গিয়ে পড়ে। একা ওর দিকে কেউ অভিযোগের আঙুল তুলতে না পারে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, এ সব কাণ্ডকারখানা অনূর্ধ্ব ১৭ ক্রিকেটে চলে। জোনাল অ্যাকাডেমিতে ক্রিকেটারদের জিজ্ঞেস করা হয়, ভবিষ্যতে কী হতে চাও। কোথায় মনে করো, তোমার উন্নতি দরকার। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ সব ব্যাপারে নষ্ট করার মতো সময় কারও থাকে বলে মনে হয় না। যদি ওয়াটসনরা মাঠে ঝামেলা করত, বা প্র্যাক্টিসে আসত না, মেনে নিতাম যে শৃঙ্খলা নষ্ট করেছে। কিন্তু সময়ে কেন নিজেদের লিখিত পরামর্শ জমা দেয়নি, সেটাকে আমি অন্তত অপরাধ বলে ভাবতে পারছি না। এটা কি ক্লাস ফাইভের ফাইনাল পরীক্ষা হচ্ছে না কি? মনে আছে, নভজোৎ সিংহ সিধু একবার শৃঙ্খলার দফারফা ঘটিয়ে ইংল্যান্ড সফরের মাঝপথে ভারতে ফিরে এসেছিল। যা অমার্জনীয় অপরাধ। আর্থারকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, সিধুরটা দেখলে তুমি কী বলতে?
সিরিজটা অস্ট্রেলিয়া হয়তো এমনিই হারবে। তবু মোহালি আর দিল্লিতে পাল্টা যুদ্ধের যা ছিটেফোঁটা সম্ভাবনা ছিল, আর্থারের এমন তুঘলকি আচরণে সেটাও শেষ। আমার মনে হয় না, চার জন ক্রিকেটারকে নির্বাসনে পাঠিয়ে টেস্ট জিততে পারবে আর্থার। আর্থার নিজে বাঁচার জন্য এই রাস্তাটা নিল ঠিকই, কিন্তু তাতে ওর লাভ হবে না।
অস্ট্রেলীয়রা রাফ অ্যান্ড টাফ ক্রিকেট খেলে। পারফরম্যান্সে বিশ্বাস করে। বাকি কিছুতে নয়। আমার মনে হয় না, অ্যাসেজের আগে এমন বিপর্যয়ের পর আর্থারকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ছাড়বে বলে। ওর চাকরি এমনিই যাবে। হায়দরাবাদের পঞ্চম দিনের উইকেটে প্র্যাক্টিস করে ও বলেছে, এ ভাবে নাকি ভারতীয় স্পিনকে ম্যানেজ করবে! শুনলে বুঝতে পারবেন না, এ দেশে কারা খেলছে! অস্ট্রেলিয়া, নাকি নিউজিল্যান্ড? আর্থার অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহ্যকে কোথায় নামাচ্ছে? নিজে ক্রিকেটটা সে ভাবে খেলেনি। সে কিনা ওয়াটসনদের শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলছে! লোকে গ্রেগ চ্যাপেলের মেজাজি আচরণের কথা বলে। বলে, ও নাকি প্রথমে ভারতীয় ক্রিকেট, তার পর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটকে শেষ করতে নেমেছিল।
সেই চ্যাপেলও কিন্তু এত বড় মূর্খামি কোনও দিন করত না!
|
অ্যান্ড্রু ফ্লিন্টফ
হোমওয়ার্ক না করায় নির্বাসন দেখে তাজ্জব হয়ে গিয়েছি। ওদের তৃতীয় টেস্টে নামার সুযোগ দিলেও তো কম শাস্তি হত না! ভারত তো ৩-০ করত। |
শেন ওয়ার্ন
অধিনায়কই দল চালায়। নির্বাচকদের সঙ্গে বসে দল নির্বাচন করে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও অধিনায়কেরই। হাস্যকর ঘটনা। |
ইয়ান চ্যাপেল
বিশ্বাসই হচ্ছে না। ১৯১১ সালে বিগ সিক্সকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এর পর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে এমন কখনও হয়েছে বলে আমার জানা নেই। |
ড্যামিয়েন ফ্লেমিং
আপনারা হয়তো জানেন না, এড কাওয়ানের প্রেজেন্টেশন নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। |
ডিন জোন্স
সব ঘটনারই দ্বিতীয় একটা দিক থাকে। মিকি আর্থার বা মাইকেল ক্লার্ককে দোষ দেওয়ার আগে ঘটনার উল্টো দিকটাও দেখা উচিত। |
|