শিক্ষার অধিকার রক্ষায় কমিটি, জানেই না লোকে
খাস কলকাতার একটি স্কুলে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ছাত্রদের থেকে টাকা আদায় করছিলেন কর্তৃপক্ষ। অভিভাবকদের মাধ্যমে খবর পৌঁছয় ‘রাইট টু এডুকেশন প্রোটেকশন অথরিটি’ বা ‘রেপা’র কাছে। প্রধান শিক্ষককে ডেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। মেটে সমস্যা।
শহরের আর একটি নামী স্কুলের এক ছাত্র চিরকুটে অশ্লীল মন্তব্য লিখে ঢুকিয়ে দিয়েছিল শিক্ষিকার ব্যাগে। ওই ছাত্রকে ‘সাসপেন্ড’ করার দাবি উঠেছিল। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মিটিয়েছিল ‘রেপা’ই।
সম্প্রতি খড়্গপুরের এক প্রাথমিক স্কুল থেকে অভিযোগ এসেছিল, ছাত্রীদের নিগ্রহ করছেন এক শিক্ষক। শুনানিতে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান রেপা কর্তৃপক্ষ। তৎক্ষণাৎ বদলি করে দেওয়া হয় অভিযুক্ত শিক্ষককে।
রাজ্য জুড়ে শিক্ষার অধিকার আইন, ২০০৯ কে বাস্তবায়িত ও সুরক্ষিত করতেই ২০১২-র জুনে তৈরি করা হয়েছিল ‘রেপা’। বেশ কিছু ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও করেছে কমিটি। অথচ বাস্তব হল শিক্ষক-ছাত্র থেকে অভিভাবক, অধিকাংশ লোক জানেই না রেপা কী। ফলে, সমস্যার কথা রেপা পর্যন্ত পৌঁছয় না। যে কটি ক্ষেত্রে ঘটনার কথা জানা যায়, সেখানেও পরিকাঠামোর অভাবে সমস্যা সমাধানে ধাক্কা খেতে হয় নজরদারি এই কমিটিকে। রেপার চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি সাধনকুমার গুপ্তর স্বীকারোক্তি, “শিক্ষক বা অভিভাবক বাদ দিন, স্কুলশিক্ষা দফতরেরও অনেকে জানেন না রেপা আসলে কী করে।” এ কথা মানতে নারাজ স্কুলশিক্ষা দফতরের সচিব অর্ণব রায়। তাঁর বক্তব্য, “রেপার কথা অনেকেই জানেন। বহু ক্ষেত্রে শুনানি করে সমস্যাও মেটাচ্ছে এই কমিটি। আমরাও সাহায্য করে থাকি।”
অর্ণববাবু যাই বলুন রেপা পর্যন্ত পৌঁছনো রীতিমতো ঝক্কি। দক্ষিণ কলকাতায় সবেধন নীলমণি একটি অফিস ছাড়া রেপার কোনও শাখা নেই। নেই নিজস্ব ওয়েবসাইট। লোকমুখে এই কমিটির কথা জেনে অনেকে অভিযোগ জানান বটে। তবে সংখ্যাটা নেহাত কম। রেপার রেজিস্ট্রার সুহাস চট্টোপাধ্যায় স্বীকার করে নিলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই খবরের কাগজে বা টিভি চ্যানেলে ঘটনার কথা জেনে ‘সুয়ো মোটো’ ব্যবস্থা নিই।” যেমনটা জেনেছিলেন গাইঘাটার স্কুলের ক্ষেত্রে। সকলের সামনে এক ছাত্রীর লেগিংস খুলে দিয়েছিলেন শিক্ষিকা। সংবাদমাধ্যমে তোলপাড়ের পরই অভিভাবক-শিক্ষিকা-ছাত্রী সবাইকে শুনানিতে ডেকে সমস্যার নিষ্পত্তি করেন রেপা কর্তৃপক্ষ।
“স্কুলে টাকা নিয়ে ভর্তি, পড়ুয়াদের মারধর, ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি, নিয়ম না মেনে একই ক্লাসে ছাত্রকে রেখে দেওয়া নানান অভিযোগই আসে” বলছিলেন রেজিস্ট্রার। কী ব্যবস্থা নেন? সুহাসবাবুর জবাব, “আমরা সংশ্লিষ্ট জেলার স্কুল পরিদর্শকদের মাধ্যমে প্রথমে বিষয়টি জানি। তারপর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মিললে তাঁকে বদলি করা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ নিয়মের বাইরে টাকা নিলে তাঁদের সতর্ক করা হয়। আসলে শাস্তি দিলেই হয় না, দরকার শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সকলকে নিজের দায়বদ্ধতার বিষয়ে সচেতন করা।”
তবে পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মী ও পরিকাঠামো না থাকায় হোঁচট খেতে হচ্ছে প্রতি ধাপে। যে কোনও ঘটনার কথা জানা থেকে শুনানির আয়োজন, সব ক্ষেত্রেই রেপাকে ভরসা করতে হয় জেলার স্কুল পরিদর্শকদের উপর। সেখানেই খামতি। জেলায় কোনও শাখা অফিস না থাকায় অন্য সমস্যাও হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুনানির জন্য সব পক্ষকে ডেকেও সুরাহা হয় না। জেলা থেকে কলকাতা পর্যন্ত আসেনই না অনেকে। তখন উপায়? “সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার স্কুল পরিদর্শককে ব্যবস্থা নিতে বলা হয় এবং বহু ক্ষেত্রে পরিদর্শকের সদিচ্ছার অভাব থাকে” জানালেন সুহাসবাবু।
তাই জেলায় নিজেদের উপস্থিতি জরুরি, মত রেপার। চেয়ারম্যান ও রেজিস্ট্রার দু’জনেই জানালেন, চেষ্টা চলছে যাতে অন্তত উত্তরবঙ্গে লোক আদালতের ঢঙে ভ্রাম্যমাণ শুনানির বন্দোবস্ত করা যায়। সুহাসবাবুর কথায়, “কমিটির সদস্যরা টানা কয়েকদিন এলাকায় থাকব। বেশ কিছু সমস্যার নিষ্পত্তি করে আসব।” দ্রুত রেপার নিজস্ব ওয়েবসাইট চালুর চেষ্টা চলছে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমিটিকে জনপ্রিয় করার কথাও ভাবছেন কর্তৃপক্ষ।

এক নজরে রেপা
• পুরো নাম: ‘রাইট টু এডুকেশন প্রোটেকশন অথরিটি’

• প্রতিষ্ঠা: ১ জুন, ২০১২

• আয়তন: নজরদারি এই কমিটির সদস্য সংখ্যা ছয়

• অভিযোগ: ৭০

• মীমাংসা: ৩৮

• কখন ব্যবস্থা: পড়ুয়াদের মারধর, ছাত্রীর শ্লীলতাহানি, টাকা নিয়ে ভর্তি-সহ যে কোনও ক্ষেত্রে শিক্ষার অধিকার আইন, ২০০৯ লঙ্ঘিত হলে

• কী ব্যবস্থা: মূলত ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন, শিক্ষকের ক্ষেত্রে বদলি

• যোগাযোগ: ২৪৪১-০৫১০



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.