তৃণমূলকে ছাড়া সরকার হবে না কেন্দ্রে: মুকুল
মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে মুকুল রায়। মমতা অকাল লোকসভা ভোট এবং ফের রেল-লাভের সম্ভাবনার কথা বলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একই সুর বাজল তাঁর সহযোগী নেতা মুকুলবাবুর গলাতেও। শনিবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বসিরহাটে এক জনসভায় জানালেন, তৃণমূল সঙ্গে না থাকলে কেন্দ্রে তৃতীয় ইউপিএ সরকার গঠন করতে পারবে না কংগ্রেস। কারণ, ওই ভোটের পরে কেন্দ্রে নির্ণায়ক শক্তি হতে চলেছে তৃণমূল।
পিঠোপিঠি দিনে তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতার মুখে লোকসভা ভোট নিয়ে বক্তব্য শোনার পরে স্বাভাবিক ভাবেই একাধিক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। অনেকেই বলছেন, এ সব কংগ্রেসের সঙ্গে দর কষাকষির আবহ তৈরি করা নয়তো?
গত বছর ইউপিএ জোট থেকে বেরিয়ে আসে তৃণমূল। তার পর থেকে ক্রমেই দু’দলের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক দু’একটি ঘটনায় জল্পনা শুরু হয়েছে, তবে কি আবার জোটের আবহ তৈরি হচ্ছে? কেন্দ্রীয় বাজেটের বিরুদ্ধে তৃণমূলকে সে ভাবে সরব হতে দেখা যায়নি। তার উপরে শুক্রবার মমতা জানান, রেল মন্ত্রক আবার ফিরবে তৃণমূলের হাতে। জল্পনার পালে আরও হাওয়া লাগে।
বসিরহাটের সভায়। —নিজস্ব চিত্র
কিন্তু কেন কংগ্রেস? রাজনৈতিক শিবিরের একটি অংশের বক্তব্য, জনমত সমীক্ষায় বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ঠিকই, কিন্তু যে দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী, তাদের সঙ্গে হাত মেলানো মমতার পক্ষে কঠিন। তৃণমূলের এক নেতা জানান, বহু কষ্টে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক নিজের দিকে নিয়ে আসার পরে এই ‘ভুল’ সম্ভবত আর করবেন না নেত্রী।
প্রশ্ন হল, কংগ্রেস কি ফের তৃণমূলের হাত ধরতে রাজি? দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কিন্তু এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও ইঙ্গিত দেননি। বরং তাঁরা বামেদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর কাজ শুরু করেছেন। রাহুল গাঁধী একাধিক বার বৈঠক করেছেন সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে। কংগ্রেস নেতৃত্ব এমন বার্তাও দিয়ে রেখেছেন, এ বার যদি মমতা জোটে ফেরেন, তবে তাঁকেই এগোতে হবে। সে ক্ষেত্রে জোট হবে কংগ্রেসের শর্তে। মমতার শর্তে নয়।
রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের উপরে চাপ বাড়াতেই বারবার লোকসভা ভোট নিয়ে সরব হচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মমতা শুক্রবার জানিয়েছেন, আর দু’তিন মাসের মধ্যেই লোকসভা ভোট। এ দিন মুকুলবাবুও বলেছেন, ভোট এ বছরের শেষেই। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “তৃণমূলের সমর্থন ছাড়া কেন্দ্রে ইউপিএ-২ সরকার করতে পারত না কংগ্রেস। অথচ, ডিজেল, পেট্রোল, সারের দাম বাড়ানোর সময় ওরা আমাদের সঙ্গে এক বারও কথা বলার প্রয়োজন মনে করল না! দায়িত্ব নিয়ে বলছি, যে হেতু এ বছর আমরা ওদের সঙ্গে নেই, তাই ইউপিএ-৩ হবে না। ওই (লোকসভা) নির্বাচনে তৃণমূল যে শক্তি অর্জন করবে, তাতে আমাদের বাদ দিয়ে কেন্দ্রে কোনও সরকার গঠন করা যাবে না।”
তৃণমূলের এই বক্তব্যকে অবশ্য গুরুত্ব দিচ্ছেন না প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “অর্থহীন সব দাবি করে তৃণমূল তাদের ম্রিয়মান রাজনৈতিক বাজারটা গরম করার চেষ্টা করছে। তৃণমূলের এই বক্তব্যকে কংগ্রেস গুরুত্বই দিচ্ছে না।”
অন্য একটি পক্ষ কিন্তু বলছে, শুধু কংগ্রেস বা বিজেপিই নয়, এই সব কথা বলে মমতা বার্তা দিয়ে রাখছেন মুলায়ম সিংহ যাদব-সহ সম্ভাব্য তৃতীয় ফ্রন্টের নেতৃত্বকেও। লোকসভা ভোটে যদি কোনও জোট একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তা হলে সপা, বিএসপি, ডিএমকে, এডিএমকে বা তৃণমূলের মতো আঞ্চলিক দলগুলির গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা। তৃণমূল সূত্র বলছে, সদ্য হয়ে যাওয়া তিনটি কেন্দ্রের উপনির্বাচন থেকে দলের মনে হচ্ছে, বামেদের ভোট ২০১৪ সালে আরও কমবে। এবং জোট না হলেও তৃণমূলের শক্তি অনেকটাই বাড়বে।
রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ধারণা, এই কারণে তৃণমূল ভোট-পূর্ববর্তী জোটে না গিয়ে ফল দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। হাতে বেশি আসন থাকলে সব জোটের কাছেই তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। সে কথা মাথায় রেখেই তৃণমূল নেতৃত্ব এখন সব পক্ষকে বার্তা দিচ্ছেন। পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, সেটা ভোটের ফল প্রকাশের আগে কারও পক্ষেই বলা সম্ভব নয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.