ডাইন-প্রথার বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে নাটক পরিবেশন করলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা। ছৌনাচের ভঙ্গিমায় সেই নাটক থেকে বার্তা দেওয়া হল, ‘ডাইন’ বলে কিছু নেই। এ সব কুসংস্কার। গ্রামে কারও শরীর খারাপ হলে ডাক্তার দেখানো জরুরি। নাটকটি লিখেওছেন এক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি। নাম ত্রিলোচন গোপ।
রবিবার মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বেলিয়ায় এই কর্মসূচি হয়। কমাস আগে গ্রামের এক মহিলাকে এক মহিলা ‘ডাইন’ অপবাদে নির্যাতন করা হয়েছিল। তারপরই পুলিশ-প্রশাসন এই এলাকায় সচেতনতা কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়। সংশোধনাগারের বন্দিদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়া নতুন নয়। মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেও বন্দিদের একটি সাংস্কৃতিক দল রয়েছে। দলের সদস্য সংখ্যা ১৮। বন্দিরা মূলত ছৌ-নৃত্যই করেন। কমাস আগে এই দল জঙ্গলমহল ছাত্র-যুব উৎসবে যোগ দেয়। |
বন্দিদের ছৌ নাচে ফুটে উঠল কুসংস্কার বিরোধী বার্তা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। তবে সংশোধনাগারের বাইরে বেরিয়ে কোনও কর্মসূচিতে যোগ দেওয়া এবং সেই কর্মসূচি থেকে সামাজিক বার্তা দেওয়া এই প্রথম। মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের ওয়েলফেয়ার অফিসার মহুয়া বাগচি মিত্রের কথায়, “মহকুমাশাসক অনুরোধ করেছিলেন। আমরা সেই অনুরোধ রাখার চেষ্টা করেছি।” মহুয়াদেবী বলেন, “আমাদের সাংস্কৃতিক দল খুব অল্প সময় সেই দলের সদস্যরা নাটক শিখে তা মঞ্চস্থ করলেন। আগামী দিনেও এমন কর্মসূচিতে ওই দল যোগ দেবে।” আর মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্তের কথায়, “সংশোধনাগারে আবাসিকদের যে সাংস্কৃতিক দলটি রয়েছে, সেই দলের সদস্যরা ভাল অনুষ্ঠান করেন। আগে ওঁদের ছৌ- নৃত্য দেখেছি। চেয়েছিলাম, ওঁরা যদি এমন কর্মসূচীতে যোগ দিয়ে সামাজিক বার্তা দেন, ভাল হয়। তাই অনুরোধ করেছিলাম। নাটক ভাল হয়েছে।”
রবিবার সংশোধনাগারের ১৩ জন বন্দি নাটকে যোগ দেন। শক্তি গোপ, বিকাশ মাহাতো, দর্ন লোহার, অঙ্কুর বন্দ্যোপাধ্যায়, অবিনাশ মাঝিরা সকলেই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। নাটক শুরুর আগে সাজঘরে বসে শক্তি গোপ বলছিলেন, “জেলে আমরা ক’জন নিয়মিত সংস্কৃতি-চর্চা করি। ভাল লাগে। এই প্রথম নাটক করলাম। সত্যিই তো ‘ডাইন’ বলে কিছু নেই। এমন কর্মসূচির মাধ্যমে কুসংস্কার দূর করা সম্ভব।” অঙ্কুর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “খুব বেশি সময় পাইনি। ক’দিন আগে নাটকটি লেখা হয়। মহড়া দিই। পরের বার সকলে মিলে আরও ভাল অভিনয় করার চেষ্টা করব।” অঙ্কুর গ্রাম্য ডাক্তারের ভূমিকায় অভিনয় করেন। শক্তি ওঝা’র ভূমিকায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে নাটকের প্রশংসা করেছেন। মেদিনীপুরের (সদর) বিডিও অয়ন নাথ বলছিলেন, “ওঁদের অভিনয় প্রশংসাযোগ্য। কিছু মানুষের মধ্যে যে ভুল ধারনা রয়েছে, তা ভাঙতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের সমাজের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই এমন কর্মসূচি।” মহকুমাশাসকের কথায়, “সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে এমন ঘটনা এড়ানো সম্ভব। এমন শিবিরের ফলেই কুসংস্কার দূর হবে।”
চার দেওয়ালের মধ্যে ওঁদের জীবন। সেখান থেকে সংস্কৃতি চর্চা, সামাজিক বার্তা দেওয়া। এই অনুভূতিটা ওঁদের কাছে অন্য রকম।
|
এ খেলায় নেই পরাজয়... |
|
টলিউডের তারকাদের নিয়ে ক্রিকেট ম্যাচের ফাঁকে (বাঁ দিক থেকে)
পায়েল, দেব ও পরমব্রত। রবিবার, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে। ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|