|
|
|
|
বার্তা বিজেপি-কংগ্রেসকে |
দাবি বিহারের মর্যাদা, নীতীশের নজরেও এ বার দিল্লি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নরেন্দ্র মোদীর পর এ বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে দু’পর্বে রাজ্যপাট সামলানোর পর এই প্রথম দিল্লিতে নিজের রাজনৈতিক অভিযানে নামতে চলেছেন নীতীশ কুমার।
তৃতীয়বার গুজরাত জয়ের পর খাস দিল্লির বুকে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস তথা রাহুল গাঁধীকে বার্তা দিতে রাজধানীর শ্রীরাম কলেজের মঞ্চকেই বেছে নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এ বারে পালা নীতীশের। লক্ষ্য বিহারের জন্য বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা হলেও অনেকে মনে করছেন, নীতীশের রবিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে অধিকার র্যালির আসল উদ্দেশ্য হল লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা। আগামী রবিবারের ওই সমাবেশে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার সমস্ত বিহারের মানুষকে রাজ্যের স্বার্থে রামলীলা ময়দানে আসার ডাক দিয়েছেন নীতীশ। রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার দাবি বিহার বিধানসভায় সর্বদলের সম্মতিতে পাশ হয়েছে। কিন্তু, গোটা বিষয়টিতে প্রচারের আলো যে ভাবে জেডিইউ শিবির শুষে নিচ্ছে তাতে রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, জাতীয় রাজনীতিতে বিহারের একমাত্র নেতা হিসাবে নিজেকে তুলে ধরে বিজেপি ও কংগ্রেস দু’দলকেই বার্তা দিতে চাইছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। বিহারের ওই কুর্মি নেতা বুঝিয়ে দিতে চাইছেন, লোকসভা নির্বাচনের পর যে দলই সরকার গড়ুক না কেন তাতে বড় ভূমিকা নিতে চলেছেন তিনি।
লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই বিজেপির একটি বড় অংশ নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে নির্বাচনে যেতে চাইছে। সঙ্ঘ পরিবারও মনে করে, এই মুহূর্তে বিজেপির একমাত্র মুখ হলেন নরেন্দ্র মোদী। দলে জনপ্রিয়তায় তাঁর ধারেকাছে অন্য কোনও নেতাও নেই বলেই মত সঙ্ঘ পরিবারের। কিন্তু শুধু বিজেপির অন্দরমহলেই নয়, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দেখার প্রশ্নে আপত্তি ইতিমধ্যেই জানিয়ে রেখেছে এনডিএর বৃহত্তম শরিক জেডিইউ। নীতীশের দল ইতিমধ্যেই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, মোদী বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হলে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে জেডিইউর এনডিএ জোটে সামিল হওয়া সম্ভব হবে না। মোদী প্রশ্নে নীতীশের আপত্তি যে রয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলিও। তিনি জানিয়েছেন, মোদীর নামে নীতীশের অস্বস্তি রয়েছে। কিন্তু রাজনীতি করতে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখাটাও
একটা পারদর্শিতা।
এনডিএর জোট শরিক হলেও ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখায় প্রথম থেকেই নীতীশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। নীতীশের দলের রাজ্যসভা সাংসদ এন কে সিংহ কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে বরাবর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে এগোচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে তাই নীতীশও দিল্লির বুকে অধিকার সমাবেশ করে বিজেপি শিবিরকে পাল্টা বার্তা দিতে চাইছেন যে, মোদী প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী সে ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে তাঁর কাছে কংগ্রেসকে বেছে নেওয়ার রাস্তা
খোলা থাকবে।
ইতিমধ্যেই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সাধারণ বাজেটের পর চিদম্বরম যে ভাবে বিহারের মতো পিছিয়ে পড়া রাজ্যকে চিহ্নিত করার মাপকাঠিতে পরিবর্তন আনার কথা জানিয়েছেন তাতে নিজের সন্তোষ জানিয়েছিলেন নীতীশ। লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে কংগ্রেস ও জেডিইউ শিবির একে অপরের পিঠ চাপড়ে দেওয়ার মধ্যে স্পষ্ট রাজনৈতির বার্তা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
যদিও বিজেপি শিবির এখনই বিষয়টি বড় করে দেখতে নারাজ। দলের বক্তব্য, বিহারকে যাতে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয় তার জন্য নীতীশ দীর্ঘ সময় ধরেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। চিদম্বরমের বাজেটের সমর্থন করা মানেই নীতীশ কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন সেই ব্যাখ্যাও মানতে চাইছেন না শীর্ষ বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু বিহারে সি পি ঠাকুর বা গিরিরাজ সিংহের মতো নীতীশ-বিরোধী নেতারা মোদী প্রশ্নে নীতীশের দাবির কাছে মাথা নোয়াতে নারাজ। তারা দিল্লির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বার্তা দিয়েছেন, নীতীশ মুখে যাই বলুন না কেন বিহারে রাজ্যপাট ধরে রাখতে গেলে বিজেপিকে দরকার নীতীশের। তা না হলে ওই রাজ্যে সরকার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও জেডিইউ নেতাদের একাংশের দাবি, বিহারে বিজেপি জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও নির্দল বিধায়কদের মাধ্যমে সরকার বাঁচানো সম্ভব হবে। দ্বিতীয়ত, জোট ভেঙে গেলে ওই রাজ্যে ব্রাহ্মণ ভোট হারাবেন নীতীশ। যার ফায়দা নেবেন লালু প্রসাদ। তা কোনও দিন চাইবেন না নীতীশ। এই পরিস্থিতিতে নীতীশ- বিরোধী বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের যুক্তি, যদি শেষ পর্যন্ত নীতীশ এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে যান তাতে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে বিজেপির লাভ হবে। সে ক্ষেত্রে নীতীশ-বিরোধিতার প্রশ্নে বিহারে শক্তি বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নীতীশ বিচ্ছেদে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ওই রাজ্যে ভাল করার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না সি পি ঠাকুরের মতো নেতারা। |
|
|
|
|
|