রাস্তা নির্মাণের জন্য রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মাটি কাটার অভিযোগ উঠেছে এক ঠিকা সংস্থার বিরুদ্ধে। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে (বিএলএলআরও) বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুরের হ্যানিম্যান সরণিতে। মহকুমা শাসক আয়েষা রানি সোমবার ঘটনাস্থলে যান। পরে তিনি জানান, ওই ঠিকা সংস্থার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। তা পরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। এখনও পর্যন্ত কত মাটি ওই সংস্থা তুলেছে তা মাপজোক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিএলএলআর দফতরকে।
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এই হ্যানিম্যান সরণি। গ্যামন ব্রিজ মোড় থেকে মায়াবাজার পর্যন্ত এই রাস্তা প্রায় দশ কিলোমিটার লম্বা। দুর্গাপুর কেমিক্যালস লিমিটেড (ডিসিএল), দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশন (ডিটিপিএস)-সহ প্রায় ৩০টি নানা কারখানা রয়েছে ওই রাস্তার আশপাশে। রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকের প্রধান রাস্তা এটিই। কারখানার ভারি গাড়ি চলাচল লেগেই আছে। রাতুরিয়া, অঙ্গদপুর, অর্জুনপুর, পুরষা ইত্যাদি গ্রামের বাসিন্দারা নিয়মিত রাস্তাটি ব্যবহার করেন। তাঁরা জানান, সরকারি দুই কারখানার কলোনি-সহ বেশ কয়েকটি বস্তিও আছে এলাকায়। গড়ে কুড়ি মিনিট অন্তর মিনিবাস চলাচল করে। |
দীর্ঘদিন রাস্তাটি বেহাল পড়েছিল। তা নিয়ে বাসিন্দারা প্রায়ই বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। মাঝে মাঝে তাপ্পি দেওয়া হত। কিন্তু বেশি দিন স্থায়ী হত না। রাস্তার আমূল সংস্কারের দাবি জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা। শেষ পর্যন্ত তৎকালীন বাম পুরবোর্ড রাস্তাটি সংস্কার ও সম্প্রসারণের জন্য কেন্দ্রীয় জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের দ্বারস্থ হয়। পাঠানো হয় ৬৪ কোটি টাকার পরিকল্পনা। বছরখানেক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের নগরোন্নয়ন দফতর তা অনুমোদন করে। বাজেট বরাদ্দ হয় প্রায় ৭৮ লক্ষ টাকা। এডিডিএ এক ঠিকা সংস্থাকে কাজ করার দায়িত্ব দেয়। মাস কয়েক আগে কাজ শুরু হয়।
এর পরেই শুরু হয় বিতর্ক। স্থানীয় কয়েক জন বাসিন্দা সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানান, ঠিকা সংস্থা এডিডিএ-র জমি থেকে রাস্তা নির্মাণের জন্য যন্ত্র দিয়ে প্রয়োজনীয় মাটি তুলছে। কিন্তু মাটি বাবদ রাজস্ব তারা জমা করছে না বিএলএলআর দফতরে। এর পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। বিএলএলআর দফতরের এক আধিকারিক জানান, রাজ্যের ভূমি রাজস্ব আইন অনুযায়ী, মাটি তুলতে গেলে প্রথমে দফতরের অনুমতি নিতে হয়। তা পেলে প্রতি একশো ঘন ফুট মাটি পিছু ৫৬ টাকা জমা দিতে হয়। তার পরেই মাটি তোলার ছাড়পত্র মেলে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ইতিমধ্যেই প্রায় দু’লক্ষ ঘন ফুট মাটি তুলে ফেলেছে ওই ঠিকা সংস্থা। সংস্থার পক্ষে বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এখনও পর্যন্ত মাটি তোলার জন্য কোনও অর্থ তাঁরা কোথাও জমা দেননি। সংস্থার এক আধিকারিকের আবার প্রশ্ন, “সরকারি কাজের জন্য সরকারি জমি থেকে মাটি তোলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে রাজস্ব বাবদ অর্থ দিতে হবে কেন?”
সোমবার মহকুমাশাসক আয়েষা রানি ঘটনাস্থলে যান। বিএলএলআর দফতরের আধিকারিকদের মাপজোক করে কত মাটি তোলা হয়েছে, তা দেখতে বলেন। পরে জানান, ঠিকা সংস্থার কাছে কাগজ চাওয়া হয়েছে। তা পরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। তিনি বলেন, “মাটি তোলার প্রয়োজনীয় অনুমতি না থাকলে ওই ঠিকা সংস্থাকে আইন মেনে রাজস্ব দিতে হবে।” |