|
|
|
|
দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রিত্বের টোপ |
পুরভোটের ফলে উৎসাহী, কর্নাটক বিজয়ে সনিয়া চান ইয়েদুরাপ্পাকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দক্ষিণে বিজেপি-র একমাত্র সলতে নেভাতে তৎপর এ বার সনিয়া গাঁধী। কর্নাটকে বিধানসভা ভোটের আর মাস দু’য়েক বাকি। তার আগে রাজ্যের পুরভোটে অপ্রত্যাশিত ভাল ফল করেছে দল। রাজ্য থেকে বিজেপি-র সরকারকে উৎখাত করতে এ বার তাই বি এস ইয়েদুরাপ্পার সঙ্গে একটা সমঝোতা সেরে ফেলতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। ইয়েদুরাপ্পারও লক্ষ্য রাজ্য থেকে বিজেপি সরকার হটানো। ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাতে আপত্তি নেই রাজ্যের এই প্রাক্তন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর।
বড় ছোট মিলিয়ে রাজ্যের মোট ২০৮টি শহরে পুরভোট হয়েছিল ৭ মার্চ। আজ তার ফল বেরোনোর পরে দেখা যাচ্ছে, গত বারের থেকে অনেক ভাল ফল করেছে কংগ্রেস। বিজেপি-শাসিত রাজ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ওয়ার্ডই দখল করেছে তারা। বিজেপি এবং এইচ ডি দেবগৌড়ার জেডি-এস পেয়েছে ৯০৬টি করে ওয়ার্ড। সেখানে কংগ্রেস একাই পেয়েছে ১৯৬০টি ওয়ার্ড। অর্থাৎ সহযোগী জেডি(এস)-এর মতোই মাত্র ২০ শতাংশ ওয়ার্ড দখল করতেই হিমশিম খেতে হয়েছে বিজেপিকে।
কংগ্রেস শুধু নয়, বিজেপিকে যুঝতে হচ্ছে দলেরই প্রাক্তন নেতাদের সঙ্গে। কর্নাটক জনতা পক্ষ (কেজেপি) নামে নতুন দল গড়ে ইয়েদুরাপ্পা বিশাল মাপের সাড়া ফেলতে না পারলেও, ২৭৪টি (সাড়ে পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি) ওয়ার্ড দখল করেছেন। কিন্তু রাজ্য জুড়েই বিজেপির আসন কমাতে বড় ভূমিকা নিয়েছে ইয়েড্ডির দল। বিজেপি ছেড়ে বেরোলেও তিনি যে উধাও হয়ে যাননি, পুরভোটের ফলে তার প্রমাণ রাখলেন ইয়েদুরাপ্পা।
বিজেপিকে অল্পবিস্তর ধাক্কা দিয়েছেন আর এক দলছুট নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী বি শ্রীরামুলুও। বিএসআর কংগ্রেস নামে দল গড়ে প্রথম বার জল মাপতে নেমেছিলেন তিনি। দখল করেছেন ৮৬টি ওয়ার্ড।
বিধানসভা নির্বাচনের মুখে কার্যত এই পুরভোটই ছিল সেমিফাইনাল। বিজেপির বিদ্রোহীদের পাশে এনে দক্ষিণের একমাত্র বিজেপির দখলে থাকা রাজ্য ছিনিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আশা আলো দেখছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। শুধু ইয়েদুরাপ্পার লিঙ্গায়েত ভোট নয়, জেডিএসের ভোক্কালিগা ভোটও ফিরতে পারে কংগ্রেসের ঝুলিতে। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সরকার ফেরাতে ইয়েদুরাপ্পাকে তাঁর অনেক সাধের মুখ্যমন্ত্রী পদ দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনায় প্রস্তুত কংগ্রেস। ইয়েদুরাপ্পা শিবির জানিয়েছে, ওই প্রস্তাবে অমত নেই তাদের! ইয়েদুরাপ্পা শিবির আলোচনার টেবিলে সরাসরি এমন প্রস্তাব পেলে তা লুফে নেওয়ারই সম্ভাবনা। কারণ দুর্নীতির দায়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদ খোয়ানোর পরে অনেক চেষ্টা করেও তা ফিরে পাননি ইয়েদুরাপ্পা। দল ছেড়েছেন সেই ক্ষোভেই। ইয়েদুরাপ্পার ঘনিষ্ঠ নেতা ধনঞ্জয় কুমার আজ বলেন, “কর্নাটকের মানুষ শহর এলাকায় বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের জায়গা
চিনিয়ে দিয়েছে। ইয়েদুরাপ্পা ছাড়া যে বিজেপির কোনও অস্তিত্ব নেই, সেটা আজ প্রমাণ হল।”
আগামী লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে বিজেপি যখন নরেন্দ্র মোদীকে সামনে নিয়ে আসছে, ঠিক সেই সময় কর্নাটক হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা করছে তারাও। লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, অনন্ত কুমারের মতো নেতারা ইয়েদুরাপ্পাকে দল থেকে সরানোর পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু অরুণ জেটলির মতো নেতারা আজও মনে করেন, কর্নাটক ধরে রাখার জন্য ইয়েদুরাপ্পাকে যেতে দেওয়া উচিত ছিল না। জেটলি এখনও ইয়েদুরাপ্পাকে দলে ফিরিয়ে আনার পক্ষপাতী। জেটলি এ দিনও বলেছেন, “ইয়েদুরাপ্পা সঙ্গে থাকলে কর্নাটকে অনায়াসেই কংগ্রেসকে টেক্কা দিতে পারত বিজেপি।”
কিন্তু ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন আডবাণী। এখনও তিনি ইয়েদুরাপ্পার দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলেই দলের প্রতি মানুষের মোহভঙ্গের কথা বলে চলেছেন। পরোক্ষ নিশানা অবশ্যই প্রাক্তন সভাপতি নিতিন গডকড়ী ও তাঁর পৃষ্ঠপোষক আরএসএস। বিজেপির এই অন্তর্কলহ উস্কে দিয়ে কংগ্রেসের মুখপাত্র রশিদ অলভি এ দিন বলেন, “আডবাণীই বলছেন বিজেপির প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। এর থেকেই স্পষ্ট বিজেপিকে মানুষ বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু সে কাজেও তারা অক্ষম।”
কর্নাটকের ফলে উৎসাহিত কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “বিজেপির থেকে কংগ্রেস উত্তরাখণ্ড, হিমাচল ছিনিয়ে নিয়েছে। এ বার কর্নাটকের পালা। সনিয়া গাঁধী তেমনই নির্দেশ দিয়েছেন।” |
|
|
|
|
|