শহরের জনবহুল এলাকায় নারী নিগ্রহের ঘটনার পরে এ বার তৎপর হল মহাকরণ। পুলিশ সূত্রের খবর, নারী নিগ্রহ ঠেকাতে ও অপরাধীদের পাকড়াও করতে একটি নির্দেশিকা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র দফতর। সাত দফা ব্যবস্থার উল্লেখ করে ওই নির্দেশিকাটি সব জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে পাঠানো হয়েছে। একই নির্দেশ গিয়েছে কলকাতা-সহ রাজ্যের ছয় পুলিশ কমিশনারের কাছেও।
কী রয়েছে এই নির্দেশিকায়?
স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, মহিলাদের নিরাপত্তায় সাত দফা নির্দেশ জারি করা হয়েছে। · বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, মেট্রো স্টেশন, শপিং মলে সাদা পোশাকে মহিলা পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। · শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসিটিভি বসাতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনা গৃহ, রেল স্টেশন বা প্রেক্ষাগৃহের কর্তাব্যক্তিদেরও এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে হবে। · কোনও যানবাহনে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট গাড়ির চালক এবং কর্মীদের গাড়িটি কাছাকাছি থানায় নিয়ে যেতে হবে এবং পুলিশকে জানাতে হবে। না হলে ওই গাড়ির পারমিট বাতিল হতে পারে। · প্রতিটি শহরে তিন মাসের মধ্যে মহিলাদের জন্য বিশেষ ‘হেল্পলাইন’ খুলতে হবে। · ইভ-টিজিং বা যৌন নিগ্রহ ঘটলে ঘটনাস্থলে হাজির সাধারণ মানুষকেও বিষয়টি পুলিশকে জানাতে হবে।
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, বহু দিন ধরে বাস স্ট্যান্ড, শপিং মল, রেল স্টেশন-সহ নানা জায়গায় মহিলারা কটূক্তি বা যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। বাস, ট্যাক্সি বা অটোতে এই ধরনের ঘটনা কলকাতাতেও বিরল নয়। তা হলে এত দিন এমন কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি কেন?
প্রশাসনের একাংশের দাবি, দিল্লিতে চলন্ত বাসে ছাত্রীর গণধর্ষণের দেশে হইচই পড়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধিতেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই সব মাথায় রেখেই বিষয়টিতে নজর দেওয়া জরুরি, মত প্রশাসনের কর্তাদের। তাই সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশিকা উল্লেখ করে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে।
যদিও এই নির্দেশিকা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের একাংশেও। এক পুলিশকর্তা বলছেন, “অনেক সময়েই গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে কটূক্তি বা যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। সে ক্ষেত্রে তাঁরা কি গাড়ি নিয়ে পুলিশের কাছে যাবেন?” পাশাপাশি, গন্তব্যে পৌঁছনোর আগে গাড়ি নিয়ে থানায় হাজির হলে অন্য সমস্যার কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি। সাধারণ মানুষের দায়বোধ নির্দেশিকার মাধ্যমে বাড়ানো সম্ভব কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবে অন্য একটি অংশের মত, এই নির্দেশিকায় কিছুটা হলেও এই ধরনের অপরাধ ঠেকানো সম্ভব। কলকাতা পুলিশের এক গোয়েন্দা কর্তার দাবি, “লালবাজারে ইতিমধ্যেই মহিলাদের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন (৮০১৭১০০১০০) খোলা হয়েছে। তাতে কাজও হয়েছে।” বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপরে এই ধরনের ঘটনা ঠেকানোর দায়িত্ব দেওয়াটাও ভাল লক্ষণ বলে মনে করছেন তিনি।
|